আগে পকেট কাটতো চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট। এখন তাদের তাড়িয়ে বৈধ রশিদে বাংলাদেশি আমদানিকারকদের পকেট ফাঁকা করছে কলকাতা। স্লট বুকিংয়ের নামে গত অর্থবছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত হাতিয়ে নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তাদের এ ধরনের কার্যকলাপকে রীতিমতো ‘নতুন চাঁদাবাজি’ বলছেন ভারতীয় ট্রাকচালকরা।
আজিজুল হক
ভারতীয় ট্রাকচালক রণজিত সময় সংবাদকে বলেন, ‘কালিতলা ট্রাক পার্কিংয়ে চাঁদাবাজদের সিন্ডিকেট ভেঙে বাণিজ্য সহজ করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কিন্তু এ সেবার (স্লট বুকিং) নামে বড় অঙ্কের অর্থ আদায় করছে রাজ্য সরকার। এটা নতুন করে আরেক ধরনের চাঁদাবাজি।’
বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি বাণিজ্যে অনলাইন স্লট বুকিংয়ের নামে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের বড় অঙ্কের অর্থ আদায় বিরূপ প্রভাব ফেলছে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যে। ট্রাকপ্রতি ১০ থেকে ১২ হাজার রুপি পরিশোধ করতে গিয়ে গেল অর্থবছর প্রায় ২০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত গুনতে হয়েছে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের। গত বছরের ২৪ জুলাই ভারতের বঁনগা পৌরসভার কাছ থেকে কালিতলা ট্রাক পার্কিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিবহন দফতর। বাণিজ্যিক বৈষম্যের অভিযোগ তুলে এ ধরনের চাঁদাবাজি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, ‘বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২৫০ ট্রাক বাংলাদেশি পণ্য ভারতে রফতানি হয় এবং ভারত থেকে প্রায় ৪৫০ ট্রাক পণ্য বাংলাদেশে আমদানি হয়। বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষকে ট্রাকপ্রতি মাত্র ১৭৫ টাকা চার্জ দিয়ে রফতানি পণ্য যাচ্ছে ভারতে। আর ভারত থেকে পণ্য আনতে আমদানিকারকরা জিম্মি হতেন কালিতলা পার্কিংয়ের চাঁদাবাজদের কাছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগে অবশেষে পশ্চিববঙ্গ রাজ্য সরকারের পরিবহন দফতর কালিতলা পার্কিং সিন্ডিকেট ভেঙে অনলাইনে স্লট বুকিংয়ের মাধ্যমে সরাসরি ট্রাক বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়। তবে এ সুবিধার বিনিময়ে ৬ থেকে ১০ চাকার ট্রাকপ্রতি ১০ হাজার রুপি, ১৬ থেকে ২২ চাকার ট্রাকে ১২ হাজার রুপি ও ট্রাক চেসিজ প্রতি ৫ হাজার রুপি চাঁদা নির্ধারণ করে আদায় করে আসছে এ দফতরটি।
সাজেদুর রহমান আরও বলেন, কোনো কারণে ছাড়পত্র নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশে ট্রাক ঢুকতে না পারলে নতুন করে আবার আগের সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধ করে স্লট বুকিং রশিদ নিতে হয়। এটা সিন্ডিকেট ভেঙে নতুন করে চাঁদাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়।
বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, ‘আমদানি বাণিজ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে দিনে প্রায় ৩৫ লাখ রুপি হিসাবে গেল অর্থবছরে বাংলাদেশি অর্থে প্রায় ২০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত গুনতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের। একদিকে বৈশ্বিক মন্দায় বেড়েছে আমদানি খরচ। এরমধ্যে স্লট বুকিংয়ের অর্থ পরিশোধে বিরূপ প্রভাব পড়ছে দেশীয় বাজারে। তাই ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যে এমন বৈষম্য প্রত্যাহার করে পণ্য পরিবহন সহজ করার দাবি জানাচ্ছি।’
ভারতীয় ট্রাক চালক রণজিত বলেন, ‘কালিতলা ট্রাক পার্কিংয়ের চাঁদাবাজদের সিন্ডিকেট ভেঙে বাণিজ্য সহজ করেছে পশ্চিম বঙ্গ সরকার। কিন্তু এ সেবার নামে বড় অংকের অর্থ আদায় করছে রাজ্য সরকার। এটা নতুন করে আর এক ধরনের চাঁদাবাজি।’
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহামুদ বিপুল বলেন, ‘চাঁদাবাজি বন্ধ করে বাণিজ্য নিরাপদ রাখার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু এ সেবা দিয়ে ট্রাকপ্রতি বাংলাদেশি টাকায় ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকা আদায় অযৌক্তিক। এটা বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি।’
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের বন্দর বিষয়ক সম্পাদক মো. মেহেরুল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন যে রফতানি পণ্যবাহী ট্রাক ভারতে যায়। এখানে বাংলাদেশ অংশে বন্দর চার্জসহ সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৫৭০ টাকা খরচ হয়। কিন্তু ভারতীয় ট্রাক এপারে এলে তাদের দিতে হচ্ছে ৩০ গুণ বেশি টাকা। স্লট বুকিংয়ের নামে ভারত সরকারের এ অর্থ আদায়ে দুই দেশের বাণিজ্যে বৈষম্য তৈরি করেছে।’
বেনাপোল বন্দরের সাবেক খণ্ডকালীন সদস্য সৈয়দ জাহিদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশগামী পণ্যবাহী ট্রাকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্লট বুকিংয়ের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় মানি লন্ডারিং অপরাধের জন্ম দিচ্ছে। আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতির জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করা।