যা বলা যায়, আর যা বলা যায় না
২০২২-১০-১৬
৩০ সেপ্টেম্বর কনওয়ে হলে দেওয়া অরুন্ধতী রায়ের স্টুয়ার্ট হল স্মারক বক্তৃতা যা বলা যায়, “আর যা বলা যায় না: আমাদের চেনাজানা দুনিয়ার খানখান হয়ে যাওয়া” এর প্রথম অংশ এটি। পরস্পরের হয়ে কথা বলা ও সংহতি এখন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটিও এখন বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন প্রথিতযশা এই লেখক। দুই পর্বে এই বক্তৃতা প্রকাশ করছি আমরা, যার প্রথম পর্ব যা বলা যায়, আর যা বলা যায় না প্রকাশিত হলো আজ।]
আমাদেরকে শুধু সরকারই সন্ত্রস্ত করে রাখে না, বরং রাস্তায় ভিড় করা জনতা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিদ্রূপ, এবং দুঃখজনকভাবে স্বয়ং গণমাধ্যমও আমাদেরকে সন্ত্রস্ত করে রাখে
স্টুয়ার্ট হল স্মরণে আমাকে এখানে আলোচনা করতে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ধন্যবাদ। এতোদিন ধরে আমরা এটা করার চেষ্টা করছি যে মনে হচ্ছে অনেক বছর কেটে গেছে। এতো মানুষের সঙ্গে একই ঘরে একত্র হওয়ার সুযোগকে আমি আর কখনোই দায়সারাভাবে নেবো না। অতিমারী এখন অনেকটাই ফিকে হয়ে এসেছে, কিন্তু যে ক্ষত এই অতিমারী রেখে গেছে তাকে সামলাতে আমরা অনেকেই এখনও হিমশিম খাচ্ছি। আমার বিশ্বাসই হতে চায় না যে আমার সাথে স্টুয়ার্টের কখনও দেখা হয়নি। কিন্তু তাঁর লেখা পড়লে মনে হয় আমরা বিভিন্ন জিনিস নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করে একসঙ্গে অনেক সময় কাটিয়েছি।
স্নোডেন এখনও মস্কোতে নির্বাসনে আছেন। আমাদের নিত্যসঙ্গী মুঠোফোনের মাধ্যমে যে নজরদারিমূলক রাষ্ট্রের বিষয়ে স্নোডেন সতর্ক করেছিলেন, স্বেচ্ছায় তার মধ্যে প্রবেশ করেছি আমরা। আমাদের মুঠোফোন আমাদের শরীরের অন্তরঙ্গ ও অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়ে আমাদের ওপর নজর রাখছে, আমাদের সবচেয়ে ব্যক্তিগত তথ্য রেকর্ড করছে ও ছড়িয়ে দিচ্ছে যাতে আমাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখা যায়, আমাদেরকে নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ করা যায় এবং পোষ মানানো যায়। এই নজরদারি শুধু রাষ্ট্রই আমাদের ওপর করছে না, বরং আমরা নিজেরাও পরস্পরের ওপর করছি।
এই বক্তৃতার মূল শিরোনাম যা বলা যায়, আর যা বলা যায় না আদতে অভিনেতা জন কুসাকের সঙ্গে আমার লেখা ছোট একটা বইয়ের নাম। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তাঁর এবং আমার মস্কোতে এডওয়ার্ড স্নোডেনের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া নিয়ে লেখা এই বই। আমাদের আরেকজন সঙ্গী ছিলেন ড্যানিয়েল এলসবার্গ। আপনারা যাঁরা তাঁকে মনে রাখার পক্ষে একটু বেশিই তরুণ, তাঁদের জন্য বলছি- তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের স্নোডেন। তিনিই ভিয়েতনাম যুদ্ধের পেন্টাগন পেপার্স প্রকাশ্যে এনেছিলেন।
বেশ কিছু বছর আগে স্নোডেন আমাদের সতর্ক করেছিলেন যে, আমরা নিজেদের অজান্তেই এক নজরদারিমূলক রাষ্ট্রের দিকে এগিয়ে চলেছি। স্নোডেন এখনও মস্কোতে নির্বাসনে আছেন। আমাদের নিত্যসঙ্গী মুঠোফোনের মাধ্যমে যে নজরদারিমূলক রাষ্ট্রের বিষয়ে স্নোডেন সতর্ক করেছিলেন, স্বেচ্ছায় তার মধ্যে প্রবেশ করেছি আমরা। আমাদের মুঠোফোন আমাদের শরীরের অন্তরঙ্গ ও অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়ে আমাদের ওপর নজর রাখছে, আমাদের সবচেয়ে ব্যক্তিগত তথ্য রেকর্ড করছে ও ছড়িয়ে দিচ্ছে যাতে আমাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখা যায়, আমাদেরকে নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ করা যায় এবং পোষ মানানো যায়। এই নজরদারি শুধু রাষ্ট্রই আমাদের ওপর করছে না, বরং আমরা নিজেরাও পরস্পরের ওপর করছি।
ভাবুন, যদি আপনার যকৃৎ বা পিত্তথলি আপনার শরীরের জন্য ঠিকঠাকমতো কাজ না করতো, তাহলে ডাক্তার আপনাকে বলতেন যে আপনি গুরুতর অসুস্থ। এমন একটা জালেই আমরা আটকা পড়েছি। একে ছাড়া আমাদের চলবে না, আবার এটা ভেতরে ভেতরে আমাদের ক্ষতিও করে চলেছে।
আমার বক্তব্যের প্রথম অংশে আমি বলবো যা বলা যায়, আর যা বলা যায় না তা নিয়ে। দ্বিতীয় অংশে আমি বলবো যেভাবে আমরা পৃথিবীকে আমরা যেভাবে জানি, তা ভেঙে খানখান হয়ে যাওয়া নিয়ে।
যেসব জিনিস বলা যায় না বা করা যায় না, তা যাঁরা বলেছেন বা করেছে, তাঁদের জন্য এ বছরটা একটা খারাপ বছর। ইরানে ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনিকে পুলিশ হেফাজতে থাকার সময়ে হত্যা করা হয়েছে। বিধিসম্মতভাবে হিজাব না পরার পাপ করেছিলেন তিনি। এরপর শুরু হওয়া বিক্ষোভে, যা এখনও চলছে, বহু মানুষকে এর মধ্যেই হত্যা করা হয়েছে।
অর্থাৎ ইরানে বাধ্যতামূলক হিজাব এবং ভারত ও অন্যান্য দেশে হিজাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘটনা দুটিকে পরস্পরবিরোধী মনে হলেও আদতে তা নয়। নারীকে জোর করে হিজাব পরানো বা জোর করে তাঁর হিজাব খুলে নেওয়া- কোনোটিরই মূল বিষয় হিজাব নয়। এখানে মূল বিষয়টি হলো জবরদস্তি। তাকে কাপড় পরাও, অথবা তার কাপড় খোলো। নারীকে নিয়ন্ত্রণ ও তার ওপর খবরদারি করার সেই পুরনো বদ্ধমূল চর্চা এটা।
অন্য দিকে ভারতের দক্ষিণের রাজ্য কর্ণাটকে মুসলিম স্কুলছাত্রীরা ক্লাসরুমে হিজাব পরার মধ্য দিয়ে নিজেদের মুসলিম পরিচয় তুলে ধরতে চাওয়ায় ডানপন্থী হিন্দু পুরুষদের হাতে শারীরিক হয়রানির শিকার হতে হয়েছে তাঁদের। এই অঞ্চলে বহু শতাব্দী ধরে হিন্দু এবং মুসলিমরা পাশাপাশি বাস করে এসেছেন, কিন্তু সম্প্রতি তাঁরা মারাত্মকভাবে পরস্পরের বিরুদ্ধে চলে গেছেন।
অর্থাৎ ইরানে বাধ্যতামূলক হিজাব এবং ভারত ও অন্যান্য দেশে হিজাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘটনা দুটিকে পরস্পরবিরোধী মনে হলেও আদতে তা নয়। নারীকে জোর করে হিজাব পরানো বা জোর করে তাঁর হিজাব খুলে নেওয়া- কোনোটিরই মূল বিষয় হিজাব নয়। এখানে মূল বিষয়টি হলো জবরদস্তি। তাকে কাপড় পরাও, অথবা তার কাপড় খোলো। নারীকে নিয়ন্ত্রণ ও তার ওপর খবরদারি করার সেই পুরনো বদ্ধমূল চর্চা এটা।
এ বছর আগস্টে আপস্টেট নিউ ইয়র্কে সালমান রুশদির ওপর তাঁর ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত বই দ্য স্যাটানিক ভার্সেস এর জন্য এক ইসলামী মৌলবাদী বর্বরোচিত হামলা করেছে। প্রকাশের পরের বছর, অর্থাৎ ১৯৮৯ সালে ইরান বিপ্লবের নেতা এবং ইরান ইসলামী প্রজাতন্ত্রের প্রথম নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি রুশদির মৃত্যুদণ্ডের ফরমান জারি করেন। এতো বছর পরে যখন কেবল মনে হতে শুরু করেছে যে তাঁর বইয়ের প্রতিক্রিয়ায় উদ্ভূত রাগ-ক্রোধ প্রশমিত হয়েছে এবং রুশদি আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে এসেছেন, তখনই এই হামলার ঘটনা ঘটলো।
রুশদির ওপর হওয়া এই মারাত্মক হামলাকে ‘সভ্যতার সংঘাত’ কিংবা ‘গণতন্ত্র বনাম অন্ধকার’ ইত্যাদি ক্লিশে বিশেষণে ভূষিত করার আগে আমাদেরকে অবশ্যই একটু থামতে হবে। কেননা তথাকথিত বাক-স্বাধীনতার এসব প্রচারকদের নেতৃত্বে ঘটা অনেক আক্রমণে এর মধ্যেই লক্ষ লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে অনেকে ছিলেন লেখক, কবি এবং শিল্পী।
৭৫ বছর বয়সী রুশদি হামলার ধাক্কা সামলে উঠেছেন এবং ভালো আছেন- এই তাৎক্ষণিক খবরের পর আর কোনো খবর নেই এ বিষয়ে। আমরা কেবল আশা করতে পারি যে, তিনি সেরে উঠছেন এবং নিজের অক্ষুণ্ণ যাবতীয় ক্ষমতা নিয়ে সাহিত্যের জগতে ফিরে আসবেন। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানেরা বলিষ্ঠভাবে রুশদিকে সমর্থন জানিয়েছেন। কেউ কেউ বিষয়টাকে একটু নিজের দিকে টেনেই বলেছেন, “রুশদির লড়াই আমাদেরই লড়াই।”
অন্য দিকে, ঐসব দেশের সৈনিকদের করা নৃশংসতর কিছু যুদ্ধাপরাধের ঘটনা (শত শত হাজার মানুষ মারা গেছেন সেসব যুদ্ধে) প্রকাশ ও ফাঁস করে দেওয়া জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ভগ্নস্বাস্থ্যে বেলমার্শ কারাগারে আটক রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পিত হওয়ার দিন গুনছেন অ্যাসাঞ্জ, যেখানে তাঁর মৃত্যুদণ্ড হতে পারে, হতে পারে একাধিক যাবজ্জীবনও।
কাজেই, রুশদির ওপর হওয়া এই মারাত্মক হামলাকে ‘সভ্যতার সংঘাত’ কিংবা ‘গণতন্ত্র বনাম অন্ধকার’ ইত্যাদি ক্লিশে বিশেষণে ভূষিত করার আগে আমাদেরকে অবশ্যই একটু থামতে হবে। কেননা তথাকথিত বাক-স্বাধীনতার এসব প্রচারকদের নেতৃত্বে ঘটা অনেক আক্রমণে এর মধ্যেই লক্ষ লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে অনেকে ছিলেন লেখক, কবি এবং শিল্পী।
ভারতের কথা বলতে গেলে ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপির মুখপাত্র এবং একসময়ের টেলিভিশনের টকশোতে নিয়মিত উপস্থিত থাকা দুর্মুখ ব্যক্তিত্ব নূপুর শর্মার কথা বলতে হয়। এ বছর জুন মাসে তিনি মহানবী মুহম্মদকে নিয়ে বেশ কিছু আপত্তিকর মন্তব্য করেন, যার প্রধান লক্ষ্য উস্কানি দেওয়া বলেই মনে হয়। এর ফলে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা হয় এবং বেশ কয়েকটি হত্যার হুমকি পাওয়ার পর তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান। কিন্তু তাঁর মন্তব্যকে সমর্থন করা দুজন হিন্দু ব্যক্তিকে নৃশংসভাবে শিরশ্ছেদের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। পরবর্তী দিনগুলোতে মুসলিম মৌলবাদীদের বিভিন্ন দল একত্র হয়ে “তন সে সর যুদা” (ধড় থেকে মাথা আলাদা করো) স্লোগান দেয় এবং রাষ্ট্রের কাছে ব্লাসফেমি আইন প্রণয়নের দাবি জানায়। এ জিনিসটা তাদের মাথায় আসেনি যে, রাষ্ট্র এতেই সবচেয়ে খুশি হবে।
এরাই একমাত্র নয় যারা সেন্সরশিপ জারি করে এবং হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এ মাসেই আমি আমার বন্ধু সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশের হত্যার পঞ্চম বার্ষিকীতে বক্তব্য দেওয়ার জন্য ব্যাঙ্গালোরে গিয়েছিলাম। গৌরীকে হিন্দু চরমপন্থীরা তাঁর বাড়ির বাইরে গুলি করে হত্যা করেছিলো। তাঁর হত্যাকাণ্ডটি ছিলো এ ধরনের ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডের অন্ধকার অধ্যায়ের একটি অংশ: এর আগে ২০১৩ সালে চিকিৎসক এবং প্রখ্যাত যুক্তিবাদী চিন্তক নরেন্দ্র দভলকারকে গুলি করে হত্যা করা হয়; ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গুলি করে হত্যা করা হয় লেখক ও ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য কমরেড গোবিন্দ পানসারেকে; একই বছরের আগস্ট মাসে হত্যা করা হয় কন্নড় পণ্ডিত অধ্যাপক এম এম কালবুর্গিকে।
কোন সন্দেহ নেই, হত্যাই আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া সেন্সরশিপের একমাত্র ধরন নয়। ২০২২ সালে ভারত ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সের ১৮০টি দেশের তালিকায় ১৫০ তম হয়েছে। এক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং মায়ানমারেরও পেছনে। আমাদেরকে শুধু সরকারই সন্ত্রস্ত করে রাখে না, বরং রাস্তায় ভিড় করা জনতা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিদ্রূপ, এবং দুঃখজনকভাবে স্বয়ং গণমাধ্যমও আমাদেরকে সন্ত্রস্ত করে রাখে।
হত্যাই আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া সেন্সরশিপের একমাত্র ধরন নয়। ২০২২ সালে ভারত ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সের ১৮০টি দেশের তালিকায় ১৫০ তম হয়েছে। এক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং মায়ানমারেরও পেছনে। আমাদেরকে শুধু সরকারই সন্ত্রস্ত করে রাখে না, বরং রাস্তায় ভিড় করা জনতা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিদ্রূপ, এবং দুঃখজনকভাবে স্বয়ং গণমাধ্যমও আমাদেরকে সন্ত্রস্ত করে রাখে।
টেলিভিশনে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা সম্প্রচারিত হতে থাকা শত শত সংবাদ চ্যানেলের (যেগুলোকে আমরা প্রায়শই ‘রেডিও রুয়ান্ডা’ বলে থাকি) সঞ্চালকেরা মুসলিম ও “দেশ-বিরোধীদের” বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের গ্রেফতার করার, বর্জন করার ও শাস্তি দেওয়ার আহ্বান জানান। কোনো ধরনের শাস্তিভোগ ছাড়াই দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে তারা অনেকের জীবন ও সুনাম নষ্ট করেছেন। সমাজকর্মী, কবি, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী ও শিক্ষার্থীদের প্রায় রোজই গ্রেফতার করা হচ্ছে। যেখান থেকে কোনো খবর বাইরে আসতে পারে না, সেই কাশ্মীরের কথাই ধরা যাক। এটা একটা বিরাট জেলখানা। দ্রুতই সেখানে সৈনিকের সংখ্যা নাগরিকের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাবে।
কাশ্মীরীদের যাবতীয় প্রকাশ্য ও ব্যক্তিগত কথাবার্তা, এমনকি তাঁদের নিশ্বাসের ছন্দও নজরদারিতে রাখা হয়। বিদ্যালয়গুলোতে গান্ধীকে ভালোবাসতে শেখার নামে মুসলিম শিশুদেরকে শেখানো হয় হিন্দু ভজন গাইতে। আজকাল কাশ্মীরের কথা ভাবতে গেলে আমার কেন যেন মনে পড়ে, পৃথিবীর কোনো কোনো জায়গায় বর্গাকার ছাঁচে তরমুজ ফলানো হচ্ছে, যাতে তরমুজগুলো গোল না হয়ে বর্গাকৃতির হয় এবং সেগুলোকে সংরক্ষণ করা সহজতর হয়। কাশ্মীর উপত্যকায় সরকার যেন এই একই পরীক্ষা তরমুজের ওপর না চালিয়ে মানুষের ওপর চালাচ্ছে। রীতিমতো বন্দুক ঠেকিয়ে।
গাঙ্গেয় সমভূমিতে- উত্তর ভারতের ‘গো বলয়’ অঞ্চলে ধর্মগুরুদের নেতৃত্বে তলোয়ারধারী হিন্দুদের দল (যাদেরকে গণমাধ্যমগুলো কোনো কারণে তদারককারী বলে) মুসলিম গণহত্যার এবং মুসলিম নারীদের দলবদ্ধধর্ষণের আহ্বান জানিয়েছে এবং এর জন্য তাদের কোনো ধরনের শাস্তি পেতে হয়নি।
২০০২ সালে গুজরাটে প্রকাশ্য দিবালোকে এক হাজারেরও বেশি মুসলিমকে উন্মত্ত জনতা কর্তৃক নির্বিচার হত্যা ও গণহত্যার শিকার হতে দেখেছি আমরা (বেসরকারি সূত্র অনুযায়ী নিহতের সংখ্যা দুই হাজারের কাছাকাছি)। একই জিনিস আমরা ঘটতে দেখেছি ২০১৩ সালে উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগরের শত শত মুসলিমদের বেলায়ও। এটা মোটেই আশ্চর্যজনক নয় যে, নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের দুটি ঘটনাই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের ঠিক আগে আগে ঘটেছিলো।
আমরা দেখেছি, যে ব্যক্তির মুখ্যমন্ত্রিত্বের সময়ে গুজরাটে এই গণহত্যা ঘটেছিলো সেই নরেন্দ্র মোদি হিন্দু হৃদয় সম্রাট হিসেবে নিজের আসন পাকাপোক্ত করে নিয়েছেন এবং ক্রমান্বয়ে দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অভিষিক্ত হয়েছেন। যা ঘটেছে তার জন্য তিনি কখনও অনুশোচনা প্রকাশ করেননি বা ক্ষমা প্রার্থনা করেননি। আমরা দেখেছি, তিনি অনবরত মারাত্মক, বিদ্রূপাত্মক মুসলিমবিদ্বেষী বয়ানের মাধ্যমে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করে চলেছেন। আমরা দেখেছি, দেশের সর্বোচ্চ আদালত তাঁকে যাবতীয় আইনগত ও নৈতিক দায় থেকে মুক্তি দিয়েছে। বিবমিষায় আক্রান্ত হতে হতে আমরা দেখেছি, তথাকথিত উন্মুক্ত বিশ্বের নেতারা তাঁকে একজন রাষ্ট্রপ্রধান ও গণতন্ত্রবাদী হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
আমরা দেখেছি, যে ব্যক্তির মুখ্যমন্ত্রিত্বের সময়ে গুজরাটে এই গণহত্যা ঘটেছিলো সেই নরেন্দ্র মোদি হিন্দু হৃদয় সম্রাট হিসেবে নিজের আসন পাকাপোক্ত করে নিয়েছেন এবং ক্রমান্বয়ে দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অভিষিক্ত হয়েছেন। যা ঘটেছে তার জন্য তিনি কখনও অনুশোচনা প্রকাশ করেননি বা ক্ষমা প্রার্থনা করেননি। আমরা দেখেছি, তিনি অনবরত মারাত্মক, বিদ্রূপাত্মক মুসলিমবিদ্বেষী বয়ানের মাধ্যমে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করে চলেছেন। আমরা দেখেছি, দেশের সর্বোচ্চ আদালত তাঁকে যাবতীয় আইনগত ও নৈতিক দায় থেকে মুক্তি দিয়েছে। বিবমিষায় আক্রান্ত হতে হতে আমরা দেখেছি, তথাকথিত উন্মুক্ত বিশ্বের নেতারা তাঁকে একজন রাষ্ট্রপ্রধান ও গণতন্ত্রবাদী হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
গত মাসে ভারত ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা প্রাপ্তির ৭৫ তম বার্ষিকী উদযাপন করেছে। দিল্লির লালকেল্লায় বক্তৃতার মঞ্চ থেকে মোদি তাঁর ভারতীয় নারীদের ক্ষমতায়নের স্বপ্নের কথা বজ্রকণ্ঠে বলেছেন। অত্যন্ত আবেগের সঙ্গে, হাত মুষ্টিবদ্ধ করে কথা বলেছেন তিনি। সে সময় তিনি জাতীয় পতাকার রঙে রাঙানো একটা পাগড়ি পরেছিলেন।
গত বছর ১৫ আগস্ট দিল্লির ঐতিহাসিক লাল কেল্লায় ভারতের ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে হাত নাড়ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: পিটিআই/ কমল সিং
হিন্দু বর্ণপ্রথার ভিত্তিতে গঠিত একটি সমাজ, যেখানে উচ্চবর্ণের পুরুষেরা দলিত ও আদিবাসী নারীর শরীরের ওপর বহু শতাব্দী ধরে তাদের ধর্মীয় বিধিমতে প্রাপ্ত ক্ষমতার চর্চা করে এসেছে, সেখানে নারীর ক্ষ্মতায়নের বিষয়টি কেবল নীতির নয়। বরং বিষয়টি সামাজিকীকরণের এবং বিশ্বাস কাঠামোর।
মোদি যখন তাঁর স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ দিচ্ছিলেন, তখনও গুজরাটে ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার ২০০২ সালে বিলকিস বানুকে দলবদ্ধ ধর্ষণ এবং তাঁর মা, বোন, চাচা, চাচী, চাচাতো বোন, তার এক দিন বয়সী শিশু, ও বিলকিসের তিন বছরের মেয়ে সালেহাসহ (সালেহার মাথা পাথরে আছড়ে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিলো) পরিবারের ১৪ জন সদস্যকে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনের বিশেষ ক্ষমা ঘোষণা করে।
ভারতে নারীর প্রতি অপরাধের মাত্রা বেড়ে চলেছে, যার ফলে বিশ্বের মানচিত্রে ভারত নারীদের জন্য সবচেয়ে অনিরাপদ জায়গাগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। অপরাধীরা যে প্রায়শই বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের সদস্য বা ক্ষমতাসীন দলের সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্কিত, তা এখন আর কাউকে বিস্মিত করে না। এ ধরনের ঘটনায় আমরা ধর্ষকদের সপক্ষে প্রকাশ্য মিছিল হতে দেখেছি। সম্প্রতি ১৯ বছর বয়সী একটি মেয়েকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় একজন স্থানীয় নেতা মেয়েটির বাবা “ক্ষুধার্ত বিড়ালের সামনে কাঁচা দুধ সাজিয়ে দিয়েছেন” বলে দোষারোপ করেছেন।
এমনকি মোদি যখন তাঁর স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ দিচ্ছিলেন, তখনও গুজরাটে ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার ২০০২ সালে বিলকিস বানুকে দলবদ্ধ ধর্ষণ এবং তাঁর মা, বোন, চাচা, চাচী, চাচাতো বোন, তার এক দিন বয়সী শিশু, ও বিলকিসের তিন বছরের মেয়ে সালেহাসহ (সালেহার মাথা পাথরে আছড়ে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিলো) পরিবারের ১৪ জন সদস্যকে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনের বিশেষ ক্ষমা ঘোষণা করে।
২০০২ সালে গুজরাটের যে মুসলিমবিরোধী গণহত্যার কথা আমি একটু আগে বলেছি, এই নারকীয় অপরাধটি সে সময়ে ঘটা এ ধরনের অনেকগুলো ঘটনার একটি মাত্র। যে প্যানেল তাদের মুক্তির অনুমতি দিয়েছে সেটির বেশ কয়েকজন সদস্যই বিজেপির। তাদের মধ্যে একজন নির্বাচিত বিধায়ক পরে আনুষ্ঠানিকভাবে বলেছেন যে, যেহেতু অভিযুক্তদের কয়েকজন উত্তম সংস্কারসম্পন্ন ব্রাহ্মণ, কাজেই তাদের অপরাধী হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
এই ঘটনাটির মতো কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর তদন্তকৃত কোনো ঘটনায় অভিযুক্তকে ক্ষমা করার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তটি আগে কেন্দ্রীয় সরকার, অর্থাৎ নরেন্দ্র মোদির সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হতে হয়। কাজেই, আমাদেরকে ধরে নিতে হবে যে, সেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছিলো।
ভারতে আমাদের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনগুলোর আগেই সবসময় অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটে। সবসময়ই এ সময়টা সবচেয়ে বিপজ্জনক সময়।
অভিযুক্তরা বেরিয়ে আসার পর কারাগারের বাইরে তাদেরকে বীরের মতো করে গ্রহণ করা হয়। ফুলের মালা পরানো হয় তাদের, মিষ্টি খাওয়ানো হয় এবং তাদের পায়ের ধুলো নেওয়া হয়। এ সবই করে বিজেপির সঙ্গে ক্ষীণ সম্পর্কযুক্ত (এই ‘ক্ষীণতা’র কারণ প্রয়োজনে সম্পর্ক অস্বীকার করতে হওয়ার সম্ভাবনা) বিভিন্ন হিন্দু গোষ্ঠীর সদস্যরা, যারা একত্রে ‘সংঘ পরিবার’ গঠন করে। কয়েক মাসের মধ্যেই গুজরাটে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
ভারতে আমাদের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনগুলোর আগেই সবসময় অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটে। সবসময়ই এ সময়টা সবচেয়ে বিপজ্জনক সময়।
যখন এই ধর্ষক ও গণহত্যাকারীরা সমাজের শ্রদ্ধাভাজন সদস্য হিসেবে নিজেদের জায়গা ফিরে পেয়েছে, তখন সমাজকর্মী তিস্তা সেতালভাড় জালিয়াতি, মিথ্যা সাক্ষীর ব্যবস্থা করা ও উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হন। সেতলভাড়ের সংগঠন জাস্টিস অ্যান্ড পিস ২০০২ সালের হত্যাযজ্ঞে সাধারণভাবে গুজরাট সরকারের ও বিশেষত নরেন্দ্র মোদির সম্পৃক্ততার বিষয়ে নিখুঁতভাবে ব্যাপক তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছে।
এই পরিস্থিতিতেই আমরা বাস করি এবং কাজ করি। সেসব কথা বলি, যা বলা যায় না। অন্য সব ক্ষেত্রের মতো কথার ক্ষেত্রেও ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ ও শ্রেণির ওপর ভিত্তি করে বাছবিচার করে আইন প্রয়োগ করা হয়। হিন্দুরা যা বলতে পারেন, মুসলিমরা তা বলতে পারেন না। অন্য সবাই-ই যা বলতে পারেন, কাশ্মিরীরা তা বলতে পারেন না। পরস্পরের হয়ে কথা বলা ও সংহতি এখন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটিও এখন বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।
অন্যান্য দেশের মতো ভারতেও পরিচয়কে হাতিয়ার করে তোলার বিষয়টি, অর্থাৎ যেখানে পরিচয়কে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করা হয়, তা গোটা পরিবেশকেই একটা শাস্তিমূলক, ধর্মদ্রোহী-শিকার করা কলে পরিণত করেছে। এমনকি এসব ছোট ছোট পরিচয়ধারীদেরও একটি ক্ষমতা কাঠামো তৈরি হয়েছে। দার্শনিক ওলুফেমি ও তাইয়ো তাঁর বই এলিট ক্যাপচার এ দেখান কীভাবে এসব গোষ্ঠীর মধ্য থেকে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি ওপরে উঠে যায়। এসব ব্যক্তিরা সাধারণত ক্ষমতাশালী দেশ, শহর বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য যাদের ইন্টারনেটে সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা আছে এবং বিভিন্ন সংগঠন, গণমাধ্যম ও কর্পোরেশন যাদেরকে তাদের সম্প্রদায়ের বাকিদের হয়ে কথা বলার সুযোগ করে দেয়।
ঐতিহাসিক বেদনা ও অপমানের প্রেক্ষিতে এ ধরনের প্রক্রিয়া সহজেই বোধগম্য। কিন্তু এটা কোনো বৈপ্লবিক প্রতিক্রিয়া নয়। জাতীয় পর্যায়ে শক্তিমানদের দখলদারিত্বের একমাত্র জবাব হিসেবে ক্ষুদ্র গোষ্ঠী আকারে দখলদারিত্বকে মদদ দেয়া যায় না। কয়েকটি প্রামাণ্য গবেষণায় দেখা গেছে যে, যখন আমরা কোনো নিষেধাজ্ঞা ও সেন্সরশিপের সংস্কৃতিকে সমর্থন জানাই, তখন ডানপন্থীদের লাভের পাল্লাই ভারী হয়। সম্প্রতি বিদ্যালয়ে নিষিদ্ধকৃত পাঠ্যবই নিয়ে পেন আমেরিকার একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, নিষিদ্ধকৃত বেশিরভাগ বইয়েই লিঙ্গ ও জাতি নিয়ে প্রগতিশীল বিভিন্ন লেখা ছিলো।
কোনো সম্প্রদায়ের সঙ্গে দমনমূলক আচরণ করা এবং তাদের পরিচয়কে ভাঙতে ভাঙতে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে এবং ঐক্যের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। দুঃখের বিষয় হলো, এটাই ভারতের বর্ণবাদের মূল লক্ষ্য- মানুষকে অলঙ্ঘ্যনীয় ও বিচ্ছিন্ন বিভিন্ন সম্প্রদায়ে বিভক্ত করা। এর মধ্যে কোনো সম্প্রদায়ই পরস্পরের যন্ত্রণা বুঝতে পারবে না, কারণ তারা একে অপরের সঙ্গে অবিরাম সংঘর্ষে রত। এর ফলে এই কাঠামোটি একটি স্বয়ংক্রিয় প্রশাসনিক/ নজরদারির যন্ত্রের মতো কাজ করে, যার মাধ্যমে সমাজ নিজেকে নিয়ন্ত্রণে বা নজরদারিতে রাখে। এর ফলে নিপীড়নের কাঠামো অটুট থাকে। একদম ওপরে এবং একদম নিচে যারা থাকে (এই শ্রেণিবিভাজনও নিখুঁতভাবে ধার্য), তারা ছাড়া প্রত্যেকেই কারো না কারো দ্বারা নিপীড়ত এবং কাউকে না কাউকে নিপীড়ন করে।
বিস্ফোরক ফাঁদের এই গোলকধাঁধা একবার তৈরি হয়ে গেলে বলতে গেলে কেউই আর পবিত্রতা ও যথার্থতার পরীক্ষায় উতরে যেতে পারে না। একসময় যেসব লেখাকে উত্তম কিংবা মহৎ সাহিত্য হিসেবে বিবেচনা করা হতো, তার মধ্যে কোনোটাই এক্ষেত্রে পার পাবে না। শেক্সপিয়র না, তলস্তয় না। ভাবুন, তিনি ধরে নিয়েছিলেন আন্না কারেনিনা নামের সেই নারীর মন তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। দস্তয়েভস্কিও না, যিনি একটু বয়সী মহিলাদের বলতেন “বুড়ি থুত্থুড়ি”। তাঁর বিবেচনা অনুযায়ী আমি নিশ্চিতভাবেই থুত্থুড়ে বুড়ি। তবু আমি চাইবো মানুষ তাঁর লেখা পড়ুক। বলাই বাহুল্য যে, এখনকার এই যথার্থতার বিচারে কোনো ধর্মের কোনো পবিত্র গ্রন্থই জাতে উঠতে পারবে না।
পাবলিক আলাপের এসব দৃশ্যমান কোলাহলের মধ্য দিয়ে আমরা দ্রুত গতিতে এক ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক স্থবির অবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। একাত্মতা কখনোই আদিম যুগের বিষয় নয়। একাত্মতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে হবে, এর বিষয়ে বিতর্ক করতে হবে, একে পরিমার্জন করতে হবে। আর একে বর্জন করলে আমরা শেষমেশ সেই জিনিসেই পরিণত হই যার বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করছি।
অরুন্ধতী রায় একজন ঔপন্যাসিক ও ভারতের অন্যতম প্রধান বুদ্ধিজীবী।
অনুবাদক: দীপান্বিতা কিংশুক ঋতি
আরো পড়ুন: