ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০-এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম আজ রোববার এ রায় দেন। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মীর আহমেদ আলী সালাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের দায়ে পি কে হালদারকে ২২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া মানি লন্ডারিংয়ের দায়ে পি কে হালদারের ১৩ সহযোগীর প্রত্যেককে সাত বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন।
পি কে হালদারের বিরুদ্ধে আরও ৩৫টি মানি লন্ডারিং মামলার তদন্ত চলছে।
রায় ঘোষণার আগে কারাগারে থাকা পি কে হালদারের মামাতো ভাই শঙ্খ ব্যাপারী, ঘনিষ্ঠ সহযোগী সুকুমার মৃধা, অনিন্দিতা মৃধা ও অবন্তিকা বড়ালকে আদালতে হাজির করা হয়।
পলাতক অন্য আসামিরা হলেন পি কে হালদারের মা লীলাবতী হালদার, ভাই প্রীতিশ কুমার হালদার, সহযোগী অমিতাভ অধিকারী, পূর্ণিমা রানী হালদার, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, রাজীব সোম, সুব্রত দাস, অনঙ্গ মোহন রায় ও স্বপন কুমার মিস্ত্রি।
এর আগে ৪ অক্টোবর এই মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়। আজ রোববার রায় ঘোষণার দিন ঠিক করেন।
গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর পি কে হালদারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। তিনিসহ এই মামলার ১০ আসামি পলাতক, কারাগারে রয়েছেন ৪ জন।
দুদকের দেওয়া অভিযোগপত্রের তথ্য অনুযায়ী, পি কে হালদার নামে-বেনামে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৯৩৩ কোটি টাকার জমি, ফ্ল্যাট ও হোটেল কিনেছেন।
দেশের চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পি কে হালদার নামে-বেনামে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বের করে নেন। এই টাকা আর ফেরত না আসায় প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। প্রতিষ্ঠান চারটি হলো ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)।
টাকা বের করার আগে শেয়ার কিনে এসব প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন পি কে হালদার। এই আর্থিক কেলেঙ্কারি জানাজানি হয় ২০২০ সালের শুরুতে। আর পি কে হালদার দেশ ছাড়েন ২০১৯ সালের শেষ দিকে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা থেকে পি কে হালদারসহ পাঁচজনকে গত বছরের মে মাসে গ্রেপ্তার করে দেশটির আর্থিক দুর্নীতিসংক্রান্ত তদন্তকারী সংস্থা ইডি। পি কে হালদার এখন ভারতের কারাগারে। তাঁকে হস্তান্তরের জন্য দিল্লিকে অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা।
পি কে হালদারের পলাতক অবস্থায় ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করে দুদক।
বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও কানাডীয় ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্যের বরাত দিয়ে দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, পি কে হালদার ২০১২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে তাঁর ভাই প্রীতিশ হালদারের কাছে ১ কোটি ১৭ লাখ ১১ হাজার ১৬৪ কানাডীয় ডলার পাচার করেছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় তা প্রায় ৮০ কোটি টাকা।
পি কে হালদারের জন্ম পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার দিঘিরজান গ্রামে। বাবা প্রয়াত প্রণনেন্দু হালদার ও মা লীলাবতী হালদার। তাঁর মা ছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
পি কে হালদার ও তাঁর ভাই প্রীতিশ কুমার হালদার—দুজনই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরে দুজনই ব্যবসায় প্রশাসনের আইবিএ থেকে এমবিএ করেন। পাশাপাশি চার্টার্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট (সিএফএ) সম্পন্ন করেন পি কে হালদার।
সূত্র : প্রথম আলো