Site icon The Bangladesh Chronicle

মরক্কোর শক্তি ১৪ ইউরোপিয়ান ফুটবলার

মরক্কোর শক্তি ১৪ ইউরোপিয়ান ফুটবলার – ছবি : সংগৃহীত

রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায়। যদিও প্রতি ম্যাচেই তারা তুমুল লড়েছিল। স্পেনের সাথে তো ২-২ গোলে ড্র করা। সেই মরক্কো এখন আফ্রিকার গর্ব। মুসলিম বিশ্বের অহংকার। আরব জাতির প্রেরণা। প্রথম আরব এবং আফ্রিকান দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে উত্তর আফ্রিকান এই দেশ। আজ ফ্রান্সকে হারালেই হয়ে যাবে আরেক ইতিহাস। প্রথম মুসলিম, আরব এবং আফ্রিকান দেশ হিসেবে খেলবে ফাইনালে।

একমাত্র ক্যামেরুনের স্যামুয়েল ইতো ছাড়া কেউ আশার বাণী শোনায়নি রাজা ৬ষ্ঠ মোহাম্মদ শাসিত এই দেশকে নিয়ে। বার্সেলোনায় খেলা ক্যামেরুনের এই স্ট্রাইকার বিশ্বকাপের আগে ভবিষ্যত বাণী করেছিলেন, ‘কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলবে মরক্কো।’ তার সে অনুমান সত্য হতে আর এক ম্যাচ বাকি।

কিন্তু কিভাবে মরক্কো এই সাফল্য পেল ২০২২ এর এই আসরে? আসলে এর নেপথ্য হলো দলটির ইউরোপে জন্ম নেয়া এবং ইউরোপের লিগে খেলা ফুটবলাররা। কাতার বিশ্বকাপের মরক্কো দলের ২৬ ফুটবলারের মধ্যে ১৪ জনেরই জন্ম ইউরোপে। ফুটবলে হাতে খড়িটাও সেখানে। এবার এই ইউরোপে জন্ম নেয়া ফুটবলারের হাতেই সর্বনাশ হয়েছে স্পেন, কানাডা, বেলজিয়াম ও পর্তুগালের।

এবারের বিশ্বকাপে ফ্রান্সকে গ্রুপ পর্বে হারিয়েছে তিউনিসিয়া। এই আফ্রিকান দলেও ইউরোপে জন্ম নেয়া ১২ ফুটবলারের মধ্যে ফ্রান্সে দুনিয়ার আলো দেখেছেন ১০ ফুটবলার। দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলা সেনেগাল দলের ৯ ফুটবলার পৃথিবীতে আসেন ফ্রান্সের মাটিতে।

৩৩ লাখ মরোক্কানের বাস বিদেশে। এই পরিবারগুলোতে জন্ম নেয়া ছেলেরাই এখন দেশটির ফুটবলের প্রাণ শক্তি। দলটিতে তাই সাত দেশের প্রতিনিধিত্ব। ১০ লাখের বেশি মরক্কোর নাগরিকের বসবাস ফ্রান্সে। মরক্কোর অধিনায়ক রোমাইন সিসের জন্ম ফ্রান্সের লিঁওতে। উইংগার সাফিয়ানো বাউফল জন্মগ্রহণ করেন ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে।

সাত লাখ ১২ হাজার মরক্কোর নাগরিকের স্থায়ী আবাস স্পেনে। রাইট ব্যাক আশরাফ হাকিমি জন্মেছেন স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে। রিয়াল মাদ্রিদের অ্যাকাডেমিতে ফুটবলে হাতেখড়ি তার। এখন তিনি খেলছেন ক্লাব ফুটবলে মেসি, নেইমারের সঙ্গী হয়ে প্যারিস সেন্ট জার্মেইতে (পিএসজি)। গোলরক্ষক মুনির মোহামেদীর জন্মও স্পেনে।

অপর ইউরোপিয়ান দেশ নেদারল্যান্ডস। টোটাল ফুটবলের জনক এই দেশে বসবাস করছে এক লাখ ৮০ হাজার মরোক্কান। কোচ ওয়ালিদ রেগরিগির বিশ্বকাপ দলে এই ডাচল্যান্ডে জন্ম নেয়া ফুটবলার হলেন চারজন। এরা হলেন হাকিম জিয়াচ, সোফিয়ান আমারাবাত, নাউসের মাজরাউই এবং জাকারিয়া আবুখাহলাল।

দু’লাখ ২৬ হাজার মরক্কোর নাগরিক এখন বেলজিয়ামের নাগরিক। এই ইউরোপিয়ান দেশে জন্ম নেয়া চার ফুটবলার এখন কাতার বিশ্বকাপে মরক্কো জাতীয় দলে। এরা হলেন আনাস জারোরে, সেলিম আমাল্লা, ইলিয়াস চায়োর ও বিলাল এল খানোস। মরক্কো দলে ইউরোপে জন্ম নেয়া ফুটবলারের সংখ্যা ১৫ হতো যদি আমিন হারিত হাঁটুর ইনজুরির জন্য ছিটকে না পড়তেন।

স্পেনের বিপক্ষে দুই টাইব্রেকার ঠেকানো ইয়াসিন বোনোর জন্ম কানাডার মন্ট্রিলে। পরে পিতামাতার সাথে চলে আসেন মরক্কোতে। ৭৪ হাজার মরোক্কানের বাস কানাডায়। চার লাখ ৪৫ হাজার মরোক্কানের বাস ইতালীতে। সেই ইতালিতে জন্ম ওয়ালিদ চেদরিয়া।

এদের মধ্যে আনাস জারোরে বেলজিয়ামের বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে খেলেছেন। ২০২১ ও ২০২২ তিনি ছিলেন বেলজিয়াম অনূর্ধ্ব ২১ ও ২৩ দলে। হাকিম জিয়াস ছিলেন নেদারল্যান্ডস যুব দলের খেলোয়াড়। ২০১৬ সালে ইউরো বাছাই পর্বে তিনি ডাচ সিনিয়র জাতীয় দলে ডাক পান লাটভিয়ার বিপক্ষে খেলার জন্য। শেষ পর্যন্ত ইনজুরি তাকে মাঠে নামতে দেয়নি। আশরাফ হাকিমি স্পেন যুবদলে ডাক পান। ক্যাম্পেও ছিলেন কয়েকদিন। পরে চলে আসেন।

এরা কেউই তাদের পিতামাতার ভূমিকাকে ভুলতে পারেননি। সিনিয়র টিমে নিজ দেশেরই প্রতিনিধিত্ব করছেন। এই ভূমিকাকে ভুলতে না পারার সুফলই পাচ্ছে মরক্কো জাতীয় দল। আজ রাদুয়ানো সিসে, সাফিয়ানো বাউফলরা যদি হারাতে পারেন জন্ম নেয়া মাতৃভূমি ফ্রান্সকে তাহলে অন্য উচ্চতায় যেমন তারা যাবেন, তেমনি মরক্কোর ফুটবলও। স্পেনের বিপক্ষে বদলী হিসেবে খেলা ওয়ালিদ চেদরিয়া জানান, আমিতো আমার দেশের সাথে বেঈমানী করতে পারি না। খুবই গর্ব বোধ করছি নিজ দেশের জাতীয় দলের জার্সি গায়ে খেলতে পেরে।

কাতার বিশ্বকাপে ইউরোপে জন্ম নেয়া ফুটবলারের সংখ্যা রাশিয়ায় খেলা দলের চেয়ে কম। ২০১৮ বিশ্বকাপে মরক্কো জাতীয় দলে ইউরোপে খেলা ফুটবলার ছিল ১৭জন।

তাই মরক্কোর এই সাফল্যের উচ্ছ্বাস প্রতিধ্বনিত হচ্ছে রাবাত, কাসাব্লাঙ্কা, মারাক্কাস থেকে শুরু করে লিঁও, ব্রাসেলস, মাদ্রিদ, মনট্রিল, রোম ও মিলানে।

Exit mobile version