Site icon The Bangladesh Chronicle

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে আলোচনা: বাংলাদেশে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অনেক জীবন বাঁচাতে সহায়ক হয়েছে

 যুগান্তর ডেস্ক
 ১৮ আগস্ট ২০২৩
ফাইল ছবি

বাংলাদেশে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতির ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা অনেক জীবন বাঁচাতে সহায়ক হয়েছে। বিশেষ করে র্যাব ও এর শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার একটা তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব দেখা গেছে। র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমেছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

১৫ আগস্ট কমিশনের এক ব্রিফিংয়ে প্যানেল বক্তারা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, মানবাধিকারকর্মীসহ বিরোধীদের ওপর দমন–পীড়নের অভিযোগ এবং আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন। এসব বিষয়ে তারা ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের আরও জোরালো ভূমিকা প্রত্যাশা করেন।

‘হিউম্যান রাইটস ইন বাংলাদেশ: অ্যান আপডেট’ শীর্ষক ভার্চুয়াল এই ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সব ঘটনা তদন্ত করে সরকার নিরপেক্ষ ও কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের চলমান নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা উচিত হবে না।

ব্রিফিংয়ের আয়োজক কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্য জেমস পি ম্যাকগভর্ন ও রিপাবলিকান সদস্য ক্রিস্টোফার এইচ স্মিথ। তারা এই কমিশনের কো-চেয়ারম্যান। ব্রিফিংয়ের সঞ্চালনায় ছিলেন লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের বিদেশি আইন বিশেষজ্ঞ তারিক আহমেদ।

ব্রিফিংয়ে প্যানেল আলোচক ছিলেন এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন অ্যান্ড এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টারের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের ফেলো ক্রিস্টি উয়েদা, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ গবেষক জুলিয়া ব্ল্যাকনার ও যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট অব পিসের সাউথ এশিয়া প্রোগ্রামসের ভিজিটিং এক্সপার্ট জেফ্রি ম্যাকডোনাল্ড।

ব্রিফিংয়ে লিখিত বক্তব্যে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন অ্যান্ড এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টারের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি আগের মতোই অত্যন্ত উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। যদিও র‌্যাব ও এর শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় একটা তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব দেখা গেছে। র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমেছে।

আশরাফুজ্জামান বলেন, পরিসংখ্যান বলছে— এ নিষেধাজ্ঞা অনেক জীবন বাঁচাতে সহায়ক হয়েছে। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন আসন্ন। জনগণ ভোট দিতে উন্মুখ। কিন্তু একটি বিশ্বাসযোগ্য, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টিকে সরকার কঠিন করে তুলেছে। বাংলাদেশিদের যে মূল্য গুনতে হচ্ছে, তার মাত্রা কমিয়ে আনতে হিউম্যান রাইটস কমিশনকে পূর্ণ শক্তি ব্যবহারের আহ্বান জানান তিনি।

তিনি পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে ২ হাজার ৬৮৩টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে ২০২১ সালে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ছিল ১০৭টি। কিন্তু ২০২২ সালে এ সংখ্যা ৩১ জনে নেমে আসে। এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত আটজন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ গবেষক জুলিয়া ব্ল্যাকনার বলেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার রক্ষা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব তৈরি হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার ফলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুম তাৎক্ষণিকভাবে কমে এসেছে। কিন্তু এখনো লোকজনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, বেআইনিভাবে আটকে রাখা হচ্ছে। পরে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে বা আদালতে হাজির করা হচ্ছে। কারা হেফাজতে নির্যাতনের কথাও শোনা যাচ্ছে।

জুলিয়া আরও বলেন, নিষেধাজ্ঞার পর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং গুম কমে যাওয়া এই বার্তা দিচ্ছে যে, বাংলাদেশ সরকার চাইলে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করতে পারে। গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি যুক্তরাষ্ট্র। গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দিয়েছে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ক্ষুণ্নকারী বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। তবে দেশটিতে জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় সহিংসতা বাড়তে দেখা যাচ্ছে। বাড়ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতন। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে যে দাবি করছে, তা বিশ্বাস না করতে কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

জেফ্রি ম্যাকডোনাল্ড বলেন, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে যে জাতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তা হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক বাংলাদেশি এবং আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক দেশটির সর্বশেষ দুটি জাতীয় নির্বাচন (২০১৪ ও ২০১৮ সালের) খুবই ত্রুটিপূর্ণ, সহিংসতাপূর্ণ ও অনিয়মে ভরা ছিল বলে মনে করেন। যে দলই জয়লাভ করুক না কেন, রাজনৈতিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা, জনপ্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি বাংলাদেশের মানুষের বিশ্বাস পুনরুদ্ধারে সে দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দরকার।

এর আগে ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য র‌্যাব এবং এর কিছু শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। এই বছর মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র্র বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে ভোট কারচুপির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে।

এর প্রেক্ষাপটে রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড লিটিগেশনবিষয়ক ফেলো ক্রিস্টি ইউয়েদা বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আমরা যেমনটা দেখেছিলাম, ঠিক তেমনি ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের নির্বাচনকে সামনে রেখে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন, মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক এবং সরকারের সমালোচকদের টার্গেট করে নাগরিক অধিকার সঙ্কুচিত করার ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা উল্লিখিত ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতিশোধমূলকভাবে গ্রেফতার, হয়রানি এবং ভীতি প্রদর্শন করছে। কারণ এ কর্মকর্তাদের অন্যায়ের জন্য কোনো জবাবদিহি করতে হয় না।

বাংলাদেশে মতপ্রকাশ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ধীরে ধীরে খর্ব হচ্ছে উল্লেখ করে ক্রিস্টি ইউয়েদা বলেন, মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে সাংবাদিকদের ওপর ১৫১টি হামলা হয়েছে। সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ছাড়াও সরকার মিডিয়ার ওপর আক্রমণ করেছে।

তিনি বলেন, এ বছরের জানুয়ারি মাসে রাষ্ট্রবিরোধী খবর প্রকাশের অভিযোগে সরকার ১৯১টি ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে তুচ্ছ কারণে প্রকাশনার লাইসেন্স বাতিল করে প্রধান বিরোধী দলের একটি সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়েছে।

Exit mobile version