Site icon The Bangladesh Chronicle

ব্রহ্মপুত্রে চীনের ড্যাম নির্মাণ বাংলাদেশের জন্য বিপর্যয় হতে পারে

এএনআই-এর রিপোর্ট

মানবজমিন ডেস্ক

১৬ আগস্ট ২০২৩

উজানের দেশ চীন ব্রহ্মপুত্রের ভাটিতে মোটামুটি আটটি পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প (এইচপিপি) নির্মাণ করছে। এর মধ্যে কয়েকটি সচল হয়েছে। অন্যগুলো নির্মাণাধীন। একটি মেগা-ড্যাম প্রকল্প রয়েছে বিবেচনাধীন।  বেইজিংয়ের ১৪তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (২০২১-২৫) ৬০ গিগাওয়াট এইচপিপি বিষয়ক ৯ম প্রকল্প নির্মাণ করা হতে পারে তিব্বতের মোটু কাউন্টিতে গ্রেট বেন্ডে। এ খবর দিয়েছে ভারতের অনলাইন এএনআই।

এতে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভাটির দেশ বাংলাদেশ। তাদেরকে খুব বেশি নির্ভর করতে হয় আন্তর্জাতিক নদ-নদীর ওপর। জীবন-জীবিকার জন্য এসব নদ-নদীর ওপর নির্ভরশীল লাখ লাখ মানুষ। দক্ষিণ এশিয়ায় ভাটিতে বসবাস করা এসব জনগোষ্ঠীর জন্য বিষয়টি বিপর্যয়কর হয়ে উঠছে। এসব নদ-নদীর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদ-নদীর অন্যতম ব্রহ্মপুত্র।

বিজ্ঞাপন

চলার পথে বিভিন্ন স্থানে ব্রহ্মপুত্র একেক নামে পরিচিত। এর মধ্যে আছে- ইয়ারলাং সাংপো, যমুনা ইত্যাদি। এটি আন্তঃসীমান্ত বিষয়ক নদ। চলার পথে বিভিন্ন শাখার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে । ভারত উপমহাদেশে সম্প্রতি ভূরাজনৈতিক সংঘাতের বড় কারণ হয়ে উঠেছে এই নদ।

চীনের পানিবিদ্যুৎ বিষয়ক আধিপত্যে কিভাবে ভাটি অঞ্চলের দেশগুলো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তার একটি উত্তম উদাহরণ হতে পারে বর্তমানে মেকং নদীর অবস্থা। মানবতার জন্য ইয়ারলাং সাংপো-ব্রহ্মপুত্র-যমুনার অভিন্ন প্রাকৃতিক উৎসের পরিবর্তে জাতীয় নিরাপত্তার অস্পষ্ট বর্ণনার অধীনে এসব নদ-নদীকে কৌশলগত সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করছে বেইজিং। এসব নদীর ওপর টিকে আছে ভঙ্গুর জীববৈচিত্র্য বিষয়ক হটস্পটগুলো, বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণির আবাসস্থল।

চীন-ভারত আলোচনার এজেন্ডায় নতুন সংযোজন নদী ইস্যু। কিন্তু দৃশ্যত নদীর এই বিপর্যয়কর ইস্যু দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার চেয়ে আরও বেশি বিদ্বেষপূর্ণ ইস্যুতে পরিণত হচ্ছে। ভবিষ্যতে পানি বিষয়ক ডাটা এবং পানির উৎসের সমতাভিত্তিক বিতরণ ইস্যু হতে পারে ভিন্নতা এবং ভুল বোঝাবুঝির। সাউথ-নর্থ ওয়াটার ট্রান্সফার প্রজেক্টের অধীনে  ব্রহ্মপুত্র, উত্তর-পশ্চিম চীনের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত রেড ফ্লাগ ক্যানেলসহ তিব্বতের নদ-নদীগুলোর গতিপথ পরিবর্তনে বেইজিং যে পরিকল্পনা নিয়েছে তা নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত নিয়মিতভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে যাচ্ছে এবং এতে সন্দেহ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এতে আরও বলা হয়, পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের শতকরা কমপক্ষে ৬০ ভাগ মানুষ ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার ওপর নির্ভরশীল। চীনের অবকাঠামো বিষয়ক কর্মকাণ্ড, ভূমিধস, ধাতব পদার্থের খনি এবং পৃথিবীতে বিরল পদার্থের (রিয়ার আর্থ এলিমেন্ট) অনুসন্ধানের কারণে এ অঞ্চলে নদীতে তলানি জমার ফলে নদীর মান এবং ভাটিতে তার প্রবাহের হার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমনটাই সম্প্রতি দেখা গেছে সিয়াং ও কামেং শাখানদীতে। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলেছেন, যখন তাদের প্রয়োজন নেই, তখন খুব বেশি পরিমাণে পানির প্রবাহ পেতে পারেন। অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে যখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তখন তারা খুব কম অথবা একেবারেই পানি না পেতে পারেন। এক্ষেত্রে খুব বেশি পানি ছাড়া বা একেবারে না ছাড়া নির্ভর করে উজানে চীনের ওপর।

রিভারেইন বাংলাদেশ নামের পরিবেশ বিষয়ক প্রচারণা সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল শেখ রোকন বলেন, ভবিষ্যতে যেকোনো ড্যাম নির্মাণের আগে চীনের উচিত বহুপক্ষীয় আলোচনার আয়োজন করা। তিনি ভবিষ্যতে এর সঙ্গে যুক্ত সব দেশের মধ্যে চুক্তি করার আহবান জানান, যাতে সবাই সমান সুবিধা পায়। স্থিতিশীল নদীভিত্তিক সম্পর্ক ধরে রাখার জন্য প্রয়োজন উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং অববাহিকা অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা।

ব্রহ্মপুত্রের ব্যবস্থাপনা অপ্রাতিষ্ঠানিক। যেহেতু এই নদ প্রবাহিত হয়েছে বিরোধপূর্ণ ভূখণ্ডের ভিতর দিয়ে, তাই চীন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বহুপক্ষীয় পানি বন্টন চুক্তি নেই। স্থানীয় পর্যায়ের জনগণ এবং বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রকৃত আলোচনা ছাড়া ব্রহ্মপুত্রে চীনের পানি বিষয়ক আধিপত্যমূলক কর্মকাণ্ডের ফল উল্টো প্রমাণিত হতে পারে। তাতে অববাহিকায় উদ্ভিদ ও প্রাণীর বৈচিত্র্য পূরণীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

 

Exit mobile version