Site icon The Bangladesh Chronicle

‘মায়ের ডাক’–এর মানববন্ধন: ‘ঈদের আগেই বাবাকে ফিরিয়ে দিন’

 আমার দেশ
২৬ জুন ২০২৩

‘মায়ের ডাক’ এর আয়োজনে মানববন্ধনে উপস্থিত হয়েছিলেন গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা

নিজস্ব প্রতিনিধি

মানববন্ধনে শিশুরা বলল ‘ঈদের আগেই আমাদের বাবাকে ফিরিয়ে দিন। বাবার হাত ধরে আমরা ঈদগাহে যেতে চাই। বাবার সঙ্গে স্কুলে যেতে চাই।’

রোববার (২৫শে জুন) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ এই মানববন্ধনের আয়োজন করে। সেখানে দাঁড়িয়ে শিশুরা এই দাবি জানায়। আগামীকাল ২৬শে জুন জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক নির্যাতনবিরোধী দিবস। দিবসটিকে সামনে রেখেই রোববার এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

মানববন্ধনে মায়েরা চাইলেন তাঁদের গুম হয়ে যাওয়া সন্তানকে ফিরে পেতে। স্ত্রী বললেন, ‘অন্তত এটুক জানান আমার স্বামী আর জীবিত নেই।’ গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়ে বললেন, ‘আর কীভাবে বললে আপনারা আমাদের কষ্ট বুঝবেন? কার কাছে আমরা আমাদের যন্ত্রণার কথা বলব? কোথায় প্রতিকার পাব?’

মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী আফরোজা আক্তারের সভাপতিত্বে এই মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, তাঁদের পরিবারের কেউ গুম হয়েছেন ৫ বছর, ৭ বছর, ১০ বছর এমনকি এক যুগ পেরিয়ে গেছে। প্রিয়জনকে ফিরে পাননি বলে চোখের পানি ফেলে তাঁরা দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের প্রিয়জনেরা অপরাধী হলে আইনি প্রক্রিয়ায় তাঁর বিচার করুন।’ শিশুরা কেঁদে কেঁদে বলেছে ‘ঈদে এখন আর আমাদের কোনো আনন্দ নেই। এবার ঈদের আগেই আমাদের বাবাকে ফিরিয়ে দিন।’

মানববন্ধনে কান্নায় ভেঙে পড়ে বাবাকে ফিরে চেয়েছে ২০১৪ সাল গুম হওয়া চঞ্চল হোসেনের ছেলে ১০ বছরের আহাদ হোসেন। ২০১৬ সালে গুম হওয়া আনোয়ার হোসেনের মেয়ে রাইসা, ২০১৩ সালে গুম হওয়া কাওসার হোসেনে মেয়ে লামিয়া আক্তার, ২০১৪ সালে গুম হওয়া মফিজুল ইসলামের ছেলে সহিদুল ইসলাম, ২০১৯ সালে গুম হওয়া আনিস ইসলামের মেয়ে ইনাশা সোহেল হোসেনের মেয়ে শাফা হোসেন, সাজেদুল ইসলামের মেয়ে অররা ইসলাম, ২০১৫ সালে গুম হওয়া নুর আলমের স্ত্রী রিনা আলম, ২০১৯ সালে গুম হওয়া ইসমাইল হোসেনে স্ত্রী নাসরিন জাহান, ২০১৩ সালে গুম হওয়া মাহবুব হাসানের ভাই জাহিদ খান।

নুর আলমের স্ত্রী রিনা আলম অভিযোগ করেন তাঁদের বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকেরা কয়েক দফায় গিয়ে জানতে চান নুর আলম কোথায়? তিনি বলেন ‘আমাদের প্রতি এই নিষ্ঠুর আচরণের করা হচ্ছে কেন?’ অনেকে বলেন গুম হওয়া মানুষটির খোঁজ নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের কাছে গেল তাদের বলা হয় তিনি বিদেশ চলে গেছেন, অবৈধভাবে বিদেশ যাওয়ার সময় সাগরে ডুবে মরেছেন। এভাবে তাদের উপহাস করা হচ্ছে।’

মায়ের ডাকের অন্যতম সমন্বয়কারী সানজিদা আক্তার জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে গুম–খুনের সঙ্গে যুক্তদের অন্তর্ভুক্ত না করার আহ্বান জানান। তিনি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষাবিষয়ক প্রতিনিধিদের গুম-খুনের শিকার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে তাদের প্রতি যে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে, তার প্রতিকারে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি আসন্ন ঈদুল আজহার আগে গুম হওয়া এসব মানুষকে তাঁদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জোরালো দাবি করেন।

মানবাধিকার কর্মী নুর খান সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, এক যুগের বেশ সময় ধরে আমরা বলে আসছি এই গুম হওয়া মানুষের পরিবারগুলো দুর্বিষহ যন্ত্রণায় অমানবিক জীবন যাপন করছে। এখন তাদের কাছেই গুমের তথ্য চেয়ে তাদের নিদারুণ উপহাস করা হচ্ছে। যেসব মানবাধিকার কর্মী ও সংগঠন এসব পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছে তাদের নানাভাবে চাপের মধ্যে রাখা হচ্ছে। এই অবস্থার অবসান হওয়া দরকার।

মানববন্ধন সঞ্চালনা করেন মায়ের ডাকের অপর সমন্বয়কারী মনজুর হোসেন।

Exit mobile version