Site icon The Bangladesh Chronicle

মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে : দেশের ঋণমান কমাল ফিচ

দেশের ঋণমান কমাল ফিচ.

বাংলাদেশের ঋণমান কমাল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি ফিচ। বহির্বিশ্বের সঙ্গে লেনদেনে ঘাটতি অব্যাহত থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বিবেচনায় রেটিং কমানো হয়েছে। সংস্থাটি  আগের ‘বিবি মাইনাস’ থেকে রেটিং কমিয়ে এবার ‘বি প্লাস’ দিয়েছে। তবে আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন সংস্কারের উদ্যোগের ফলে ভবিষ্যতের জন্য আভাস বা ‘আউটলুক’ স্থিতিশীল রাখা হয়েছে।

গত সেপ্টেম্বরে ফিচ ঋণমান অপরিবর্তিত রেখে আউটলুক নেতিবাচক দিয়েছিল। তার আগে জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আরেক রেটিং এজেন্সি এসঅ্যান্ডপি ঋণমান ‘স্থিতিশীল’ থেকে ‘নেতিবাচক’ ক্যাটেগরিতে নামিয়ে দেয়। গত বছরের মে মাসে আরেক এজেন্সি মুডিস বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে দিয়েছিল।

এই তিনটি আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে বাংলাদেশ সভরেন ক্রেডিট রেটিং নিয়ে থাকে। একটি দেশের ক্রেডিট রেটিং বিনিয়োগকারীদের সে দেশের সম্ভাবনা ও ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা দেয়। ঋণমান হলো কোনো দেশের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতার মানদণ্ড। সাধারণভাবে কোনো দেশের ঋণমান কমলে বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হয়।

ফিচ ঋণমান কমানোর কারণ হিসেবে বলেছে, বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেনে ঘাটতি অব্যাহত আছে। এ সময়ে যেসব নীতি সংস্কার আনা হয়েছে তা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন ঠেকাতে এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট ছিল না। সম্প্রতি বিনিময়হারের নমনীয়তার লক্ষ্যে ‘ক্রলিং পেগ’ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এ ব্যবস্থা বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিতিশীলতা রোধ ও রিজার্ভ বাড়াতে সহায়ক হবে কিনা, তা পরিষ্কার নয়।

অন্যদিকে স্থিতিশীল আউটলুকের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতায় থাকায় সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সংস্কার কার্যক্রম, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং মধ্যমেয়াদি বিদেশি ঋণ পাওয়ার অনুকূল পরিবেশ এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে। এসব বিবেচনায় ভবিষ্যতের জন্য আভাস স্থিতিশীল রাখা হয়েছে।
গত বছরের মে মাসে মুডিসের ঋণমান কমানোর পর ১৮ জুন মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছিলেন, ‘ঋণমান কমানোর পেছনে ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কেননা ২০১২ সাল থেকে সংস্থাটি আমাদের রেটিং করে আসছে। তখন যা রিজার্ভ ছিল, আমদানি-রপ্তানি ছিল, অর্থনীতির যে অবস্থা ছিল তার চেয়ে এখন অনেক ভালো। মাঝে রিজার্ভ অনেক বেড়েছিল। অথচ ঋণমানের কোনো পরিবর্তন করেনি। ফলে যেসব কারণে রেটিং কমানো হয়েছে, তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না।’

সুশাসনে ঘাটতি, দুর্বল ব্যাংকিং খাত, রাজস্ব আয়ের ধীরগতি ও নাজুক অবকাঠামোর বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অধিকার তথা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, নিয়ন্ত্রকের মান এবং দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের ‘স্কোর ৫’। বিশ্বব্যাংকের সুশাসন স্কোরে যা অনেক নিম্নমানের। এ রকম অবস্থায় বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ বাধাগ্রস্ত হয়। এটা আওয়ামী লীগ সরকারের এজেন্ডা দারিদ্র্য কমানো, অবকাঠামো উন্নয়ন, জলবায়ু ঝুঁকি কমানো এবং ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায়।
ব্যাংক খাতের দুর্বলতার বিষয়ে বলা হয়েছে, সম্পদের মান, মূলধন পর্যাপ্ততা ও সুশাসন অত্যন্ত দুর্বল। গত ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ দেখানো হয় ৯ শতাংশ। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নীতি সহায়তা তুলে নিলে খেলাপি ঋণ অনেক বাড়বে।

ফিচের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে নিয়মিত হস্তক্ষেপের কারণে ধারাবাহিকভাবে রিজার্ভ কমছে। আবার অর্থ পাচার অব্যাহত আছে এবং প্রবাসীয় আয় পাঠাতে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেল বেশি ব্যবহার হচ্ছে। জানুয়ারির তুলনায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৫ শতাংশ কমে ১৮ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। সম্প্রতি ডলারের দর নির্ধারণে সংস্কার আনা হলেও পুরোপুরি বাজারভিত্তিক হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য বলেছে, ডলারের দর পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করার আগে ক্রলিং পেগ একটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা। ক্রমাগত বিনিময়হার বৃদ্ধি চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি আরও বাড়াতে পারে।
ফিচ বলেছে, অভ্যন্তরীণ সরবরাহ ঘাটতি, আমদানি নিয়ন্ত্রণ এবং দুর্বল বিনিময়হার ব্যবস্থার কারণে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার ২০০ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানোর পরও চলতি অর্থবছরের গড় মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত আছে সাড়ে ৭ শতাংশ। অবশ্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য সুদহারের বিদ্যমান সীমা তুলে নেওয়ায় মুদ্রানীতির ক্ষেত্রে ভালো ফল দিতে পারে।

samakal

Exit mobile version