- ইকতেদার আহমেদ
- ১৬ নভেম্বর ২০২০
মূর্তি ও ভাস্কর্য উভয়ই বিশেষ্য। মূর্তির সমার্থক হলো প্রতিমা, আকার, আকৃতি, দেহ, চেহারা প্রভৃতি। অপরদিকে ভাস্কর্যের সমার্থক হলো প্রতিমা বা কাষ্ঠ, প্রস্তর, মর্মর, তাম্র, মৃন্ময়, মণি প্রভৃতির মূর্তি। মূর্তির ইংরেজি statue, body, incarnation. embodiment, image, form, shape, figure, idol, appearance প্রভৃতি আর ভাস্কর্যের ইংরেজি sculpture.
ভাস্কর্য মাটি, পাথর, ধাতু প্রভৃতিতে খোদাই বা লেপনের মাধ্যমে দ্বিমাত্রিক অথবা ত্রিমাত্রিক প্রতিনিধিত্বমূলক বা বিমূর্তভাবে উপস্থাপনকৃত শিল্পকর্ম। যে সব ভাস্কর্যে মানুষ অথবা প্রাণীর বহিঃপ্রকাশ থাকে সেগুলোকে বলা হয় মূর্তি, অপরদিকে যে সব শিল্পকর্ম মূর্তিহীন বা ভাবনামূলক বা অনবয়ব সেগুলো হলো ভাস্কর্য। সব মূর্তিকে ভাস্কর্যরূপে আখ্যায়িত করা গেলেও সব ভাস্কর্যকে মূর্তিরূপে আখ্যায়িত করা যায় না।
যে সব মূর্তিকে সামনে রেখে পূজা অর্চনা করা হয় সেগুলোকে বলা হয় দেবমূর্তি। দেবমূর্তি বিভিন্ন দেব-দেবীর কল্পিত অবয়ব। পাথরে খোদাইকৃত বা ধাতব বস্তুর মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত দেবমূর্তি স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা হয়। মাটি লেপনের মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত দেবমূর্তি বিশেষ ধরনের পূজা উপলক্ষে প্রস্তুত করা হয় এবং পূজা সমাপনান্তে তা পুকুর, নদী বা সমুদ্রের পানিতে বিসর্জন দেয়া হয়। আবার ক্ষেত্রবিশেষে দেখা যায়, মাটি দিয়ে প্রস্তুতকৃত দেবমূর্তি বিভিন্ন উপাসনালয়ে বা গৃহে পরবর্তী পূজার আগমন অবধি সংরক্ষণ করা হয়।
একজন ব্যক্তিমানুষের অবিকল অবয়বে প্রস্তুতকৃত মূর্তি ব্যক্তিটির স্মৃতিকে ধারণ এবং শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশে প্রস্তুত করে দেশে-বিদেশের বিভিন্ন স্থান যেমন- সড়কদ্বীপ, ভবনের সামনের চত্বর, ভবনের অভ্যন্তর প্রভৃতিতে স্থাপন করা হয়। ব্যক্তিকে উপলক্ষ করে নির্মিত মূর্তি দেবমূর্তি না হলেও কোনো বিশেষ দিন যেমন- ব্যক্তিটির জন্ম অথবা মৃত্যু দিবস অথবা ব্যক্তিটির অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশে ব্যক্তিমূর্তিতে পুষ্পস্তবক অর্পণপূর্বক কিছু সময় এর সামনে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকার ঘটনা প্রত্যক্ষ করা যায়।
ব্যক্তিমূর্তির প্রতি এভাবে শ্রদ্ধা জানানো অন্যান্য ধর্মে নিষিদ্ধ না হলেও ইসলাম ধর্মে এটি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। আবার অনেক সময় দেখা যায় এরূপ ব্যক্তির প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। ইসলাম যেকোনো প্রতিকৃতিতে এরূপ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো অনুমোদন দেয় না।
আমাদের দেশে ভাস্কর্যের প্রতিনিধিত্বমূলক ও বিমূর্ত উভয় ধরনের উপস্থাপন রয়েছে, যেমন- মুজিবনগরে সাত বীরশ্রেষ্ঠের অবিকল অবয়বের প্রতিনিধিত্বমূলক উপস্থাপনের মাধ্যমে যে ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে তা সমভাবে ভাস্কর্য ও মূর্তি। আবার স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে নির্মিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ একটি স্মারক স্থাপনা ও ভাস্কর্য। এ ভাস্কর্যটিতে সাতটি ত্রিভুজাকৃতির মিনারের শিখর যথা বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্ন, আটান্ন, বাষট্টি, ছেষট্টি, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও একাত্তরের মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয়ের প্রতিটি এক ভাবব্যঞ্জনায় প্রবাহের বহিঃপ্রকাশ দেখানো হয়েছে যা ভাস্কর্যের বিমূর্ত উপস্থাপন। অনুরূপ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মধ্যস্থলের সুউচ্চ কাঠামো স্নেহময়ী মায়ের আনত মস্তক এবং এর দু’পাশের দু’টি করে ক্রমহ্রস্বতর কাঠামো সন্তানের প্রতীক স্বরূপ স্মারক স্থাপনা ও ভাস্কর্যের বিমূর্ত উপস্থাপন।
প্রাণী বলতে প্রাণ আছে এমন জীবকে বোঝায়। পৃথিবীর সব জীবই প্রাণী; তবে মানুষের সাথে প্রাণবিশিষ্ট অপরাপর জীবনের পার্থক্য হলো মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব বা বিবেকবোধ রয়েছে যা অন্য প্রাণীর নেই। কোনো প্রাণীর মূর্তি নির্মাণ করা ইসলামী শরিয়তে কঠিন কবিরা গুনাহ ও হারাম। মূতির নির্মাণ, কেনাবেচা, সংগ্রহ ও সংরক্ষণ ইত্যাদি সব বিষয় ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
অনেকে মূর্তি ও ভাস্কর্যের মধ্যে বিধানগত পার্থক্য দেখাতে চান যা কোনোভাবেই সঠিক নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে মূর্তি ও ভাস্কর্য উভয়ই পরিত্যাজ্য। কুরআন মজিদে এ প্রসঙ্গে যে আয়াতসমূহ রয়েছে তা মূর্তি ও ভাস্কর্য উভয়কেই নির্দেশ করে। এ প্রসঙ্গে কুরআন মজিদের স্পষ্ট নির্দেশ- ‘তোমরা পরিহার করো অপবিত্র বস্তু অর্থাৎ মূর্তিসমূহ এবং পরিহার করো মিথ্যাকথন।’ (সূরা হজ-৩০) এ আয়াতে পরিষ্কারভাবে সব ধরনের মূর্তি পরিত্যাগ করার এবং মূর্তিকেন্দ্রিক সব কর্মকাণ্ড বর্জন করার আদেশ দেয়া হয়েছে।
কুরআন মজিদের অন্য একটি আয়াতে কাফের সম্প্রদায়ের অবস্থান তুলে ধরে বলা হয়েছে- ‘এবং তারা বলেছিল, তোমরা কখনো পরিত্যাগ করো না তোমাদের উপাস্যদের এবং কখনো পরিত্যাগ করো না ওজাদ্দ, ইয়াগুচ, উয়াঊক ও নাসরকে। অথচ এগুলো অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে।’ (সূরা নুহ : ২৩-২৪)
এ আয়াতে কাফের সম্প্রদায়ের দু’টি বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ রয়েছে- ১. মিথ্যা উপাস্যদের পরিত্যাগ না করা এবং ২. মূর্তি ও ভাস্কর্য পরিহার না করা। এখানে মিথ্যা উপাস্যের উপাসনার মতো ভাস্কর্যপ্রীতিও কুরআন মজিদে কাফেরদের বৈশিষ্ট্যরূপে চিহ্নিত। আর এ কারণে এটা যে ইসলামে গর্হিত ও পরিত্যাজ্য তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
কুরআন মজিদে মূর্তি ও ভাস্কর্যকে পথভ্রষ্টতার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে বলা হয়েছে- ‘ইয়া রব, এরা (মূর্তি ও ভাস্কর্য) অসংখ্য মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে।’ (সূরা ইবরাহিম-৩৬)
কুরআন মজিদে যখন একটি বস্তু সুস্পষ্টভাবে পথভ্রষ্টতার কারণ হিসেবে চিহ্নিত তখন এটি ইসলামী শরিয়তে কোনোভাবে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না, এ বিষয়টি প্রতিটি ইসলাম ধর্মাবলম্বীর গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে।
কুরআন মজিদে মূর্তি ও ভাস্কর্যকে বহুবিধ মিথ্যার উৎস হিসেবে চিহ্নিত করে বলা হয়েছে- ‘তোমরা তো আল্লাহর পরিবর্তে উপাসনা করো (অসার) মূর্তির এবং তোমরা নির্মাণ করো মিথ্যা।’ (সূরা আনকাবুত-১৭) মূর্তি ও ভাস্কর্য যেহেতু অসংখ্য মিথ্যার উদ্ভব ও বিকাশের উৎস তাই এ আয়াতে একে ‘মিথ্যা’ বলে উল্লেøখ করা হয়েছে। তাই উপরোক্ত আয়াতগুলো থেকে স্পষ্টত প্রতিভাত মূর্তি ও ভাস্কর্য দুটোই সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাজ্য।
ইসলাম ধর্মমতে, ন্যায়বিচারের প্রতীক হলো দাঁড়িপাল্লা। এটিকে বিবেচনায় নিয়েই আমাদের সর্বোচ্চ আদালতের মনোগ্রাম তথা প্রতীকে দাঁড়িপাল্লার ছবি অঙ্কিত আছে। আর তাই দাঁড়িপাল্লার অন্য কোনোরূপ উপস্থাপন অনাকাক্সিক্ষত, অপ্রত্যাশিত এবং অনভিপ্রেত।
ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম ধর্ম কখনো অপরাপর ধর্মাবলম্বীদের শান্তিপূর্ণভাবে তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রতিপালনে বাধা দেয় না। হজরত মুহাম্মদ সা: কলহে লিপ্ত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি স্থাপন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৪৭টি ধারার একটি সনদ বা সংবিধান প্রণয়ন করেন যা পৃথিবীর ইতিহাসে মদিনা সনদ নামে অভিহিত। এ সনদটির ৪ নম্বর ধারায় উল্লেখ রয়েছে- মুসলিম, খ্রিষ্টান, ইহুদি, পৌত্তলিক ও অন্যান্য সম্প্রদায় ধর্মীয় ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে। কেউ কারো ধর্মীয় কাজে কোনোরকম হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। হজরত মুহাম্মদ সা: তাঁর ওফাতের আগের বছর পবিত্র হজ পালন পরবর্তী যে ভাষণ দেন সেটি ইসলামের ইতিহাসে বিদায় হজের ভাষণ হিসেবে খ্যাত। এ ভাষণটির ৮ নম্বর দফায় হজরত মুহাম্মদ সা: মুসলমানদের উদ্দেশে বলেছেন- ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না, পূর্বের অনেক জাতি এ কারণে ধ্বংস হয়েছে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মুসলিম শাসকদের রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সর্বতোভাবে মদিনা সনদ ও বিদায় হজের ভাষণ অনুসরণে সচেষ্ট থাকতে দেখা যায়। আর এ কারণেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মুসলিম শাসকরা কখনো অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের শান্তিপূর্ণভাবে তাদের ধর্ম পালনে কোনোরূপ অন্তরায় সৃষ্টি হতে দেননি। বাংলাদেশ অভ্যুদয় পরবর্তী রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা অধিষ্ঠিত ছিলেন বা আছেন তাদের কারো ক্ষেত্রে এ বিষয়টির ব্যত্যয় ঘটতে দেখা যায়নি।
বাংলাদেশ ইসলামিক রাষ্ট্র না হলেও এ দেশটির ৯০ ভাগের অধিক মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। বাংলাদেশের সংবিধানে একদিকে যেমন ইসলামকে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম বলা হয়েছে অপরদিকে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র কর্তৃক সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিতের বিষয় উল্লেøখ রয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় ঈদগাহ সুপ্রিম কোর্টের সামনের চত্বরে অবস্থিত। জাতীয় ঈদগাহে মুসলমানদের প্রধান দু’টি ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এ দুটি জামাতে রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারের মন্ত্রি, উচ্চাদালতের বিচারক, ঊর্ধ্বতন বেসামরিক কর্মকর্তা এবং দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ সাধারণ জনমানুষের একটি বড় অংশ উপস্থিত থাকেন। সুপ্রিম কোর্টের সামনে যে স্থানে গ্রিক দেবী থেমিসের মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল সেটি জাতীয় ঈদগাহের উত্তর পার্শ্বে অবস্থিত। জাতীয় ঈদগাহে প্রবেশের সময় মুসল্লিদের এটি দৃষ্টিগ্রাহ্য হওয়া অনেকটা স্বভাবিক ছিল। তাছাড়া ঈদগাহ মাঠে নামাজের উদ্দেশ্যে অবস্থানকালীন কেউ ডানদিকে দৃষ্টিনিবদ্ধ করতে চাইলে অনায়াসেই এটি দৃষ্টিগ্রাহ্য হওয়ার উপক্রম ঘটত। জাতীয় ঈদগাহের প্রবেশপথে ভাস্কর্যের আবরণে এরূপ মূর্তি স্থাপন ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টের উপলক্ষ হিসেবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে বিবেচিত হয়েছিল। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি অভ্যুদয়ের দীর্ঘ ৪৫ বছর পর সুপ্রিম কোর্টের সামনে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে এ মূর্তিটি সংস্থাপন করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এর প্রতীকে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িপাল্লার অবস্থান। আর তাই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনমানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক অন্য কোনোভাবে দাঁড়িপাল্লার উপস্থাপন ধর্মভীরু মুসলমানদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রাচীন গ্রিসে দু’চোখ কালো কাপড় দিয়ে আবৃত্ত বাম হাতে দাঁড়িপাল্লা ও ডান হাতে তলোয়ার ধারণরত দেবী থেমিসের মূর্তিকে রূপকার্থে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে দেখানো হয়েছে। এটি মানুষের অবয়বে সৃষ্ট বিধায় এটি যতটুকু না ভাস্কর্য তার চেয়ে অধিক মূর্তি। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত মূর্তিটিকে মূর্তি বা ভাস্কর্য যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন তা মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কুরআনের উপরোল্লিখিত আয়াতসমূহের বিশ্লেষণে সার্বিক বিবেচনায় দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনমানুষের ধর্মানুভূতিতে কঠোরভাবে আঘাত করে বিধায় সংরক্ষণের অবকাশ ছিল না।
আমাদের দেশের ৯০ শতাংশের বেশি জনমানুষ মুসলিম বিধায় তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন যেকোনো কিছু পরিহার দেশ ও জাতির উন্নতি, সমৃদ্ধি, শান্তি ও শৃঙ্খলার জন্য অত্যাবশ্যক।
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিশ্লেষক
E-mail: iktederahmed@yahoo.com