Site icon The Bangladesh Chronicle

ম্যালকম মার্শাল: ব্যাটসম্যানদের এক বিভীষিকার নাম


বল হাতে যদি হন অপ্রতিরোধ্য, ব্যাট হাতে হয়ে উঠতেন দূর্ভেদ্য, কখনো ছুড়ে দিতেন অগ্নিগোলা, কখনো হয়ে উঠতেন মহাপ্রাচীর। অন্যের তরে উষ্ঠাগত প্রাণ, স্বীয় ক্ষেত্রে বিপন্ন প্রহর। এক কথায় প্রকাশ, ‘ভয়ংকর সুন্দর!’

বলা হচ্ছিলো, সর্বকালের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলারদের একজন ম্যালকম মার্শালের কথা। উন্মত্ত গতি, বুনো আগ্রাসন, বিষাক্ত সুইং, নিখুঁত লাইন-লেন্থ আর পিলে চমকানো বাউন্সার মিলিয়ে যিনি ছিলেন এক পরিপূর্ণ বিভীষিকা। সাথে মরণ ফাঁদ বৈচিত্র্য ফাস্ট ইনসুইঙ্গিং ইয়র্কার ও লেগ কাটার।

স্কিডি বাউন্সারের মত প্রাণঘাতী ডেলিভারি ছিল তার হাতে। যার ভয় আর আতঙ্কে উৎকন্ঠিত ব্যাটসম্যানরা, কাঁপতে থাকতো মাঠেই। শরীর তাক করা সেসব বাউন্সারে গাভাস্কার, দিলীপ ভেংসরকার, গ্রাহাম গুচ, অ্যালান বোর্ডার, মার্টিন ক্রো’র মতো কিংবদন্তী ব্যাটসম্যানরাও হয়ে উঠতেন ঘোলা জলে খাবি খাওয়া মাছ।

হেডিংলি টেস্টে ভাঙা হাতে বোলিং করে গ্যাটিংকে বাউন্সারের আঘাতে নাকমুখ থেঁতলে দিয়েছিলেন মার্শাল। এতোটাই ভয়ংকর ছিল সেই ডেলিভারি যে রক্তমাখা বলের গায়ে ভাঙা হাড়ের কুচি লেগে থাকতেও দেখা গিয়েছিল। তাছাড়া সদ্য অভিষিক্ত ব্যাটসম্যান অ্যান্ডি লয়েডেকে বাউন্সারের আঘাতে ক্যারিয়ার বরবাদের ঘটনাও ঠাঁই পেয়েছে ইতিহাসের পাতায়।

কখনো কখনো যেভাবে রাউন্ড দ্য উইকেটে গিয়ে বোলিং করতেন, মনে হতো ‘আল্টিমেট অ্যাটাক’ খুব সম্ভবত একেই বলে, ব্যাটসম্যানরা তখন সংজ্ঞাহীন ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি।’ মূর্তিমান আতঙ্ক আর বিভীষিকার আরেক নাম!

যা হোক, এবার আসি অন্য দিকটায়, হেডিংলি টেস্ট, উইজডেন ট্রফি ১৯৮৪। প্রথম ইনিংসে ফিল্ডিং করতে গিয়ে আঙুল ভাঙে মার্শালের, সেই ইনিংসে আর বল করা হয়নি। তবে ব্যাট হাতে দল যখন বিপদে, হয়ে গেছে দলের ৯ উইকেটের পতন, গোমেজ অপরাজিত ৯৮ রানে। এমন সময় সবাইকে হতভম্ব করে বাঁ হাতের বুড়ো আঙুলের দুটো ফ্র্যাকচারে টেপ লাগিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে আসেন মার্শাল। গোমেজকে সেঞ্চুরি করান, ভাঙা হাতেই খেলেন ৮ বল।

ঘটনা এখানেই শেষ হতে পারতো কিন্তু হয়নি, ‘পিকচার আভি বাকি হ্যাঁয়।’ পুরো বিশ্বকে অবাক করে ভাঙা হাতেই দ্বিতীয় ইনিংসে ফিল্ডিংয়ের ডাগ আউটে চলে আসেন তিনি। শুধুই কি ফিল্ডিং? করেছিলেন বোলিংও!

বল করার জন্যই কেব বল হাতে আসেননি,
তুলেছিলেন কালবৈশাখী ঝড়ও। ইংলিশদের আরো এক দফা হতবুদ্ধ করে তাসের ঘরের মতো ভাঙা হাতেই ভেঙে দিয়েছিলেন ব্যাটিং লাইনআপ। ভাঙা হাতে মার্শালের বোলিং ফিগার ছিল, ২৬-৯-৫৩-৭।

পৃথিবীর সব বাধাই প্রতিহত করা যায় কিন্তু মৃত্যুকে নয়। মৃত্যুকে প্রতিহত করতে পারেননি মার্শালও। মরনব্যাধি ক্যান্সারের আক্রমণে ১৯৯৯ সালের নভেম্বরে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে মাত্র ৪১ বছর বয়সে চিরবিদায় নেন এই কিংবদন্তী।

ম্যালকম মার্শালের জন্ম ১৯৫৮ সালের ১৮ এপ্রিল, বার্বাডোজের ব্রিজটাউনে। আজ এই কিংবদন্তীর ৬৫ তম জন্মদিন। শুভ জন্মদিন কিংবদন্তী, শুভ জন্মদিন ম্যালকম।

Exit mobile version