Site icon The Bangladesh Chronicle

রাতের অন্ধকারে নয়, ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন হবে

ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এলে মানুষ তাদের ক্ষমা করে না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি ১ কোটি ভুয়া ভোটার তৈরি করে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। ’৭৫-এর পর হত্যাযজ্ঞের পাশাপাশি জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয় সেনাশাসনের মাধ্যমে। কিন্তু জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সবকিছুই করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। আমরা চেয়েছি ভোটের মাধ্যমেই দেশে ক্ষমতার বদল ঘটুক। অস্ত্র হাতে নয়, রাতের অন্ধকারে নয়, ভোটের মধ্যদিয়ে সরকার গঠন হবে বাংলাদেশে। সব দলকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আগুন সন্ত্রাসের জন্য বিএনপিকে জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়ে ভোটে আসা উচিত। নির্বাচনের দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন অতি বামপন্থি ও অতি ডানপন্থিরা মিশে একাকার হয়ে গেছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, এখন কার যে কী আদর্শ, কে যে কতোটুকু বিচ্যুৎ হলো সেটাই প্রশ্ন। অতি বামদের আদর্শ নেই, তারা বলে সরকারকে উৎখাত করতে হবে। আমাদের অপরাধটা কী? আর বলে, নির্বাচন বানচাল করতে হবে।

তার মানে হলো যারা রাতের অন্ধকারে অস্ত্র হাতে নিয়ে ক্ষমতা দখল করে, তারপর নিজেদের রাজনৈতিক নেতা বানানো, নির্বাচনের নামে প্রহসন এসব। তবে ভোট চুরি করলে এ দেশের মানুষ মেনে নেয় না। আমরা জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে তাদের সচেতন করেছি। গতকাল আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা জেলা ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

জিয়াউর রহমান ও এরশাদের ক্ষমতা দখল আদালতে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান, এরশাদের ক্ষমতা দখলকে উচ্চ আদালত অবৈধ বলে রায় দিয়েছে। তাদের হাতে গড়া দলের কাছ থেকে শুনতে হয় নির্বাচনের কথা! বিএনপি’র আমলে যত নির্বাচন হয়েছে, মানুষ ভোটই দিতে পারেনি, ভোট চুরির অপরাধে খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল। বিএনপি’র অবরোধ কর্মসূচির পরে গত কয়েক দিনে বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, তারা আগুন নিয়ে খেলছে। বিএনপি ও তাদের জোটকে বলবো আগুন নিয়ে খেলা বাংলাদেশের মানুষ কখনো মেনে নেবে না। তারা নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছে, এটা তারা বানচাল করতে পারবে না। বাংলাদেশের নির্বাচন জনগণের অধিকার। জনগণ তার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে, যাকে দেবে তারাই সরকার গঠন করবে। মানুষকে গণতান্ত্রিক ধারা সম্পর্কে সচেতন আমরা করেছি। নির্বাচন কমিশন গঠনসহ নির্বাচনী আইনের বিভিন্ন সংস্কারের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সবসময় লক্ষ্য ছিল জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা। ভোটের মধ্যদিয়েই সরকার গঠন হবে, অস্ত্র হাতে না, রাতের অন্ধকারে না। ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করি। যে ক্ষমতা সেনানিবাসে বন্দি ছিল, সেটা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছি।

টানা তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের উন্নয়নের পরিকল্পনা তৃণমূল মানুষকে লক্ষ্য রেখেই করা। শুধু মুষ্টিমেয় লোক লাভবান হবে, ক্ষমতায় এলে যা স্বৈরশাসকরা করতো। ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে তারা কিছু এলিট শ্রেণি তৈরি করতো, হাতে সমস্ত ব্যবসা-বাণিজ্য, ধন-সম্পদ তুলে দিয়ে তাদের ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করতো। আমাদের সেটা ছিল না, আমাদের ছিল জনগণের ক্ষমতায়ন। তৃণমূলের মানুষ যাতে ক্ষমতা পায় তা করা। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সারা বাংলাদেশে সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছি। মানুষের মধ্যে আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি। একটা দল টানা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার পর মানুষের বিশ্বাস-আস্থা অর্জন করা কঠিন। আমরা পরিকল্পিতভাবে দেশের উন্নয়ন করেছি। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় দেশের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, এ ১৪ বছরে বাংলাদেশে বিরাট পরিবর্তন আনতে পেরেছি। আজকে মানুষকে বিদেশি পুরোনো কাপড় এনে পরাতে হয় না। দেশের মানুষকে খাদ্যের জন্য হাহাকার করতে হয় না।

ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলার ঘটনায় সরকারের প্রতিবাদ জানানোর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্য হলো যারা অগ্নিসন্ত্রাস করে, মানুষ পুড়িয়ে মারে, যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সেসব দলের কাছ  থেকে কোনো আওয়াজই পাচ্ছি না, কিছুই বলছে না। টানা তিন মেয়াদে সরকারের সুফল জনগণ ভোগ করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিতে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মুদ্রাস্ফীতির কারণে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ৫ শতাংশ বেতন বাড়ানো হয়েছে, অন্যদিকে পোশাক শ্রমিকদের জন্য ৫৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। তারপরেও দেখলাম ১৮-১৯টা কারখানা ভাঙচুর, আন্দোলন। আওয়ামী লীগ ছাড়া যারা ২৯ বছর ক্ষমতায় ছিল তারা কতো শতাংশ বেতন বাড়িয়েছে শ্রমিকদের? বিএনপি ও জাতীয় পার্টির আমলে কিছুই বাড়ায়নি।

তিনি বলেন, আজকে যারা নির্বাচন বানচালের নামে অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে, তাদের কিন্তু ক্ষমা নেই। বাস, ট্রেন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সরঞ্জাম বহনকারী গাড়িতে আগুন দেয়ার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এগুলো আমরা বরদাশত করবো না। যেটা জনগণকে সহযোগিতা দিচ্ছে, জনগণ সুফল পাচ্ছে। নির্বাচন বানচালের নামে ২০১৪ সালে প্রায় ৫০০টা স্কুল পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা এবং নির্বাচনী কর্মকর্তা, বিচারক, আইনজীবীদের ওপর হামলা হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, এরা মানুষকে মানুষ মনে করে না। এখন নিজেরা লুকিয়ে থাকে, আমার কথা হচ্ছে বিএনপি’র নেতৃত্ব কোথায়? একজন তো এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত, বয়স হয়ে গেছে, অসুস্থ। খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির বিষয়টি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমি খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকার অনুমতিটা দিয়েছি। সে স্বাধীনভাবে চিকিৎসা নিচ্ছে। কোনো সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে বিদেশে যদি চিকিৎসার জন্য যেতে হয় তাহলে তাকে কোর্টে যেতে হবে। আমরা বলেছি কোর্টে গিয়ে হাজিরা দিয়ে অনুমতি নিক। সেটা না করে ওইটা নিয়ে আবার আন্দোলনের চেষ্টা করে। আসলে এরা ইস্যু হিসাবে দেখে। আদৌ যদি চিকিৎসার জন্য বাইরে পাঠাতো তাহলে বিএনপি’র পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়া হতো। ছেলে তো মাকে দেখতে এলো না কোনোদিন। এত যায় যায়, মরে মরে- এত কথা শুনেও ছেলে আর আসে না। ছেলে আসবে কি? সে তো ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি, গ্রেনেড হামলায় আমাদের নেতা আইভী রহমানসহ নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে।

নিজের ফরম কিনে মনোনয়ন বিক্রি উদ্বোধন করবেন শেখ হাসিনা: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হবে আজ শনিবার। সকাল ১০টায় দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে নিজের ফরম সংগ্রহ করে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এরইমধ্যে বিশেষ সাজে সাজানো হয়েছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। বিভাগভিত্তিক বুথ ও স্বেচ্ছাসেবক নির্ধারণ করা হয়েছে। দিনব্যাপী বিভাগীয় নেতাদের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবকরা মনোনয়ন ফরম বিক্রি করবেন।

চলমান সংঘাত বন্ধে বিশ্ব নেতাদের প্রতি ঐক্যের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর: এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংঘাতের অবসান ঘটাতে বিশ্ব নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, জাতিগুলোর মধ্যে আস্থার ঘাটতি এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধার অভাব ইউরোপে চলমান যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনকে গণহত্যার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, এই যুদ্ধরত দেশগুলো এবং জড়িত আন্তর্জাতিক নেতাদের মধ্যে সত্যিকারের আস্থা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করা জরুরি। গতকাল তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফরমে আয়োজিত ‘দ্বিতীয় ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিট’-এ অংশ নিয়ে দেয়া ভাষণে একথা বলেন। ভারত ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফরমে ১২৫টি দেশের অংশগ্রহণে এই সম্মেলনের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের শীর্ষ সম্মেলনের থিম, ‘সবার সঙ্গে সকলের প্রবৃদ্ধির জন্য সকলের বিশ্বাসের সঙ্গে’ সবচেয়ে সময়োপযোগী কারণ, আমাদের বিশ্ব আজ যে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে, তা হলো ‘বিশ্বাসের ঘাটতি’। যেমনটা আছে আমাদের বিশ্বের অসহনীয় দারিদ্র্য, অবাঞ্ছিত বৈষম্য, অসহনীয় সন্ত্রাসবাদ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয়মূলক হুমকি।

এ ছাড়াও শেখ হাসিনা বলেন, গ্লোবাল সাউথের জনগণের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ এবং ক্রমবর্ধমান দুর্ভোগ হিসেবে এখন নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে। সরকার প্রধান বলেন, এই সংকটময় মুহূর্তে বিশ্বকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং ‘প্রত্যেকের প্রবৃদ্ধি’ অর্জনের জন্য ‘প্রত্যেকের বিশ্বাস’ শক্তিশালী করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নির্মম হত্যাযজ্ঞের মুখে অসহায় ফিলিস্তিনিদের মর্মান্তিক, অমানবিক পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এখন সময় আমাদের সকলের এক বিশ্ব হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং সংঘাতের অবসান দাবি করার।

মানব জমিন
Exit mobile version