স্টাফ রিপোর্টার
৫ ডিসেম্বর ২০২২, সোমবার
রাজধানীতে হঠাৎ করেই ধরপাকড় শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিশেষ অভিযানের নামে এই ধরপাকড়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের। গত ৫ দিনে প্রায় এক হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে দলটির তরফে। এদিকে গতকাল জাতীয়তাবাদী যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম নয়নসহ সাত জনের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বিএনপি’র দাবি, ১০ই ডিসেম্বরের মহাসমাবেশকে পণ্ড করতেই ক্ষমতাসীন দলের নির্দেশেই পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবেই জঙ্গি, সন্ত্রাসী, মাদকসেবী ও কারবারি, অবৈধ অস্ত্রধারী, পরোয়ানাভুক্ত আসামি গ্রেপ্তার, মাদক ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হচ্ছে।
বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ৩০শে নভেম্বর রাত থেকে ৩রা ডিসেম্বর রাত ৮টা পর্যন্ত ৭৮৩ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া ৩রা ডিসেম্বর রাত ৮টা থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত আরও ২৪৮ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। সবমিলিয়ে ৩০শে নভেম্বর থেকে গতকাল পর্যন্ত মোট ১০৩১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, গত ১লা ডিসেম্বর থেকে চলমান বিশেষ অভিযানে শুধু রাজধানী ঢাকাতেই পুলিশ ৪৭২ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি পুলিশের।
ডিএমপি’র মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, গত ২০শে নভেম্বর ঢাকা সিএমএম আদালত এলাকায় পুলিশ হেফাজত থেকে দণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি আসামি ছিনিয়ে নেয়ার প্রেক্ষাপট বিবেচনা ও মহান বিজয় দিবস, বড়দিন এবং থার্টি ফাস্ট নাইট উদ্যাপন নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে চলমান অভিযানের পাশাপাশি ১-১৫ ডিসেম্বর বিশেষ অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেয় পুলিশ সদর দপ্তর।
সে নির্দেশনা মোতাবেক ডিএমপি পুলিশের ৫০টি থানা ও মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হাতে রোববার বিকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছে ৪৭২ জন আসামি। গ্রেপ্তারদের মধ্যে অনেকে পরোয়ানাভুক্ত আসামি। এ ছাড়া মাদক, দণ্ডপ্রাপ্ত, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, চোর, ছিনতাইকারীসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় তাদের। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা হয়েছে। এসব মামলায় রিমান্ড আবেদন করে আসামিদের হাজির করা হবে আদালতে। ফারুক হোসেন বলেন, কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়, কেবল যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে, তাদেরই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
গত ২৯শে নভেম্বর পুলিশ সদর দপ্তরের অপারেশন শাখার পাঠানো এক আদেশ অনুসারে, দেশের সব পুলিশ ইউনিটের প্রধান ও সব জেলার পুলিশ সুপারদের ১লা থেকে ১৫ই ডিসেম্বর পর্যন্ত অভিযান চালাতে বলা হয়। আদেশে বলা হয়-অন্যান্য স্থানের পাশাপাশি আবাসিক হোটেল, মেস, হোস্টেল, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টারসহ অপরাধীদের লুকিয়ে থাকার সম্ভাব্য স্থানগুলোতে কার্যকর অভিযান পরিচালনা করতে হবে। পরিচালিত অভিযানে জঙ্গি, সন্ত্রাসী, মাদকসেবী ও কারবারি, অবৈধ অস্ত্রধারী, পরোয়ানাভুক্ত আসামি গ্রেপ্তার, মাদক ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে।
গতকাল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, ১০শে ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে কোনো অভিযান হচ্ছে না। এমনকি বিএনপি’র নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। যাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগ আছে তাদেরকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এই বিশেষ অভিযানটি রুটিনওয়ার্কের অংশ।
শনিবার রাতে সাভারের আমিন বাজার থেকে যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি)। সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ থাকায় যুবদলের এ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিবি। পরে টুকুসহ যুবদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম নয়নসহ সাত জনের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন-মোকলেস মিয়া, মোশাররফ হোসেন খোকন, জজ মিয়া, ফরিদ উদ্দিন মনা ও আব্দুল্লাহ। গত ২৬শে মে পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক মো. কামরুল হাসান বাদী হয়ে বিএনপি নেতা রিজভীসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ওই মামলায় ১০০/১৫০ অজ্ঞাত আসামি করা হয়। মামলায় এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা বেআইনি মিছিল বের করে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, কাঠের মশাল, বাঁশের লাঠিসোঁটা নিয়ে রাস্তায় বের হয়। তারা সরকারবিরোধী বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্য ও অবমাননাকর স্লোগান দেন। এ সময় ভাঙচুর ও পুলিশের উপর আক্রমণ করে মিছিলকারীরা। এতে এক পুলিশ কনস্টেবল ও আনসার সদস্য আহত হন।
শনিবার সন্ধ্যায় নয়াপল্টনের বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। পল্টন থানার এসআই শামীম হোসেন বাদী হওয়া মামলায় বিএনপি’র অঙ্গসংগঠনের ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৫০/৬০ জনকে অজ্ঞাত হিসাবে আসামি করা হয়েছে।