- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা হুমকি, বিশেষ করে রাশিয়ার দীর্ঘমেয়াদী আগ্রাসন এবং চলমান সন্ত্রাসবাদের বিপদ মোকাবেলায় যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো। নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে অনুষ্ঠিত এক শীর্ষ সম্মেলনে জোটের ৩২টি সদস্য রাষ্ট্র ২০৩৫ সালের মধ্যে তাদের সম্মিলিত প্রতিরক্ষা ব্যয় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশে উন্নীত করার অঙ্গীকার করেছে।
বুধবার সম্মেলনের শেষে প্রকাশিত এক ঘোষণাপত্রে বলা হয়, এই বিনিয়োগের মূল লক্ষ্য হলো জোটের প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জোরদার করা। ঘোষণাপত্র অনুযায়ী, ‘মিত্র দেশগুলো ওয়াশিংটন চুক্তির ৩ নম্বর ধারা অনুসারে তাদের ব্যক্তিগত ও সম্মিলিত বাধ্যবাধকতা পূরণের জন্য ২০৩৫ সালের মধ্যে মূল প্রতিরক্ষা চাহিদার পাশাপাশি প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত খাতে বার্ষিক জিডিপির ৫ শতাংশ বিনিয়োগ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
এই ৫ শতাংশ ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত। এর মধ্যে কমপক্ষে ৩.৫ শতাংশ ব্যয় হবে ন্যাটোর নির্ধারিত মৌলিক প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অর্জনের জন্য। বাকি ১.৫ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় করা হবে বৃহত্তর নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন খাতে—গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো সুরক্ষা, সাইবার নিরাপত্তা, বেসামরিক প্রতিরোধ সক্ষমতা, উদ্ভাবন এবং প্রতিরক্ষা শিল্প সক্ষমতা বৃদ্ধি।
প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রকে এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য পথরেখা নির্দিষ্ট করে করে বার্ষিক পরিকল্পনা জমা দিতে হবে। ২০২৯ সালে ন্যাটো নেতারা এই অগ্রগতির পর্যালোচনা করবেন এবং পরিবর্তনশীল কৌশলগত পরিবেশ ও প্রতিরক্ষা চাহিদার ওপর ভিত্তি করে ব্যয়ের ভারসাম্য সমন্বয় করা হবে।
দ্য হেগের ঘোষণাপত্রে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, এই বর্ধিত বিনিয়োগ ন্যাটোকে তার তিনটি মূল দায়িত্ব—প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষা, সংকট প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা এবং সহযোগিতামূলক নিরাপত্তা—পালনে সক্ষম করে তুলবে।
ইউক্রেনকে সহায়তাও প্রতিরক্ষা ব্যয়ের অংশ
নতুন এই কাঠামোর অধীনে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা প্রচেষ্টা এবং এর শিল্প ভিত্তিকে সমর্থন করার জন্য দেওয়া সহায়তাকেও সদস্য দেশগুলোর প্রতিরক্ষা ব্যয়ের অংশ হিসেবে গণনা করা হবে। ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ‘মিত্র দেশগুলো ইউক্রেনকে সহায়তা প্রদানের সার্বভৌম প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছে, কারণ দেশটির নিরাপত্তা আমাদের নিজেদের নিরাপত্তায় অবদান রাখে। এই লক্ষ্যে, ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ও তার প্রতিরক্ষা শিল্পে সরাসরি অবদানকে মিত্র দেশগুলোর প্রতিরক্ষা ব্যয়ের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’
এছাড়াও, মিত্র দেশগুলোর মধ্যে প্রতিরক্ষা বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা হ্রাস করে আন্তঃমহাসাগরীয় প্রতিরক্ষা শিল্প সহযোগিতা বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে ঘোষণাপত্রে।
সম্মেলনে পরবর্তী শীর্ষ সম্মেলনের স্থানও নির্ধারণ করা হয়েছে। পরের সম্মেলেন তুরস্কে এবং ২০২৭ সালে আলবেনিয়ায় ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
রুটে: পুতিনকে বিশ্বাস করি না
সম্মেলনের শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে বিদায়ী ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি তার অনাস্থা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি পুতিনকে বিশ্বাস করি না।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, পশ্চিমা বিশ্বকে বিভক্ত করার রুশ প্রেসিডেন্টের লক্ষ্য বুমেরাং হয়েছে, যার প্রমাণ হলো ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদান এবং মিত্রদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর অঙ্গীকার।
একই সংবাদ সম্মেলনে রুটে ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতাকে লক্ষ্য করে সাম্প্রতিক মার্কিন অভিযানের প্রশংসা করে এটিকে তেহরানের পারমাণবিক আকাঙ্ক্ষার জন্য একটি ‘বড় ধরনের আঘাত’ এবং ‘খুবই সুনির্দিষ্ট’ পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেন।