ভারতে ২০০০ রুপির ব্যাংক নোট বাতিলের কারণে দেশটির ব্যাংক–ব্যবস্থায় তারল্য বাড়বে। তাতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে ইকোনমিক টাইমস।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার তথ্যানুসারে, চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ভারতের বাজারে প্রচলিত ২০০০ রুপির ব্যাংকনোটের আনুমানিক মূল্যমান ছিল ৩ দশমিক ৬২ লাখ কোটি রুপি। তবে নোট বাতিলের কারণে যে পুরো অর্থই ব্যাংক–ব্যবস্থায় ঢুকবে, তা নয়।
ভারতের রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকেরা আশা করছেন, নোট বাতিলের কারণে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ কোটি রুপি ব্যাংক–ব্যবস্থায় প্রবেশ করবে। আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে এই নোটবদলের প্রক্রিয়া, যা চলবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
ইকোনমিক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, ব্যাংকের আমানত বা তারল্য বাড়লে অর্থবাজারের স্বল্পমেয়াদি আমানত, যেমন সঞ্চয়পত্র ও ট্রেজারি বিলের সুদের হার কমে আসবে। স্বল্পমেয়াদি সরকারি বন্ডের সুদের হারও কমছে, কারণ ব্যাংকগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে আমানতের একটি অংশ সার্বভৌম ঋণের হিসাবে রাখতে হচ্ছে।
ভারতে কর্মরত একটি বিদেশি ব্যাংকের রাজস্ব বিভাগের এক কর্মকর্তা ইকোনমিক টাইমসকে বলেছেন, ‘সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমবে বলে আমরা ধারণা করছি, টি-বিলের কমবে ১০ ভিত্তি পয়েন্ট, আর স্বল্পমেয়াদি সরকারি বন্ডের সুদহার কমবে ৫ থেকে ৭ ভিত্তি পয়েন্ট।’
২০১৬ সালের নোট বাতিলের সময়ও ব্যাংকের আমানত বেড়েছিল।
ভারতের আইডিএফসি ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ গৌর সেনগুপ্ত ইকোনমিক টাইমসকে বলেন, অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, যে নোট বাতিল করা হয়, তার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ব্যাংক–ব্যবস্থায় চলে আসে। সেই হিসাবে এবার ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি রুপি ব্যাংকে ফিরতে পারে, যদিও তা মোট ব্যাংক আমানতের সাপেক্ষে বড় কিছু নয়, মাত্র শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ।
আমানত বৃদ্ধির প্রভাব স্বল্পস্থায়ী হবে বলেই মনে করেন গৌর সেনগুপ্ত। তবে টি-বিলে ব্যাংকের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এটি সহায়ক হবে তাঁর মত।
গৌর সেনগুপ্তর ধারণা, বাজারে এখন যত ২০০০ রুপির ব্যাংকনোট আছে, মূল্যমানের দিক থেকে তার ৪০ শতাংশ ব্যাংকে আসতে পারে। সাধারণত সরকারি বন্ডের সুদহারের ভিত্তিতে কোম্পানিগুলো ঋণের সুদহার নিয়ে দর-কষাকষি করে, অর্থাৎ সরকারি বন্ডের সুদহার কমলে কোম্পানিগুলোর পক্ষে ঋণের সুদহার কমানোর পথ তৈরি হবে।
ব্যাংকাররা গতকাল ইকোনমিক টাইমসকে বলেছেন, ৫০ হাজার কোটি রুপি সমমূল্যের ২০০০ রুপির ব্যাংকনোট ইতিমধ্যে ব্যাংকে গচ্ছিত আছে। সরকারের ঘোষণার কারণে এই অর্থের বড় একটি অংশ গ্রাহকেরা ছোট নোটে বদলে নেবেন।
ভারতের আর্থিক খাতের ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা আইসিআরএর জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট কার্তিক শ্রীনিবাসন বলেন, আগেও নোট বাতিলের সময় যা দেখা গেছে, তার আলোকে আশা করা যায়, স্বল্প মেয়াদে ব্যাংকের আমানত কিছুটা বাড়বে। এতে সুদহার বৃদ্ধির চাপ কমে আসবে এবং এমনও হতে পারে যে স্বল্প মেয়াদে বিভিন্ন পণ্যের সুদহার কমে আসবে।