Site icon The Bangladesh Chronicle

ভারতীয় পণ্য বর্জন, আত্মমর্যাদা ফিরে পেতে ভিন্নধর্মী লড়াই

ভারতীয় পণ্য বর্জন, আত্মমর্যাদা ফিরে পেতে ভিন্নধর্মী লড়াই

ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছেন প্যারিসে নির্বাসিত বাংলাদেশের লেখক ও অ্যাকটিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য্য। ভারতীয় আধিপত্যবাদের প্রতিবাদে তিনি এ আহ্বান জানিয়ে ভারতীয় পণ্য না কিনতে দেশের মানুষকে অনুরোধ করেছেন। পিনাকি ভট্টাচার্য্যের এ আহ্বানের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। পিনাকী ভট্টাচার্য্যের এ আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন বিপুলসংখ্যক মানুষ। বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে, মানুষ যতদূর সম্ভব ভারতীয় পণ্য কেনা থেকে বিরত থাকছে। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত রাখা গেলে ভারতের টনক নড়বে বলে আশা সবার।

বাংলাদেশে বিভিন্ন দেশের পণ্য বর্জনের ডাক আগেও নানা সময় দেয়া হয়েছে। তবে তার বেশিরভাগই ছিল মূলত: ধর্মীয় কারণে। মহানবী (স.) এর প্রতিকৃতি আঁকার বিষয়টিকে ফ্রান্স সরকার সমর্থন দেয়ায় ফরাসি পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছিল বিভিন্ন ইসলামি রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। ২০২০ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস জুড়ে ফরাসি পণ্য বর্জনের জন্য জোর প্রচারণা চলে বাংলাদেশে। ‘বয়কট ফ্রান্স’ নামের ওই কর্মসূচি চলাকালে রাজধানী ঢাকায় প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়। দাহ করা হয় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁর কুশপুত্তলিকা। ফ্রান্সের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবিও উঠেছিল।

গাজায় চলমান ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদেও ইসরাইলি পণ্য বা ইহুদী মালিকানাধীন পণ্য বর্জনের ডাক দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাকও দেয়া হয়েছে বিভিন্ন সময়, তবে তাও ওই ধর্মীয় কারণে। ২০০২ সালের জুনে ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেত্রী নূপুর শর্মা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে অবমাননা করেছেন এমন অভিযোগ এনে বাংলাদেশ ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান জানায় ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক দল। ওই ঘটনায় শুধু বাংলাদেশেই নয় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারা মুসলিম বিশ্বে, অনেক মুসলিম দেশেই ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেয়া হয়েছিল।

আবার এসেছে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক। পিনাকী ভট্টাচার্য্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নানা বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং ৭ জানুয়ারির  নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতি নয়াদিল্লীর নগ্ন সমর্থনের প্রতিবাদে ভারতীয় পণ্য বর্জনে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে পিনাকী বলেন, ‘আমরা ১৮ কোটি জনগণ, আমরা কিনতে পারি, আমরা ক্রেতা আমাদের কেনার শক্তিতে ইন্ডিয়া শক্তিশালী হইতেছে, সে আর্থিকভাবে শক্তিশালী হইয়া আমাদের অধিকার হারা করিছে, সে হাসিনাকে সাপোর্ট করিচ্ছে, আমাগির টাকা নিয়া হাসিনাকে সাপোর্ট করি। আমরা আজ থিকা, এই মুহূর্ত থিকা, ইন্ডিয়ার পণ্য বয়কটের ঘোষণা দিলাম।’

পিনাকী আরও বলেন, ‘মাস তিনেকের মধ্যে বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানী অর্ধেক করে দিতে পারি তাহলে ওরা আমাদের কাছে আসবে। আওয়ামী লীগকে ছেড়ে পালাবে। ওদের আমরা ভাতে মারব, ওরা আমাদের স্বাধীনতায়, আমাদের অধিকারে, আমাদের মর্যাদায় লাথি দিছে, এখন ওদের পেটে লাথি দিব আমরা, ওদের পেটে লাথি দেওয়া এখন জায়েজ। আমরা এতদিন পড়ে পড়ে মাইর খাইছি, এখন মাইর দেওয়ার পালা, শুরু হোক আজকে থেকেই বয়কট ইন্ডিয়া।’

আগেই উল্লেখ করা হয়েছে ধর্মীয় কারণে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় ভারতীয় বা বিভিন্ন দেশের পণ্য বর্জনের ডাক দেয়া হলেও বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় স্বার্থ বা জাতিস্বার্থের কারণে অর্থাৎ জাতিস্বত্তার স্বার্থে কোন দেশের পন্য বর্জনের ডাক এর আগে ঘটেনি।

বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের আচরণকে আগে বলা হতো ‘বড়ভাই’ বা ‘বিগব্রাদার’ সুলভ। কিন্তু গত ক’ বছরের শাসনকালে শেখ হাসিনা ভারতকে মোটামুটি ‘প্রভূ’র আসনে বসিয়েছেন। হাসিনা সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ককে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মত বলেছিলেন, কিন্তু শেখ হাসিনা দু’দেশের সম্পর্ককে স্বামী-স্ত্রীর বা ‘বিগব্রাদার’ এর সম্পর্কেও সীমিত রাখতে পারেননি। ভারত এখন বাংলাদেশের ওপর কর্তৃত্ব করে, প্রভূত্ব করে। এই কর্তৃত্ব আর প্রভূত্ব প্রকট আকার ধারণ করে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ গণতন্ত্রপন্থী দেশগুলো বাংলাদেশে সুষ্ঠু, অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ওপর গুরুত্ব দিলেও ভারত ন্যাক্কারজনক ভূমিকায় আবর্তিত হয়। তারা আওয়ামী লীগ সরকারকে অন্ধ সমর্থন দেয়। প্রকাশ্যেই তারা বাংলাদেশে ক্ষমতার স্থিতিশীলতা ও ধারাবাহিকতা দেখতে চায় বলে জানায়। ভারতের এই অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্বীকারও করে আওয়ামী লীগ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সম্প্রতি ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার সাথে সাক্ষাৎকালে ভারতের ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের ‘গণতান্ত্রিক’ ধারা অব্যাহত রাখতে ভারত ২০১৪ ও ১৮ সালের মতো ২০২৪ সালের নির্বাচনের সময়ও সরকারের পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে।

একটা দেশের সরকার নিজের দেশকে কত ছোট করতে পারে তার সবচে’ বড় উদাহরণ সম্ভবত: আওয়ামী লীগ সরকার। ক্ষমতার জন্য তারা একটি সেলফি তোলার জন্য ঘুরে বেড়ায়, অন্য দেশের সরকারের আশির্বাদ পেতে চাতক পাখির মত চেয়ে থাকে।

বাংলাদেশের মানুষকে এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণে দেশের মানুষকেই সক্রিয় ও সরব হতে হবে। পিনাকী ভট্টাচার্য্যের ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান কতটা কার্যকর হবে তা সময়ই বলে দেবে, তবে শুরুতেই এ আহ্বান যে পরিমাণ সাড়া ফেলেছে তাতে আশাবাদী হওয়াই যায়।

বাংলা আউটলুক

Exit mobile version