Site icon The Bangladesh Chronicle

ভারত-শ্রীলঙ্কার চেয়ে বাংলাদেশে এয়ারলাইনসের ভাড়া বেশি

 

হামিদুর রহমানআকাশপথে বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে বিপুল হারে ভাড়া বাড়লেও তা আর কমছেই না। এয়ারলাইনস কোম্পানিগুলো এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় সর্বোচ্চ ভাড়া নিচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। সাপ্লাই কম ও যাত্রীর চাপ বৃদ্ধির অজুহাতে যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে উড়োজাহাজ প্রতিষ্ঠানগুলো।

ডলার সংকট, টিকিট কালোবাজারিসহ দক্ষ তদারকি না থাকায় থেকে উড়োজাহাজ ভাড়া কমছে না। বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে যেতে উড়োজাহাজের টিকিটের দাম দুই বছরের বেশি সময় থেকেই অস্বাভাবিক বেড়েছে। তবে ডলার সংকটের চেয়েও সংঘবদ্ধ চক্রের (সিন্ডিকেট) কারসাজিকেই দায়ী করেছেন প্রবাসীরা। একটি ফ্লাইটের শিডিউল ঘোষণার কয়েক মিনিটের মধ্যেই টিকিট শেষ হয়ে যায়। বেশিরভাগ টিকিট সিন্ডিকেটের কবজায় রাখা হয় বলেও অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। তারা বলেন, বাজেটের পর ট্র্যাভেল ট্যাক্স আরও বাড়ছে। ফলে যাত্রীদের ব্যয় আরও বাড়ছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ঢাকা থেকে দুবাই যেতে (একমুখী) এমিরেটস এয়ারলাইরনসে ভাড়া গুনতে হচ্ছে প্রায় ৫৬ হাজার টাকা। এদিকে কলকাতা থেকে একই এয়ারলাইনসে দুবাই যেতে (একমুখী) খরচ হচ্ছে মাত্র ২২ হাজার টাকা। আবার শ্রীলঙ্কা থেকে একই এয়ারলাইরনে দুবাই যেতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৩১ হাজার টাকা টাকা। আবার কাতার এয়ারওয়েজে ঢাকা থেকে দুবাই যেতে গুনতে হচ্ছে প্রায় ৫৮ হাজার টাকা, ইন্ডিয়া থেকে কাতার এয়ারলাইনসে দুবাই যেতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৫৩ হাজার টাকা, শ্রীলঙ্কা থেকে কাতার এয়ারওয়েজে দুবাই যেতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৪৪ হাজার টাকা।

এদিকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইরনে ঢাকা থেকে দুবাই যেতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৪৪ হাজার টাকা, কলকাতা থেকে এয়ার ইন্ডিয়া এয়ারলাইনসে দুবাই যেতে খরচ হচ্ছে মাত্র ১২ হাজার টাকা, শ্রীলঙ্কা থেকে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনসে  দুবাই যেতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। ঢাকা থেকে একই গন্তব্য (দুবাই) যেতে ফ্লাই দুবাই এয়ারলাইনসে খরচ হচ্ছে ৫১ হাজার টাকা, কলকাতা থেকে ফ্লাই দুবাইয়ে দুবাই যেতে খরচ হচ্ছে ২০ হাজার টাকা, আর শ্রীলঙ্কা থেকে ফ্লাই দুবাইয়ে দুবাই যেতে খরচ হচ্ছে প্রায় ২৭ হাজার টাকা। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে দুবাই যেতে ইন্ডিয়া ও শ্রীলঙ্কার তুলনায় কয়েকগুণ ভাড়া বেশি গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের।

এদিকে ঢাকা থেকে সৌদি-আরব যেতে (একমুখী) এমিরেটস এয়ারলাইনসে গুনতে হচ্ছে প্রায় ৮৬ হাজার টাকা, কলকাতা থেকে সৌদি-আরব যেতে একই এয়ারলাইনসে গুনতে হচ্ছে প্রায় ৪৭ হাজার টাকা, শ্রীলঙ্কা থেকে এমিরেটস এয়ারলাইনসে সৌদি-আরব যেতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৬১ হাজার টাকা। একই গন্তব্য ঢাকা থেকে কাতার এয়ারওয়েজে সৌদি-আরব যেতে গুনতে হচ্ছে প্রায় ৮৮ হাজার টাকা, কলকাতা থেকে সৌদি-আরব যেতে কাতার এয়ারওয়েজে গুনতে হচ্ছে প্রায় ৫২ হাজার টাকা, শ্রীলঙ্কা থেকে সৌদি-আরব যেতে কাতার এয়ারওয়েজে গুনতে হচ্ছে প্রায় ৬৭ হাজার টাকা।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে ঢাকা থেকে সৌদি-আরব যেতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৫৫ হাজার টাকা, কলকাতা থেকে সৌদি-আরব যেতে এয়ার ইন্ডিয়া এয়ারলাইনসে গুনতে প্রায় ২৮ হাজার টাকা, শ্রীলঙ্কা থেকে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনসে সৌদি-আরব যেতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৫৮ হাজার টাকা।

ঢাকা থেকে ফ্লাই দুবাইয়ে সৌদি-আরব যেতে গুনতে হচ্ছে প্রায় ৫৯ হাজার টাকা, কলকাতা একই এয়ারলাইনসে একই গন্তব্য যেতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৩৪ হাজার ৬০০ টাকা, শ্রীলঙ্কা থেকে একই গন্তব্য ফ্লাই দুবাইয়ে খরচ হচ্ছে ৪৫ হাজার ৭৪১ টাকা।

কয়েকটি চক্র কাজ করার পাশাপাশ কিছু এজেন্সি এয়ারলাইনগুলোকে অভিবাসী শ্রমিকদের পাসপোর্টের ফটোকপি দেখিয়ে তাদের থেকে গ্রুপ টিকেট ক্রয় করে এর ঘাটতি তৈরি করে বিজনেস করছে। এরপর তারা টিকেটে থাকা নাম পরিবর্তন করে সেগুলো উচ্চ দামে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

বিশেষ করে মধ্যেপ্রাচ্যর দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরবে সব সময় যাত্রী বেশি থাকে। যেখানে হাজিরা বছরের বিভিন্ন সময়ে সময়ে হজ্বে যায়। আর এই রুটে সরকার হজের সময় অন্য এয়ারলাইনসগুলোকে সুযোগ না দিয়ে প্রতিযোগী এয়ারলাইনস না থাকায় বিমান একা যাত্রীবহন করায় টিকিটের দামও আকাশ চুম্বি হয়ে যায়।

এদিকে এমিরেটস এয়ারলাইনসে ঢাকা থেকে কুয়েত যেতে যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে (একমুখী) ৫২ হাজার টাকা, কলকাতা থেকে এমিরেটস এয়ারলাইনসে কুয়েত যেতে খরচ হচ্ছে ৪৫ হাজার টাকা, শ্রীলঙ্কা থেকে কুয়েত যেতে এমিরেটস এয়ারলাইনসে খরচ হচ্ছে ৪৮ হাজার।

কাতার এয়ারওয়েজে ঢাকা থেকে কুয়েত যেতে খচর হচ্ছে প্রায় ৫১ হাজার টাকা, কলকাতা থেকে কুয়েত যেতে কাতার এয়ারওয়েজে যেতে খরচ হচ্ছে ৪৬ হাজার টাকা, শ্রীলঙ্কা থেকে কাতার এয়ারওয়েজে কুয়েত যেতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৫২ হাজার টাকা। আবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস থেকে ঢাকা হতে কুয়েত যেতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৪১ হাজার টাকা, কলকাতা থেকে এয়ার ইন্ডিয়ায় কুয়েত যেতে খরচ হচ্ছে প্রায় ২২ হাজার টাকা, শ্রীলঙ্কা থেকে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনসে কুয়েত যেতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা।

ঢাকা থেকে ফ্লাই দুবাই এয়ারলাইনসে কুয়েত যেতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৬৩ হাজার ৫০০ টাকা, কলকাতা থেকে ফ্লাই দুবাই এয়ারলাইনসে কুয়েত যেতে খরচ হচ্ছে ২৯ হাজার টাকা, শ্রীলঙ্কা থেকে ফ্লাই দুবাই এয়ারলাইনসে কুয়েত যেতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৩৮ হাজার টাকা।

তবে ভাড়া বৃদ্ধির পেছনে যেসব কারণ শনাক্ত করা গেছে, এগুলো তার মধ্যে অন্যতম হলোÑ বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইটের সংখ্যা কমানো, কালোবাজারে উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা একটি টিকেট সিন্ডিকেট এবং বাংলাদেশ বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণের ঘটনা।

জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের (বিমান) ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজিম শেয়ার বিজকে বলেন, “মূলত চাহিদা বেশি থাকায় ভাড়া বেশি।  আবার আমাদের তুলনায় ইন্ডিয়ার দূরত্ব কম, তাই ভাড়াও কম। এখানে বিমান চাইলে ভাড়া কমাতেও পারে না, বাড়াতেও পারে না। আর এখন তো সব কিছু অনলাইনেই আপডেটেড।

অনেক যাত্রী বাড়তি ভাড়া থেকে বাঁচতে ট্রানজিট নিচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী প্রবাসী শ্রমিকরা। অনেক ভাড়া বৃদ্ধির কারণে ছুটি পেয়েও দেশে আসতে পারছেন না বলে জানান প্রবাসীরা।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যমতে, চলতি বছরের শুরুর দুই মাসে দেশের বাইরে গেছে অত্যন্ত ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক; যার বেশিরভাগ গেছেন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।

এয়ারলাইনসগুলো বলছে, পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তাদের টিকেটের দাম সমন্বয় করতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও ভ্রমণ ম্যাগাজিন ‘বাংলাদেশ মনিটর’-এর সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম  শেয়ার বিজকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইটের চাহিদাবাড়ায় ভাড়ার উপর প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যর দেশগুলোয়। ভারতে ও শ্রীলঙ্কার সাথে তুলনা করতে গেলে ওই দুই দেশে ফ্লাইট সংখ্যা বেশি হওয়ায় ভাড়াও কম। তবে বিমান বাংলাদেশ দুর্বল হওয়ায় ফ্লাইট সংখ্যা কম। ফলে ভাড়াও বেশি।”

ট্র্যাভেলগগুলোর একটি চক্র টিকিটের ‘কৃত্রিম সংকট’ সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই সংকটে টিকিটের দাম বেড়েছে বলে জানান খাত সংশ্লিষ্টরা।

তারা আরও জানান, ‘কয়েকটি এজেন্সি এয়ারলাইনগুলোকে অভিবাসী শ্রমিকদের পাসপোর্টের ফটোকপি দেখিয়ে তাদের থেকে গ্রুপ টিকেট কিনে, এর ঘাটতি তৈরি করছে। এরপর তারা টিকেটে থাকা নাম পরিবর্তন করে সেগুলো উচ্চ দামে বিক্রি করছে।”

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের জেনারেল ম্যানেজার (মার্কেটিং সাপোর্ট অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন) কামরুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে জেট ফুয়েলের দাম বাড়তে শুরু করে। ওই মাসে প্রতি লিটার জ্বালানির দাম ছিল ৪৬ টাকা। এখন সেটা ১১৮ টাকা। এখন কেউ যদি প্রি-কভিড সময়ের সঙ্গে বর্তমানের ভাড়া হিসেব করে, এটা কী সম্ভব।

তিনি বলেন, উচ্চ চাহিদাও ভাড়া বাড়ার আরেকটি কারণ। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার সিট ক্যাপাসিটি এবং ফ্লাইটের সংখ্যা না বাড়াতে পারবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত ভাড়া বেশি থেকে যাবে।”

Exit mobile version