যেই দেশে গুণীর কদর নেই , সেই দেশে গুণীর জন্ম হয় না
================================
জাতি হিসাবে আমরা সত্যিই অদ্ভুত । কার শরীরের চামড়া দিয়ে কখন ডুগডুগি বাজাই , আবার কখন সেই তাকেই আবার দেবতার আসনে বসাই , তার কোনও ঠিক ঠিকানা নাই ।
যে ইনুরা মন্ত্রীত্বের শুরুর দিকে সব কথা শুনেন , সব অপমান অবলীলায় সহ্য করেন । মন্ত্রীত্বের শেষ দিকে এরাই চোখা চোখা কথা বলে ফেলেন । অর্থাৎ দরকার না পড়লে এদেশে কেউ কাউকে পাত্তা দেয় না , সম্মান জানায় না । প্রয়োজন ফোরালে সম্মান ও সমীহও শুকিয়ে যায় ।
আমরা হয় কাউকে প্রচন্ড ভালোবাসি , না হয় একই পরিমাণে ঘৃণা করি । এই দুই প্রান্তিকতার মাঝামাঝি কিছু আমাদের মধ্যে নেই ।
আমরা জীবিত থাকতে কাউকে সম্মান দিতে পারি না । মরে গেলে কখনও কখনও প্রশংসার স্রোত বইয়ে দেই । সেটাও অনেকটা স্বার্থ তাড়িত । ফলে আমাদের আবেগ অনুভূতিতেও এক ধরণের যান্ত্রিকতা চলে এসেছে ।
উপরের এতগুলি কথা বলার উদ্দেশ্য , আজ বরেণ্য সাংবাদিক শফিক রেহমানের ৮৩তম জন্ম দিন । একটি বর্ণাঢ্যময় ও কর্মময় জীবন নিয়ে তিনিই সম্ভবত এদেশের সবচেয়ে সিনিয়র সাংবাদিক ও সম্পাদক । অথচ মূল ধারার সংবাদপত্রে এই খবরটি কোথায়ও তেমনভাবে চোখে পড়ল না । এদেশের পত্র পত্রিকা গুলো ইন্ডিয়ার নায়ক নায়িকাদের কুত্তা বেড়ালের জন্মদিনের খবর প্রকাশ করে অথচ এদেশের সবচেয়ে সিনিয়র ও বরেণ্য সাংবাদিককে নিয়ে দুটি বাক্যও এরা লিখতে পারলো না !
এদেশে সাংবাদিকতার বিকাশে শফিক রেহমানের একটা বিশেষ ভূমিকা রয়েছে । আজকের অনেক সাংবাদিক তার হাত ধরেই এই জগতে প্রবেশ করেছেন এবং যশ খ্যাতি অর্জন করেছেন । আজ অনেকেই তার মতামত বা বক্তব্যের সাথে দ্বিমত প্রকাশ করতে পারেন । কিন্তু তার অনন্য প্রতিভা ও সাংবাদিকতায় তার অবদান কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না । বিশেষ করে আশি ও নব্বইয়ের দশকে সাপ্তাহিক যায় যায় দিনের ভূমিকা ও প্রভাব এদেশের কোনও শিক্ষিতজন অস্বীকার করতে পারবেন না ।
জানি না , নিজেদের গুণীজনের প্রতি এধরণের অবহেলা দেখিয়ে আমরা নতুন প্রজন্মের কাছে কোন ধরণের নমুনা রেখে যাচ্ছি । সংবাদ পত্রের জায়গাটি হলো মুক্ত বুদ্ধির চর্চার জায়গা । কেউ ভিন্ন মতের হলেই তার প্রতি সম্মান দেখানো যাবে না – সংকীর্ণতার এই কূয়ো থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা দরকার ।
আমাদের স্মরণে রাখা উচিত , যে জাতি গুণীর কদর দিতে জানে না , সেই দেশে কখনই গুণীর জন্ম হয় না । শফিক রেহমানের মত ব্যক্তিত্বকে সম্মান দেখাতে হবে আমাদের নিজেদের প্রয়োজনেই ।
সকল বন্ধুদের প্রতি অনুরোধ , আসুন দেশবরেণ্য এই সাংবাদিককে তার জন্ম দিনের শুভেচ্ছা জানাই । যিনি এদেশের মানুষকে ” লাল গোলাপের শুভেচ্ছা ” শিখিয়েছেন তার এই জন্মদিনে সেই শুভেচ্ছাটি ফিরিয়ে দেই ।