বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমাদেকে জেনে-বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ এ সময় তিনি যারা অতীতে রাষ্ট্রের সম্পদ লুণ্ঠন করে অর্থ-বিত্তের পাহাড় গড়েছেন তাদের হাতে ক্ষমতার চাবি তুলে না দিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইব্রাহিমপুর দ্বিতীয় শাখা এলাকায় ঢাকা-১৫ সংসদীয় আসনের কাফরুল থানা দক্ষিণ আয়োজিত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
ডা: শফিকুর রহমান বলেন, ‘জামায়াত ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে দেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য দীর্ঘ পরিসরে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। মূলত, আর্ত-মানবতার কল্যাণ-মুক্তিই আমাদের রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য। আমরা নেতিবাচক ধারার রাজনীতি পরিবর্তন করে দেশে ইতিবাচক ধারার রাজনীতি ফিরিয়ে আনার বিরামহীন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা দেশ ও জাতিকে এমন একটি সমাজ উপহার দিতে চাই, যে সমাজে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষের অধিকারের নিশ্চয়তা থাকবে। রাষ্ট্র কারো সাথে কোনোভাবেই বৈষম্যমূলক আচরণ করবে না। দেশ হবে দুর্নীতি, দুঃশাসন ও অপশাসন মুক্ত।’
‘আমরা যে আমাদের প্রতিশ্রুতি পালনে পুরোপুরি সক্ষম তা আমাদের দু’জন মন্ত্রী স্বার্থকভাবে প্রমাণ করে গেছেন। তারা ছিলেন দুর্নীতিমুক্ত, সৎ, যোগ্য ও অধিকতর দক্ষ। তাই সে কাঙ্ক্ষিত সমাজ প্রতিষ্ঠায় আগামীতে ইসলামী শক্তিকে ক্ষমতায় পাঠাতে হবে,’ বলেন তিনি।
তিনি দ্বীন প্রতিষ্ঠায় সকলকে যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে আমাদের জন্য অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু শঙ্কাটাও পুরোপুরি কেটে যায়নি। তাই আমাদেরকে খুবই সন্তর্পণে অগ্রসর হতে হবে।’
রাজনীতিতে মূল্যবোধের চর্চার প্রসঙ্গ তুলে জামায়াত আমির বলেন, ‘আগামীতে যারা যারা ক্ষমতায় আসবেন বা যেতে চান তাদেরকে বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ ও আল্লাহর কাছে জবাবদিহীর অনুভূতি নিয়ে সকল কাজ সম্পাদন করতে হবে। কারণ, সকলকে ফাঁকি দেয়া সম্ভব হলেও আল্লাহকে ফাঁকি দেয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আমরা এমন এক ইনসাফপূর্ণ নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই সকল প্রকার ভয় ও শঙ্কামুক্ত থাকবেন।’
তিনি বলেন, ‘অতীতে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা জনগণকে ভয়ভীতিমুক্ত পরিবেশ উপহার দিতে পারেননি। তাই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমাদেরকে জেনে-বুঝে আগামীর বাংলাদেশের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। জনগণ সত্যের পক্ষে রায় দিলে পাঁচ বছরের মধ্যেই দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত করাসহ ইতিবাচক পরিবর্তন করা সম্ভব।’
তিনি সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
তিনি আরো বলেন, ‘দেশীয় চিকিৎসায় যাতে সাধারণ মানুষ আস্থা রাখেন এবং চিকিৎসরাও নিজেদের প্রতি আস্থা ফিরে পান সে জন্যই আমি দেশেই চিকিৎসা নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। মূলত, সুস্থতা-অসুস্থতা আল্লাহর হাতে। আমরা দেখেছি, বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে অনেকেই কফিনবন্দী হয়ে ফিরছেন। আবার দেশেই চিকিৎসা নিয়ে অনেকেই পূর্ণ সুস্থতা লাভ করছেন। তাই আল্লাহ চাইলে সব জায়গায় তার বান্দাদের সুস্থ রাখতে পারেন। চিকিৎসা বা চিকিৎসক উসিলা মাত্র। মূলত, আল্লাহ যাতে সুস্থ রাখতে চান, চিকিৎসকের উসিলায় তাকে সুস্থ রাখেন। তাই দেশীয় চিকিৎসার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফেরাতে আমি দেশেই চিকিৎসা নিয়েছি। এতে দেশীয় চিকিৎসকরাও উজ্জীবিত হবেন। কারণ, সাধারণ মানুষের পক্ষে বিদেশে ব্যয়বহুল চিকিৎসা গ্রহণ সম্ভব নয়।’
জামায়াত আমির বলেন, ‘চিকিৎসা একটি মহান ও সেবামূলক পেশা। তাই চিকিৎসকদের সেবার মানসিকতা নিয়ে সকল শ্রেণির মানুষের চিকিৎসা করতে হবে। দেশের চিকিৎসার মান উন্নয়নের জন্য চিকিৎসা বিষয়ক শিক্ষাকে বৈশ্বিক মানসম্পন্নকরণ এবং দেশীয় হাসপাতালগুলো সর্বাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামে সমৃদ্ধ করা জরুরি। একইসাথে চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোকে রোগীবান্ধব সেবা প্রদান করাও দরকার। দেশীয় চিকিৎসায় সাধারণ মানুষের আস্থা ফেরাতে চিকিৎসা সহজলভ্য ও উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই দেশীয় চিকিৎসার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরে আসবে।’
থানা আমির অধ্যাপক আনোয়ারুল করিমের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসা। উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য মো: শহিদুল্লাহ ও শাহ আলম তুহিন প্রমুখ।