‘জিনিয়াস!’ ‘ওয়ার্ল্ড ক্লাস!’
ধারাভাষ্যকারের উপমাগুলোকেও কম মনে হচ্ছিল তখন। মাঝমাঠ পেরিয়ে বল পেয়েছিলেন কেভিন ডি ব্রুইনা। বলটা বুঝে নিয়ে গায়ের সঙ্গে সেটে থাকা প্রতিপক্ষকে ছিটকে ফেলে দিয়ে কোনাকুনি গতিতে বক্সের দিকে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সামনে চেলসি রক্ষণ আবার জমাট বেঁধে যাচ্ছিল, পুরো ম্যাচে যেমনটা করে গেছেন রুডিগার, থিয়াগো সিলভা, মালাং সাররা।
ডি ব্রুইনা তাই এমন কিছু করলেন, যা মুখ থেকে অবলীলায় অমন উপমা বের করে আনে। বক্সের বাইরে থেকে বাঁকানো এক গোলা। ঝাঁপিয়ে পড়েও যার নাগাল পাননি চেলসি গোলরক্ষক কেপা আরিসাবালাগা।
ব্রুইনার গোলটাই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিল। ১-০ ব্যবধানে জিতে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা ধরে রাখাটাও অনেকটা নিশ্চিত করে ফেলেছে পেপ গার্দিওলার সিটি। ২২ ম্যাচ শেষে দুইয়ে থাকা চেলসির চেয়ে ১৩ পয়েন্টে এগিয়ে গেছে সিটি।
ব্যবধান মাত্র এক গোল ম্যাচ সম্পর্কে ভুল বার্তা দিচ্ছে। খেলায় দুই দলের মাঝে আকাশ-পাতাল পার্থক্য ছিল। সিটির আক্রমণ ও চেলসির রক্ষণের তুমুল লড়াই দেখে যদি বিনোদন খুঁজে না পান, তবে টমাস টুখেলের কাণ্ড দেখে নির্ঘাত বিনোদন খুঁজে পাবেন যে কেউ। ম্যাচজুড়েই ডাগআউটে রীতিমতো হাত–পা ছোড়াছুড়ি করে নিজের রাগ-ক্ষোভ, হতাশা ঝেড়েছেন চেলসি কোচ। এ ম্যাচে সিটির জয়টাই ছিল প্রাপ্য ফল।
এমন নয় যে চেলসি আক্রমণ করেনি। কিন্তু সে আক্রমণগুলো দুই অর্ধের প্রথম দশ মিনিটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ম্যাচের ১০ মিনিটে গোলের সুবর্ণ এক সুযোগ পেয়েও শট নেননি রোমেলু লুকাকু। সতীর্থকে পাস দিতে গিয়ে সে সুযোগ নষ্ট করেছেন। দ্বিতীয়ার্ধে ৪৭ মিনিটে সিটি গোলরক্ষক এদেরসনকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি। এবার বল মেরেছেন এদেরসনের গায়ে। নিজেদের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়ের কাছ থেকে মহাগুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচ থেকে এটুকুই পেয়েছে চেলসি।
তবে লুকাকুর চেয়েও দোষী আরেক খেলোয়াড় আছে চেলসি একাদশে। বেশ কয়েকবারই প্রতি আক্রমণে ভয় সৃষ্টি করেছিল চেলসি। কিন্তু ক্রিস্টিয়ান পুলিসিকের দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে না পারা দলটাকে ভুগিয়েছে। বেশ কবার ভুল পাস দিয়েছেন পুলিসিক। আর দুবার বল বেশিক্ষণ পায়ে রেখে আক্রমণ নষ্ট করেছেন।
ম্যাচের বাকিটা সময় ছিল সিটির বরাদ্দে। সিটির পাসিং ফুটবলের সামনে নিজেদের বক্সের সামনেই সময় কাটিয়েছে চেলসি। ফিল ফোডেন, রাহিম স্টার্লিং, বের্নার্দো সিলভা, ডি ব্রুইনা ও জ্যাক গ্রিলিশরা নিজেদের মধ্যে জায়গা অদলবদল করে ব্যস্ত রেখেছিলেন প্রতিপক্ষকে। বিশেষ করে বাঁ প্রান্তে গ্রিলিশ বারবার আক্রমণে উঠে রুডিগারকে অস্থির করে তুলেছেন। কিন্তু সত্যিকারের একজন স্ট্রাইকারের অভাব টের পাওয়া গেছে আবার। ৩৯ মিনিটে কেপাকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি গ্রিলিশ। তাঁর শট কেপার পায়ে লেগে বাইরে চলে গেছে।
দ্বিতীয়ার্ধে চেলসির সাময়িক দাপটটা সামলে নেওয়ার পর আবার নিজেদের রূপে ফিরেছে সিটি। কিন্তু গ্রিলিশ, স্টার্লিং বা ফোডেনদের চেষ্টা বারবার সিটির পাঁচজনের রক্ষণে থেমে যাচ্ছিল। বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়ার পর শেষ বাধা হিসেবে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলেন কেপা। ৭০ মিনিটে ডি ব্রুইনা তাই বক্সের বাইরে থেকেই চেষ্টা করলেন। কান্তেকে ছিটকে ফেলে বক্সের কাছে গেলেন। কেপার কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করতে সিলভাকে নিজের সামনে রেখেই শট নিলেন।
এগিয়ে যাওয়ার পর আক্রমণের ধার আরও বাড়িয়েছে সিটি। কিন্তু ফোডেন, গ্রিলিশ আর সিলভারা হতাশ করেছেন।
২২ ম্যাচ শেষে ৫৬ পয়েন্ট নিয়ে প্রায় ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে সিটি। সমান ম্যাচে ৪৩ পয়েন্ট চেলসির। ২০ ম্যাচে ৪২ পয়েন্ট নিয়ে তিনে আছে লিভারপুল।