Site icon The Bangladesh Chronicle

মহামারি ঠেকানোর মূল কাজে কেন পিছিয়ে

করোনার টিকা

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০: ২৬

দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে করোনার টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে করোনার টিকাদান শুরু হয়। গতকাল সোমবার টিকাদানের এক বছর পূর্ণ হলো। এই সময়ে প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছে ৯ কোটি ৯১ লাখ বা ৫৭ শতাংশ মানুষ। পূর্ণ দুই ডোজ পেয়েছে সাড়ে ৬ কোটি বা ৩৭ শতাংশ মানুষ। এক বছরের কার্যক্রমের মূল্যায়নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকাবিষয়ক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা টিকাদানে ভালো করেছি। টিকাদানের সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করে টিকার প্রাপ্যতার ওপর। শুরুর দিকে টিকার প্রাপ্যতায় কিছু সমস্যা ছিল, তা কাটিয়ে উঠেছি।’ অন্যদিকে গত জানুয়ারি মাসের মৃত্যু নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য জানাচ্ছে, মৃত ব্যক্তিদের ৮০ শতাংশেরই করোনার টিকা নেওয়া ছিল না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান সায়েদুর রহমান বলেন, এখন যাঁরা মারা যাচ্ছেন, তাঁদের বয়স বেশি, তাঁদের টিকার আওতায় আনতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। ঝুঁকিগ্রস্ত সব মানুষকে টিকার আওতায় আনার চেষ্টা করা হয়নি। উদ্দেশ্যহীনভাবে বয়সসীমা কমানো হয়েছে বারবার। ইপিআইয়ের মাধ্যমে মা ও শিশুদের টিকাদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সুখ্যাতি আছে। ইপিআইয়ের সেই সক্ষমতা করোনার টিকার কাজে লাগাতে পারল না বাংলাদেশ।

করোনার টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপের চেয়েও পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। শুরুতে টিকার জন্য ভারতনির্ভর থাকা, চুক্তি অনুযায়ী সেরাম ইনস্টিটিউট টিকা সরবরাহ না করার—এসব সমস্যার মধ্যেও উপহারের, অনুদানের ও কেনা বাবদ দেশে টিকা এসেছে মোট ২৭ কোটি ৬৭ লাখ ২৩ হাজার। গত কয়েক মাসের হিসাবে দেখা যায়, স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে সব সময় কয়েক কোটি টিকা থাকছে। যেমন গত রোববার মজুত ছিল ১১ কোটির বেশি টিকা। কিন্তু মজুতের তুলনায় কেন টিকা কম দেওয়া হচ্ছে? জনস্বাস্থ্যবিদেরাই বলছেন, অল্প সময়ে বেশি মানুষকে টিকা দিলে সুফল বেশি পাওয়া যায়, দীর্ঘ সময় ধরে টিকা দিলে সেই ফল পাওয়া যায় না। বর্তমান পরিস্থিতি তাই প্রমাণ করছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বক্তব্য, মানুষ এখন টিকাকেন্দ্রে টিকা নিতে কম আসছে। বোঝা যায় মানুষকে সেভাবে টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করা যায়নি। ভাসমান মানুষ, শ্রমিক, দোকানি, বস্তিবাসী, চরের বাসিন্দাদের কথা আগেই ভাবার দরকার ছিল। জনসংখ্যার বিশাল একটা অংশকে পিছিয়ে রেখে টিকাদানে সফলতার কথা কী করে ভাবল সরকার? বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে শুধু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সংক্রমণমুক্ত থাকা কী করে সম্ভব। ফলে সব মানুষকে টিকার আওতায় আনা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এখন টিকা মজুত রেখে এর জন্য আর কালক্ষেপণ নয়। টিকা দিতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে স্বাস্থ্য বিভাগকে আরও তৎপর হতে হবে।

 

Exit mobile version