Site icon The Bangladesh Chronicle

ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে উদ্বেগে আমানতকারীরা

ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে উদ্বেগে আমানতকারীরা

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আফতাব-উল ইসলাম বলেছেন, ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়ে যে পর্যায়ে গেছে, তাতে ব্যাংক একীভূত করার কোনো বিকল্প নেই। তবে একীভূতকরণ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে আছেন আমানতকারীরা। গতকাল রোববার রাজধানীর হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে ডিসিসিআই আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি।

অবশ্য এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে একই অনুষ্ঠানে আশ্বস্ত করেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। তিনি বলেন, হঠাৎ করে কিছু হবে না। সব ধরনের নিয়ম মেনেই এটি করা হবে।
একই অনুষ্ঠানে কয়েকজন বক্তা ইচ্ছাকৃত খেলাপি এবং ঋণের টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন। এ ছাড়া সুদহার দ্রুত বাড়ানোর কারণে অর্থনীতিতে প্রভাবসহ বিভিন্ন বিষয়ও আলোচনায় উঠে আসে। ডিসিসিআই আয়োজিত এ আলোচনায় সহযোগিতা করে দৈনিক সমকাল এবং চ্যানেল টোয়েন্টিফোর। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
আফতাব-উল ইসলাম বলেন, গভর্নরের একটি ঘোষণার পর গত দুই-তিন মাস ধরে ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। এ নিয়ে প্রচুর সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয় লেখা হচ্ছে। এখন আগামী ৬ মাস বা এক বছরের মধ্যে কীভাবে ব্যাংক একীভূত হবে তা নিয়ে আমানতকারীদের মধ্যে আতঙ্ক আছে। একটা শক্তিশালী ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংক একীভূত হলে ভালো ব্যাংকের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে কিনা তা নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে।

তিনি বলেন, মানুষ জানতে চায় বাধ্যতামূলক এক ব্যাংকের সঙ্গে আরেকটি ব্যাংক এক করে দেওয়া হবে, নাকি কোনো চয়েজ দেওয়া হবে। একীভূত করলে আমানতকারীর ওপর কোনো প্রভাব পড়বে কিনা সেটিও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ছাড়া ভালো ব্যাংক যদি খারাপ ব্যাংককে নিতে না চায় সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থান কী হবে।
তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ অনেক বেড়েছে। এখন যে পর্যায়ে গেছে তাতে ব্যাংক একীভূত করা ছাড়া উপায় নেই। তবে এ ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী দেশে কীভাবে একীভূত করা হয়েছে, তাদের অভিজ্ঞতা কী– এসব দেখে এগোতে হবে। এ ছাড়া আগামী বাজেটে এ বিষয়ে একটি ঘোষণার জন্য অর্থমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ বলেন, একীভূতকরণ হলে সব ধরনের নিয়ম পর্যালোচনা করে এবং আশপাশের দেশের অভিজ্ঞতার আলোকেই হবে। ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে একটি পথনকশা ঘোষণা করেছে। আবার খেলাপি ঋণ কেনার জন্য সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এ জন্য আলাদা আইন নেই। এখন আইন করার জন্য ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনে ইচ্ছাকৃত খেলাপি ও অনিচ্ছাকৃত খেলাপির বিষয়টি বিভাজন করা হয়েছে। এসবের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কমানো হবে। ঋণ নিয়ে যথাসময়ে পরিশোধ করলে অর্থপ্রবাহ বাড়বে। আর সংকট থাকবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, সব ধরনের নিয়ম মেনেই ব্যাংক একীভূত করা হবে। এরই মধ্যে খেলাপি ঋণ কমাতে একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। সে আলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করছে।

নতুন সুদহার ব্যবস্থার সমালোচনা করে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আলী জওহর রিজভী বলেন, সুদহারের বর্তমান ব্যবস্থাকে ‘স্মার্ট’ বলা হলেও এ ব্যবস্থা অত্যন্ত ‘আন স্মার্ট’। এভাবে সুদহার বাড়লে অর্থনীতি গতিশীল বা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হবে না। খেলাপি ঋণ না কমে আরও বাড়বে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে গত জুন পর্যন্ত সুদহারের সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সীমা দেওয়া ছিল। জুলাই থেকে নতুন ব্যবস্থা চালুর ফলে এখন তা বেড়ে ১৩ শতাংশের ওপরে উঠেছে। আর সিএমএসএমই খাতের জন্য যা ১৪ শতাংশের ওপরে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি জাতীয় সংসদ সদস্য ও এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি এ. কে. আজাদ বলেন, ৯ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে এখন ১৪ শতাংশ গুনতে হচ্ছে। বাড়তি এই সুদের কারণে অনেকে খেলাপি হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, ঋণ নিয়ে যারা বিনিয়োগ না করে বিদেশে নিয়ে গেছে তাদের তালিকা প্রকাশ করা দরকার। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিটি ব্যাংকে বিশেষ নিরীক্ষা করে এ ধরনের খেলাপিদের একটা তালিকা প্রকাশ করতে পারে। তাহলে সমাজে তারা চাপে পড়বে।

samakal

Exit mobile version