Site icon The Bangladesh Chronicle

রপ্তানির আড়ালে ডলার পাচার

jugantor

বাংলাদেশ ব্যাংকের জোরালো ভূমিকা প্রয়োজন
 সম্পাদকীয়
 ৩০ আগস্ট ২০২৩

দেশে ডলার সংকটের কারণে বেশ কিছুদিন যাবৎ আমদানি প্রক্রিয়া নানাভাবে ব্যাহত হচ্ছে। যেসব উদ্যোক্তা কাঁচামাল আমদানির পর পণ্য তৈরি করে রপ্তানির মাধ্যমে ডলার আয় করেন, তারাও এখন কোনো এলসি খুলতে পারছেন না।

দেশে যখন ডলারের এমন সংকট, তখন বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার যুগান্তরে প্রকাশ, দেশে রপ্তানির বিপরীতে ১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলারের আয় ফেরত আসেনি। আটকে থাকা এসব রপ্তানি আয়ের অর্ধেকই মেয়াদোত্তীর্ণ।

এছাড়া রপ্তানি আদেশের বিপরীতে কম পণ্য সরবরাহ করা, রপ্তানিকারক-আমদানিকারক দেউলিয়া হওয়া এবং ভুয়া রপ্তানির কারণে আটকে আছে আরও অর্ধেক পরিমাণ অর্থ। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র জানিয়েছেন, প্রতিবছর এদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া ৪০ বিলিয়ন ডলারের সিংহভাগই আদায় হয়, তবে অর্থনৈতিক অঞ্চলে উৎপাদিত পণ্য দেশে বিক্রি হলেও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে তা রপ্তানি হিসেবে দেখানো হচ্ছে। এজন্য দেশে কোনো রপ্তানি আয় আসছে না। এই পণ্য যদি আবার বিদেশে রপ্তানি হয়, তাহলেই কেবল রপ্তানি আয় দেশে আসার কথা। ফলে এখানেই ১০০ থেকে ২০০ কোটি ডলারের পার্থক্য তৈরি হচ্ছে।

তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়, অর্থনৈতিক অঞ্চলে উৎপাদিত পণ্য দেশে বিক্রি হলে ইপিবি’র হিসাবে তা রপ্তানি হিসেবে দেখানো হবে কেন? অনিয়ম ঠেকাতে ইপিবি কেন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না?

আমরা দেখেছি, একশ্রেণির অসাধু রপ্তানিকারক বিদেশ থেকে টাকা ফেরত আনছেন না। তারা পুঁজি পাচারের মাধ্যমে বিদেশে অট্টালিকা গড়ে তুলছেন। এভাবে চলতে থাকলে ডলার সংকট নিরসন সম্ভব হবে না। দেশের বাইরে সম্পত্তি ক্রয়ের জন্য যে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা প্রয়োজন, তা বৈধভাবে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। তৈরি পোশাকসহ রপ্তানিমুখী শিল্পের শ্রমিকদের রক্ত পানি করা শ্রমের বিনিয়মে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দুর্নীতিবাজদের এ ধরনের কৌশলের মাধ্যমে অবৈধভাবে বাইরে চলে যাচ্ছে, যার ফলে দেশের অর্থনীতি আরও সংকটে পড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্রই বলছে, বর্তমানে একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার অন্তর্মুখী প্রবাহ কমে যাচ্ছে, কাঙ্ক্ষিত হারে রেমিট্যান্স আসছে না, রপ্তানি আয়েও তেমন গতি নেই; অন্যদিকে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি হচ্ছে তার ব্যয় পরিশোধের পাশাপাশি আমদানির বকেয়া দায়ও পরিশোধ করতে হচ্ছে।

বৈদেশিক মুদ্রার আন্তঃপ্রবাহের চেয়ে বহিঃপ্রবাহ বেশি হলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে প্রভাব পড়াই স্বাভাবিক, যেমনটা এখন দেখা যাচ্ছে। রিজার্ভ কমে যাওয়ায় ডলার বাজারে যে চাপ তৈরি হয়েছে, তা মোকাবিলা করতে দেশীয় মুদ্রা টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। এতে বেড়ে যাচ্ছে পণ্যের আমদানি ব্যয়। আবার ব্যাংকগুলো ডলার কেনাবেচায় নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই মানছে না।

ব্যাংকারদের সংগঠন যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, ডলার লেনদেন হচ্ছে তার চেয়েও বেশি দরে।

জানা যায়, ডলার বাজারের অস্থিরতা কমাতে এবং জরুরি পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ প্রবণতা রোধ করতে হবে। অর্থনৈতিক সংকট ঠেকাতে দেশ থেকে ডলার পাচার বন্ধে এবং পাচার হওয়া ডলার ফেরত আনতে কর্তৃপক্ষ কার্যকর উদ্যোগ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।

Exit mobile version