Site icon The Bangladesh Chronicle

যোগ্যতা সততা হোক নেতা নির্বাচনের ভিত্তি

যোগ্যতা সততা হোক নেতা নির্বাচনের ভিত্তি – প্রতীকী ছবি

নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বিশেষায়িত জ্ঞানার্জন ও অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হওয়াই নেতার যোগ্যতা। দ্বিতীয়ত, কথা ও কাজে শতভাগ মিলই নেতার সততা; তিন. কোনো রকম অজুহাত ছাড়াই জান-প্রাণে অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্রতী হওয়া হলো নেতার দায়িত্বশীলতা এবং চার. ন্যায়, বৈধ এবং কল্যাণ ও উন্নয়নের দায়িত্ব পালনের নীতিতে অটুট থাকতে পারাই নেতার সাহসিকতার প্রমাণ। এই চারটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে নেতা নির্বাচিত হওয়া উচিত।

যোগ্যতা : সঠিক সময়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সবটুকু অর্পিত দায়িত্ব পালন করার মধ্য দিয়ে নেতার প্রকৃত যোগ্যতা ফুটে ওঠে। স্থান, কাল ও অবস্থা বুঝে চাহিদা পূরণে উত্তম পরিকল্পনা গ্রহণ, প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ গ্রহণে সর্বোচ্চ মেধাশক্তি নিয়োগসহ আঠার মতো লেগে থাকার দায়িত্ব নিতে হয় নেতাকে। সংশ্লিøষ্ট সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে মূল দায়িত্ব হাসিলের নিমিত্তে পরিচালনা করাই নেতার কাজ।
ঠিকমত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অযোগ্য নেতা সবসময়ই চোখে অন্ধকার দেখে এবং অন্যের সাহায্য নিতে বাধ্য হয়। এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ ওঁৎ পেতে থাকা চতুর, বর্ণচোরা ও সুযোগসন্ধানীরাই চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পেয়ে যায়। মুখ্য দায়িত্বের জায়গায় কেবল গৌণ ফল অর্জিত হয় এবং সুবিধাভোগীরাই পকেট ভরে।

সততা : কথা ও কাজে শতভাগ মিল- এ নীতির ওপর দৃঢ় আত্মবিশ্বাসই নেতার সততা। নেতার কারিশমা ও আকর্ষণীয় নেতৃত্বের গুণের ওপর সবাই আস্থাশীল ও বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য হয়। এ ধরনের নেতা যেকোনো অপ্রত্যাশিত ও প্রতিক‚ল অবস্থায় সবাইকে ধৈর্য ধারণের পরামর্শ দেন এবং অচিরেই নতুন আলোর পথ দেখাতে সক্ষম হন। সময় ও সুযোগ পেলে কার্যকর নেতৃত্বের মাধ্যমে সবাইকে একযোগে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর ক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করেন যোগ্য নেতা।

অযোগ্য ও অসৎ নেতা কোনো কিছু না বুঝে সর্বদা মিথ্যাচার করেন। বারবার নানা ওয়াদাসহ আশ্বাস দেয়। কেবল মুখে মধুর বাণী। এভাবে কিছু সময়ের জন্য সহজ সরল মানুষের মন জয় করতে সক্ষম হলেও অচিরেই বকধার্মিক ও কুৎসিত নেতার আসল পরিচয় পরিষ্কারভাবে ফুটে ওঠে সবার কাছে। এরপর পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতি সেই নেতাকে আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করে।

দায়িত্বশীল : অর্পিত দায়িত্বের সবটুকু সঠিকভাবে ও আন্তরিকতার সাথে পালনে সর্বশক্তি দিয়ে প্রচেষ্টা চালানোই নেতার দায়িত্ব। নেতার অকৃত্রিম ভালোবাসা ও অনুপ্রেরণা সবাইকে সব সময়ে অনুপ্রাণিত করে। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে যত্নবান ও আন্তরিকতার সাথে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে উৎসাহ বোধ করে। নেতা যেকোনো প্রতিকূল অবস্থার আসল কারণগুলো সবার সামনে স্পষ্ট করে তুলে ধরেন। সবাইকে ধৈর্য ধারণের কার্যকর পরামর্শ দেন এবং সঙ্কট নিরসনে সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। এ ক্ষেত্রে নেতা কখনো দায়িত্ব পালনে অবহেলা, শৈথিল্য এমনকি আংশিকভাবে অথবা কোনো রকম ছলচাতুরী বা অজুহাতের আশ্রয় নেয় না। পরবর্তী সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। সময় ও সুযোগ পেলেই সবাইকে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সংগ্রামে। আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালায় আগের ঘাটতি পূরণসহ মঙ্গল ও উন্নয়নের জন্য। এভাবে যোগ্য নেতার নেতৃত্বে অনেক কঠিন ও দুর্বোধ্য কাজও সহজ হয়ে যায়। সন্ন্যাসী বা দরবেশ দিনের পর দিন এমনকি যুগ যুগ ধ্যানে মগ্ন থাকেন একমাত্র সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের আশায়। অতঃপর ধ্যানযোগে মহাজ্ঞানী এবং সৎ ও বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। কিন্তু সন্ন্যাসী জ্ঞানী ও সৎ হলেও মানবতার সেবায় সম্পূর্ণভাবে উদাসীন এবং কোনো ভ‚মিকাই পালন করেন না। তাই সন্ন্যাসীকে কখনো নেতা হিসেবে বিবেচনা করা যায় না।

সাহস : যোগ্য, সৎ ও দায়িত্বশীল নেতা সবসময় নীতিতে পাহাড়ের মতো অটল ও অনড় থাকেন। তিনি কঠিন ও শক্ত আদর্শে বিশ্বাসী ও বলীয়ান। নেতার অকৃত্রিম সাহস দেখে সব শ্রেণী, পেশা, ধর্ম ও জাতির মানুষকে চরমভাবে আত্মবিশ্বাসী ও অভিভ‚ত করে। যেকোনো অন্যায় ও মিথ্যার বিরুদ্ধে দৃঢ়চিত্তে দাঁড়ানোর অমিত সাহস পায় সবাই। সবসময় মানবতার সেবায় নিবেদিত নেতার সাথে সাধারণ মানুষও শামিল হয় বিজয়ের মিছিলে, হার না মানা সংগ্রামে। জান ও মালের এতটুকু ভয়-ডরও তাদের সামান্যতম কাবু করতে পারে না। প্রয়োজনে আজীবন আঠার মতো লেগে থাকে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত।

যোগ্য, সৎ, দায়িত্বশীল ও সাহসের শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে মানবসভ্যতাকে যুগে যুগে এগিয়ে নিয়ে গেছেন এমন দৃষ্টান্ত ইতিহাসে প্রচুর। দিগ্বিজয়ী সেসব নেতার কাহিনী থেকে আমরা সামনে এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষা নিতে পারি।

লেখক : সরকারি কলেজ শিক্ষক

Exit mobile version