Site icon The Bangladesh Chronicle

ব্যাংক ঋণের সুদহার আরও বেড়েছে

ব্যাংক ঋণের সুদহার আরও বেড়েছেব্যাংক ঋণের সুদহার আরেক দফা বাড়ল। চলতি এপ্রিল মাসে ব্যাংক ঋণের বিপরীতে সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ সুদ আরোপ করতে পারবে ব্যাংক। গত মার্চ মাসে যা ছিল ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ। সুদহার নির্ধারণের পদ্ধতি ‘স্মার্ট’ রেট বেড়ে যাওয়ার কারণে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের সুদ হার আরও বাড়ল। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক স্মার্টের সঙ্গে মার্জিনের হার কমিয়েছে।

এ হিসাবে জুলাইয়ের পর গত ৯ মাসে ঋণের সুদের হার ৪ দশমিক ৪৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়েছে। সুদহার নির্ধারণের স্মার্ট পদ্ধতিতে সরকারি ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের মুভিং এভারেজ রেট বা গড় হারকে স্মার্ট বলা হয়। গত বছরের জুলাই থেকে স্মার্ট পদ্ধতির সুদহার নির্ধারণ পদ্ধতি প্রচলন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পর প্রতি মাসে স্মার্ট প্রকাশ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে দুয়েকটি ক্ষেত্র ছাড়া ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নির্ধারিত ছিল। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক আইএমএফের পরামর্শে ৯ শতাংশের সীমা প্রত্যাহার করে নেয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে স্মার্ট রেট দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশে। এর সঙ্গে ৩ শতাংশ মার্জিন যোগ করলে ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার দাঁড়ায় ১৩ দশমকি ৫৫ শতাংশ।  গত এক বছরের মধ্যে গত মাসেই স্মার্ট রেট সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে স্মার্ট রেট  ছিল ৯ দশমকি ৬১ শতাংশ।  গত জানুয়ারি মাসে ছিল  ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

গত জুলাই থেকে প্রচলনের পর প্রতি মাসে স্মার্ট বেড়েই চলেছে। স্মার্ট রেট অনেক বেড়ে যাওয়ায় গতকাল এক সার্কুলারে বাংলাদেশ ব্যাংক স্মার্টের সঙ্গে যোগ করা মার্জিন সাড়ে ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করেছে। না কমালে এপ্রিলে ঋণের সুদহার দাঁড়াত ১৪ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।

মতামত জানতে চাইলে বেসরকারি ব্যাংক দি সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন সমকালকে বলেন, এখন পর্যন্ত যে  সুদহার আছে, তা ঠিক আছে। কিন্তু যে হারে স্মার্ট বাড়ছে, তাতে ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ হলে  ঋণ নিয়ে ব্যবসায়ীরা ফেরত দিতে পারবেন কিনা, তাও ভেবে দেখতে হবে।

সুদহার বৃদ্ধির পরও গত ছয় মাসে ব্যাংক ঋণের পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে– এমনটা জানিয়ে মাসরুর আরেফিন বলেন, সুদহার বাড়লেও এখনও ঋণের চাহিদা আছে। সুদহার আরও বাড়লে অনেকে ঋণ নেবেন। তবে এর থেকে আর বাড়তে দেওয়া উচিত নয়।

সিটি ব্যাংকের এমডি বলেন, শুধু ব্যাংকের আমানতকারীদের ভালো দেখলে হবে না, ব্যবসায়ীদের দিকও দেখতে হবে। ব্যবসায়ীরা যদি ঋণ নিয়ে মুনাফা না করতে পারেন, তবে কী করে ঋণ ফেরত দেবেন। যদি ফেরত দিতে না পারেন, তাহলে ক্ষতি সবার। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সামনে এগোতে হবে। অন্যথায় বিপদ অপেক্ষা করছে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম সম্প্রতি সমকালকে বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের স্মার্ট ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতি মাসে সুদহার বাড়ানো হচ্ছে। এভাবে সুদহার বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসার খরচ বাড়ছে। আগামী জুনের মধ্যে যেন নতুন করে আর সুদহার না বাড়ানো হয়, সে দাবি জানান তিনি।

সম্প্রতি ঢাকা চেম্বার আয়োজিত এক প্রাক-বাজেট আলোচনায় কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা বলেন, এভাবে সুদহার বাড়লে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ আসবে না। নতুন কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হবে। কেবল বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের ফর্মুলায় দেশ চলবে না। যদিও একই বৈঠকে উপস্থিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কোনো বিকল্প নেই। তবে ব্যবসা-বাণিজ্য যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্যই অনেক দেশের তুলনা কম আগ্রাসীভাবে সুদ বাড়ানো হয়েছে। স্মার্ট ব্যবস্থার মাধ্যমে সুদহার না বাড়ালে একবারে আরও অনেক বেড়ে ব্যবসার ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি করত। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এর আগে বিভিন্ন সময়ে মূল্যস্ফীতি কমাতে অর্থনীতিবহির্ভূত বিষয় তথা বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

সমকাল

Exit mobile version