(৪ সেপ্টেম্বর ইংরেজিতে প্রথম প্রকাশিত।)
এক মাস আগে নেত্র নিউজ এর প্রতিবেদনে উন্মোচিত হয় যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান বা সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ভাই তোফায়েল আহমেদ জোসেফ নিজের মিথ্যা পরিচয় তৈরি করে, সেই মিথ্যা নামের অধীনে জাতীয় পরিচয় পত্র ও পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছে।
ভুয়া পরিচয়পত্রে তার নতুন নাম ছিল তানভির আহমেদ তানজিল। নেত্র নিউজ তার নতুন জাতীয় পরিচয় পত্র ও পাসপোর্ট এর অনুলিপি হাতে পায়ে। এ কাগজগুলোতে তার নতুন নাম তার ছবি সহ রয়েছে।
২০০০ সালে সংঘটিত খুনের অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত জোসেফ ২০১৮ সালের মে মাসে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা নিয়ে জেল থেকে ছাড়া পায়। ছাড়া পাবার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সে এসকল কাগজ জোগাড় করে ফেলে।
এ ধরনের নকল কাগজ তৈরি করা পাসপোর্ট অফেন্সেস অ্যাক্ট ১৯৫২, এনআইডি রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট ২০১০, এবং পিনাল কোড ১৮৬০ এর অধীনে ফৌজদারি অপরাধ। নকল পাসপোর্ট দিয়ে ভ্রমণ করা বিশেষভাবে গুরুতর অপরাধ।
প্রতিবেদনের উপস্থাপিত তথ্যে কোন খুঁত ছিল না। কিন্তু এ খবর প্রকাশিত হবার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কতৃপক্ষ কি ব্যবস্থা নিয়েছে? কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি। কোন ধরনের কোন তদন্তের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। জোসেফের এ সকল কর্মকান্ড শুধু কারাদণ্ড যোগ্য অপরাধ-ই নয়, বরং এর ফলে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট প্রদান পদ্ধতির সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উত্থিত হয়।
সেনাপ্রধানের ভাই কি তবে আইনি তদন্তের ঊর্ধ্বে? অবস্থাদৃষ্টে তাই মনে হয় নিশ্চয়ই। বিশেষত সেনাবাহিনীর ক্ষমতা এবং সেনাপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক (স্বাভাবিকভাবেই যা দৃঢ় বলে ধারণা করা যায়), তার আলোকে এমন মনে হওয়াই স্বাভাবিক। সেনাপ্রধান এর কাছে এ বিষয়ে জবাবদিহি দাবি করার চেয়ে এড়িয়ে যাওয়াই প্রধানমন্ত্রীর কাছে অধিক পছন্দনীয় হবে।
সেনাবাহিনীর সর্বব্যাপী আধিপত্যের ফলে বাংলাদেশের কোন সংবাদ মাধ্যমও এ খবর প্রকাশ করে না। লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব:) সারওয়ার্দীর সাক্ষাৎকার এর প্রেক্ষিতে সংবাদমাধ্যমের নিরবতার বিষয়ে লেখা প্রকাশ করেছে নেত্র নিউজ। কোন সংবাদ মাধ্যমে এ সকল বিষয়ে খবর প্রকাশের সাহস করবেনা। সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এর একটি সংবাদমাধ্যম বিভাগ রয়েছে, যাদের কাজ হল এটা সুনিশ্চিত করা যেন সকল সংবাদপত্র ও টিভি ভালোভাবে জানে কোন বিষয়ে খবর প্রকাশ করা যাবে এবং কোন বিষয়ে যাবে না। সেনাপ্রধানের আপন ভাই পাসপোর্ট এবং জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান পদ্ধতি কে যথেচ্ছা ব্যবহার করে নকল পরিচয় পত্র তৈরি করে নিয়েছে এ খবর নিঃসন্দেহে যা প্রকাশ করা যাবে না তার আওতায় পরে।
প্রধানমন্ত্রীসহ বাংলাদেশের যেকোনো বেসামরিক কর্তৃপক্ষ নিজেদের ক্ষমতাকে এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আটক করাকে বৈধতা দেবার জন্য দুর্নীতিবিরোধী বক্তৃতা দিতে ভালোবাসেন। কিন্তু যখন দুর্নীতি নিজেদের ঘরে দেখা দেয় তখন সরকারকে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। ব্যতিক্রম হলো যখন পদক্ষেপ গ্রহণ করলে কোন রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়া যাবে (ক্যাসিনো দুর্নীতি তদন্তে যেমন হয়েছিল), বা যখন অস্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বা দুর্নীতির সংবাদ মাধ্যমে উন্মোচিত হয়ে যাবার ফলে তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়।
নেত্র নিউজ এই ঘটনার উপর নজর রাখবে এবং ক্রমাগত কর্তৃপক্ষকে স্মরণ করিয়ে দেবে যে জোসেফ এর কর্মকান্ড তদন্ত করে দেখার সুস্পষ্ট দায়িত্ব তাদের রয়েছে।
//DB