পৌনে তিন ঘণ্টার সেশনও নয়; মিরপুর টেস্টের ওপেনিং ইনিংসের আয়ুষ্কাল এতটাই ছোট। অনেকটা শর্ট ফিল্মের মতো, শুরু হয়েই শেষ। ৪০.১ ওভারে ১০৬ রানে অলআউট বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্তদের ব্যাটিং সক্ষমতার চিত্র এটি। ভারত সফর থেকেই এই দৃশ্যের মঞ্চায়ন করে যাচ্ছেন তারা। অথচ আশা করা হচ্ছিল, দেশের মাটিতে খোলস ছেড়ে বের হবেন শান্ত-লিটনরা। কিন্তু তারা ব্যাটিং বিপর্যয়ের গল্পই লিখলেন মিরপুর টেস্টের প্রথম দিন। যদিও দিন শেষে ব্যাটিং ব্যর্থতা আড়াল করে পাদপ্রদীপের সব আলো কেড়ে নেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম পাঁচ উইকেট শিকার করে, ২০০ টেস্ট উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়ে। ব্যক্তিগত এই প্রাপ্তিতেই বিকেলটা ছিল কিঞ্চিৎ রঙিন। তবে দলগত পারফরম্যান্স বিবেচনায় নিলে দক্ষিণ আফ্রিকা এগিয়ে। প্রথম দিন শেষে ৪১ ওভারে ৬ উইকেটে ১৪০ রান সফরকারীদের, ৩৪ রানের লিড।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কন্ডিশনের সুবিধা নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন অধিনায়ক শান্ত। তারা মনের মতো কন্ডিশনে খেলতে পারছেন কিনা, জানা নেই। ব্যাটিং পারফরম্যান্স আমলে নিলে উইকেটের সুবিধা পাননি তারা। প্রোটিয়াদের ব্যাটিং দেখলেও অনুরূপ অনুভূতি হবে। এককথায়, ঢাকা টেস্টের প্রথম দিন ভালো খেলেনি স্বাগতিকরা। তাইজুলের কথাতেও বিষয়টি পরিষ্কার, ‘ব্যাটিংটা বেশি খারাপ হয়ে গেছে। ২০০, ২২০ বা ২৫০ রান হলে ভালো হতো। সেটা করতে না পারা খারাপ হয়েছে স্বীকার করতে হবে।’
সাকিব-উত্তর সময়ে একাদশ সমন্বয় করা কঠিনই ছিল অধিনায়কের জন্য। একজন বাড়তি স্পিনার খেলাতে গিয়ে পেস বোলার সীমিত করতে হয়েছে তাঁকে। অর্থাৎ একজন পেসার নিয়ে খেলছে বাংলাদেশ। তাসকিন আহমেদ ও নাহিদ রানার জায়গা হয়নি। অথচ সাকিব-মিরাজ জুটি হলে বাঁহাতি তাইজুলকে নিলেই হয়ে যেত। বাংলাদেশকে এই সমস্যায় এখন থেকে নিয়মিতই পড়তে হবে। কারণ শান্তরা লম্বা ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে খেলতে স্বচ্ছন্দ। আট নম্বরেও ব্যাটার খেলে। অভিষিক্ত জাকের আলী আট নম্বরে নেমেছিলেন। যদিও আটে নেমে আট রানও করতে পারেননি উইকেটরক্ষক এ ব্যাটার। ১৫ বল খেলে দুই রান তাঁর।
কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে ভয়ংকর ডেলিভারি দিতে থাকেন দক্ষিণ আফ্রিকান পেসাররা। কাগিসো রাবাদা, উইলিয়ান মুল্ডার ম্যাজিক বোলিং করেন। সাদমান ইসলাম অনিক ও মুমিনুল হক যেভাবে শট খেলে মুল্ডারকে উইকেট দেন, তা ছিল দৃষ্টিকটু।
আসলে প্রোটিয়া দুই পেসার ও বাঁহাতি স্পিনার কেশব মহারাজের বোলিং তোপে উইকেট পতনের মিছিলটা বড় হয়েছে। প্রথম সেশনেই ৬০ রানে ছয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। যেখানে নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, লিটন কুমার দাস, মেহেদী হাসান মিরাজের উইকেট আছে। মধ্যাহ্ন বিরতির পর বাকি চার উইকেট নিতে ৪৬ মিনিট লেগেছে এইডেন মার্করামদের।
বাংলাদেশকে অলআউট করে ব্যাট করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকাও স্বস্তিতে ছিল না। হাসান মাহমুদ ব্রেক থ্রু দেওয়ার পর বাকি গল্প তাইজুলের। ত্রিস্তান স্টাবসকে দিয়ে শুরু তাঁর। চার উইকেট নেওয়ার পর মাইলফলক স্পর্শ করেন। দ্বিতীয় বাংলাদেশি বোলার হিসেবে ২০০ টেস্ট উইকেটের মালিক হন। দেশের দ্রুততম বোলার হিসেবে এ রেকর্ড গড়েন। ৪৮ ম্যাচে ২০১ উইকেট নিয়ে দিন শেষ করেন তিনি। গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকা যে ছয় উইকেট হারিয়েছে, তার পাঁচটি তাইজুলের। ইনিংসে ১৩তম পাঁচ উইকেট প্রাপ্তি। রেকর্ড উইকেট পতনের ভেতরেও ছোট ছোট স্কোর গড়ে প্রোটিয়া ব্যাটাররা দারুণ পেশাদারিত্ব দেখান। টনি ডি জর্জি ৩০, স্টাবস ২৩ ও রায়ান রিকেলটন ২৭ রান করেন।
মিরপুরে দুটি ব্যক্তিগত মাইলফলকের সঙ্গে মাঠেরও রেকর্ড হয়েছে। সেটি নেতিবাচক বলাই ভালো। এক দিনে রেকর্ড ১৬ উইকেট পড়েছে। আগের রেকর্ড ছিল ১৫ উইকেট। গত বছর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে ১৫ উইকেট পড়েছিল প্রথম দিন। বাংলাদেশের ১০টি, নিউজিল্যান্ডের পাঁচটি। যে দুটি ব্যক্তিগত মাইলফলকের কথা বলা হচ্ছে তার মধ্যে তাইজুলেরটা তো জানাই হয়ে গেছে। অন্যটি কাগিসো রাবাদার। টেস্টে ৩০০ উইকেটের মাইলফলক পেয়েছেন তিনি। গতকাল যেভাবে উইকেট বৃষ্টি হলো, এক দিন পরে তা থেমে যেতে পারে নিম্নচাপের বৃষ্টির কারণে। আবহাওয়া বার্তা অন্তত তাই জানাচ্ছে, কাল থেকে বৃষ্টি হবে টানা চার দিন।
samakal