ভারতের কারণে দেশের মানুষ গণতন্ত্রবঞ্চিত হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, যেভাবে ভারতীয় পণ্য বয়কটের রব উঠেছে তা মোকাবিলা করাই দায় হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, দেশের সরকারের মধ্যে ভূতের ভয় আছে। স্লিপিং ট্যাবলেট খেয়েও এ ভূতের ভয়ে তাদের ঘুম আসে না।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদেরও লজ্জাবোধ ছিল, কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে যারা ক্ষমতায় আছে তাদের লজ্জাবোধ নেই। শুধু কাপড় দিয়ে শরীর আবৃত করলেই লজ্জা নিবারণ হয় না, এটা হচ্ছে নৈতিকতার লজ্জাবোধ। তাদের সেটা নেই।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা চিৎকার করি, অনেক কিছু বলি, আমাদের দুঃখ-কষ্ট মানুষ দেখে। এখন মানুষ বোঝে আমরা ইদানিং কোন অবস্থানে আছি। কিন্তু সরকার যে কোন অবস্থানে আছে ওটা মানুষ দেখে না। এটা ওরাও (সরকার) জানে, ওরা বোঝে। ওরা যে সুখে আছে তা না। তারা বুঝে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। যেকোনো সময় গণবিস্ফোরণ ঘটতে পারে। তাই ওরাও ভূতের ভয়ে আছে। স্লিপিং ট্যাবলেট খেলেও এ ভূতের ভয়ে তাদের ঘুম আসে না।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই মন্তব্য করে গয়েশ্বর বলেন, সবাই তো গণতন্ত্রের কথা বলছে, গণমাধ্যমের কথা বলছে। কিন্তু গণমাধ্যম কী স্বাধীন? আমি তো তা মনে করি না। আজকাল টেলিভিশনের টকশোতে যেভাবে নির্লজ্জভাবে কথা বলে এটা সাংবাদিকতা নয়। কিছু কিছু সাংবাদিকের দালালি দেখে আমাদের লজ্জা হয়। এখন সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নেই, আছে মালিকদের। প্রতিটা হাউসই কোন সংবাদ যাবে, কোনটা যাবে না সেটাও বাছাই করা হয়। এখন সরকারের প্রশংসা আর চাটুকারিতা করতে করতে অনেকে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। সাংবাদিকের স্বাধীনতা থাকলে তারা লিখতে পারবেন। তাই আমি মালিকদের নয়, সাংবাদিকদের স্বাধীনতা চাই।
তিনি আরও বলেন, ২০০৮ সাল থেকে জনগণ প্রতারিত হচ্ছে। ভোট কিন্তু একটা উৎসব। ঈদ-পূজার থেকেও বড় উৎসব। কিন্তু আজ সেটা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এখন ভোট উৎসব নেই। ভোটই নেই। এখন বহু সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ আছেন যারা স্বার্থের জন্য গণতন্ত্রকে স্বৈরতন্ত্র করে ফেলেন। আবার স্বৈরতন্ত্রকে গণতন্ত্র বানিয়ে ফেলেন।
নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, যারা ভোটের দিন ভোট দিতে গেছে তারা ভোট দিতে পারে নাই। লাইনে শুধু দাঁড়িয়ে থেকেছে। টাকা আর বিরিয়ানির প্যাকেট দিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। আমরা সব সময় যেটা বলি, ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত। ঠিক একইভাবে আজকে ভোট হোক বা না হোক শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, আমরা গত ১৫ বছর ধরে ঐক্যের ডাক দিচ্ছি। ঐক্যের জন্য সংগ্রাম করছি। ঐক্য যখন নিশ্চিত হয়, তখন সংগ্রামটা সহজ হয়ে যায়। এই কাজটা যদি আমরা করতে না পারি তাহলে সরকার বিভেদকে নানাভাবে ব্যবহার করবে।
আলোচনা সভায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা কি পাকিস্তানের চেয়ে ভালো আছি? পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ১৯৬২ থেকে ১৯৭১ এ রণাঙ্গণে যুদ্ধ করেছি। কিন্তু এমন নিষ্ঠুরতা দেখিনি। আইয়ুব স্বৈরাচার ছিল, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু স্বৈরাচার হলেও রাষ্ট্র পরিচালনায় এতটা বেপরোয়া ছিল না।
গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ না দিতে পারলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আসবে না মন্তব্য করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমীন গাজী বলেন, সরকার একদলীয় শাসন পাকাপোক্ত করার জন্য যা যা করা দরকার সবই করেছে।
বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, উন্নয়নকে অর্থবহ করতে হলে গণতন্ত্র অপরিহার্য। আর গণতন্ত্র নিশ্চিত করে মানুষের বাক-স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। তাই গণতন্ত্রের জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অপরিহার্য। কারণ মানুষের মৌলিক অধিকারের অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে গণমাধ্যম। দুর্ভাগ্যজনক হলে সত্য আজ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। গত ১৫ বছরে ৬০ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। ৪ শতাধিক গণমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সরকারের নিপীড়নের মুখে অবেক সম্পাদক ও সাংবাদিককে দেশান্তরি হতে হয়েছে।
বাংলাদেশ ইয়ূথ ফোরামের সভাপতি মুহাম্মদ সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আ ক ম মোজাম্মেল হক, বাংলাদেশ ইয়ূথ ফোরামের উপদেষ্টা রোটারিয়ান এম নাজমুল হাসান, বিএফইউজের সহসভাপতি একেএম মহসিন, ওবায়দুর রহমান শাহীন, সহকারী মহাসচিব বাছির জামাল, ড. সাদিকুল ইসলাম স্বপন, এরফানুল হক নাহিদ, আবু বকর, শাহজান সাজু বক্তব্য রাখেন।
আলোচনা সভা শেষে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) নির্বাচিত নেতাদের বাংলাদেশ ইয়ূথ ফোরামের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
jugantor