Site icon The Bangladesh Chronicle

ভারতের সাথে বাণিজ্য করতে আগ্রহী নয় রাশিয়া

অনলাইন ডেস্ক

২৪ এপ্রিল ২০২৩

গত সোমবার দিল্লির মঞ্চে দাঁড়িয়ে রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী তথা বাণিজ্যমন্ত্রী ডেনিস মন্তুরভ জানিয়েছিলেন, যেহেতু ভারতের দিক থেকে জোগানের অভাব রয়েছে, তাই রুপি-রুবল ব্যবস্থা থাকাটাই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের জন্য যথেষ্ট নয়। তারা ভারতের সাথে বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে চান ও তারপর বিষয়টিতে ভারসাম্য আনতে চান।

তার কথায় স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল, বাণিজ্য পণ্যের দাম মেটানো নিয়ে সমস্যা বাড়ছে। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পর ভারতের পক্ষ থেকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের দাম মেটানো নিয়ে সঙ্কট বাড়ছে।

সদ্যসমাপ্ত সফরে এই নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সাথে এক দফা আলোচনা হয়েছে মন্তুরভের। ঘটনা এমন নয় যে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনা বন্ধ রয়েছে।

বরং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা বাড়াতে রাজনৈতিকভাবে তৎপর দু’টি দেশই। কিন্তু ডলার-নিষেধাজ্ঞাকে এড়িয়ে কিভাবে তা এগোনো যায়, সেই পথ খোঁজা হচ্ছে।

ইউক্রেন যুদ্ধের পরে আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন কার্যত একঘরে করে দিতে চেয়েছে পুতিন সরকারকে, তখন ভারত রাশিয়ার সাথে বাণিজ্য-ঘনিষ্ঠতা ক্রমশ বাড়িয়েছে। মস্কোও হাত উপুড় করে নয়াদিল্লিকে রেকর্ড পরিমাণ অশোধিত তেল রফতানি করেছে।

বিষয়টি নিয়ে আমেরিকার রক্তচক্ষুকে এড়িয়ে গিয়েছে ভারত, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে শক্তিক্ষেত্রে নিজের দেশের বিপুল চাহিদা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করে। কিন্তু প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও অস্ত্র বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ডলার-সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে লেনদেন করা যে সমস্যার তা টের পাচ্ছে দুই দেশই। সূত্রের খবর, এক বছরে রাশিয়ার থেকে আনা সরঞ্জামের দাম হিসাবে ২০০ কোটি ডলার আটকে রয়েছে। রাশিয়াকে ক্রয়াদেশ দেয়া রয়েছে দু’টি এস ৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাটারিসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশ যার মূল্য ১০০০ কোটি ডলার। এই যথেষ্ট বড় পরিমাণ অঙ্ক ডলারে না দিয়ে কিভাবে মেটানো হবে তার খোঁজ চলছে। রাশিয়া ভারতীয় টাকায় তথা রুপিতে দাম নিতে চায় না। কারণ, তার বিনিময় মূল্যের ওঠাপড়া প্রবল। ভারতও রুবল-এ বাণিজ্য করতে ইচ্ছুক নয়। ভারত অস্ত্রের বিনিময়ে পাওয়া টাকা এখানকার বাজারে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

তবে ভারতের পররাষ্ট্র দফতরের বক্তব্য, এই সমস্যা সাময়িক। দু’দেশের কূটনৈতিক সদিচ্ছা প্রবল। বাণিজ্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে সেটাই সবচেয়ে বড় কথা। ভারত-রাশিয়া বাণিজ্য সংলাপ মঞ্চে দাঁড়িয়ে গত সোমবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, ‘এটা ঠিক যে ভারত-রাশিয়া বাণিজ্যক্ষেত্রে ঘাটতির বিষয় নিয়ে ন্যায্য উদ্বেগ রয়েছে। তা কমানোর জন্য রাশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তাদের সাথে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। স্বল্পমেয়াদি ও মধ্যমেয়াদি চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে।’

রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী তার সদ্যসমাপ্ত নয়াদিল্লি সফরে ভারতীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছেন, ভারত থেকে সিরিয়া— এই ৭২০০ কিলোমিটার মাল্টিমোডাল করিডরটিকে (আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহণ করিডর) আরো শক্তিশালী করে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোয় তারা উদ্যোগী। ইরানের বন্দর ও রেলপথকে কাজে লাগানোর কথাও ভাবা হচ্ছে। পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ নেয়ার চিন্তাও করছে রাশিয়া। বিনিময়ে এই করিডরের নতুন বাণিজ্য সুবিধা তাদের কাছেও পৌঁছবে।

 

Exit mobile version