Site icon The Bangladesh Chronicle

ব্যাংকে আবারো খেলাপি ঋণ বাড়ার আশঙ্কা

Daily Nayadiganta

ব্যাংকে আবারো খেলাপি ঋণ বাড়ার আশঙ্কা – নয়া দিগন্ত

দীর্ঘ এক বছর ঋণ আদায়ের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগত শিথিলতা গত ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে। এরপর দুই মাস পার হয়ে তিন মাসে পড়েছে; কিন্তু ঋণ আদায় কার্যক্রম সন্তোষজনক হচ্ছে না। অনেকেই নীতিমালা শিথিলের কার্যকারিতা বাড়ানোর অপেক্ষায় রয়েছেন। ঋণ আদায়ের গতি ফিরে না এলে ব্যাংকিং খাতে আবারো খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যাংকাররা। এতে ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত ব্যাংকাররা সাদরে গ্রহণ করলেও উদ্যোক্তারা নতুন আবদার নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে হাজির হন। ইতোমধ্যে চিঠি দিয়ে এ আবদারের কথা বিএবির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি তাদের আবদার মেনে নেয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নরের সাথে বিএবি নেতারা বৈঠক করেন।

 

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ঋণ আদায় সন্তোষজনক না হলে ব্যাংকে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ আবারো বেড়ে যাবে। যেসব ঋণ খেলাপির আগের স্তরে ছিল ওইসব ঋণ এখন খেলাপি ঋণে পরিণত হবে। ফলে সামগ্রিকভাবে বেড়ে যাবে খেলাপি ঋণ। আর বেড়ে গেলে ব্যাংকগুলোকে বর্ধিতহারে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। এতে অনেক ব্যাংকই লোকসানের মুখে পড়বে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বর্তমানে ঋণ আদায়ে ধীরগতির প্রভাব কিছু ব্যাংক বাদে বেশির ভাগ ব্যাংকেই পড়ছে না। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে করোনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ওপর ৫০ শতাংশ পুনঃঅর্থায়ন তহবিল পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তহবিল জোগান দেয়ার জন্য প্যাকেজ থেকে ব্যবসায়ীদের ১০০ টাকা ঋণ বিতরণ করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৫০ টাকার তহবিল পাওয়া যাচ্ছে। অপর দিকে আমদানি চাহিদা কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের মাধ্যমে পাচ্ছে তার একটি অংশ ব্যবহার না হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে নগদ টাকার জোগান দিচ্ছে। পাশাপাশি চলমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোও আর আগের মতো ঋণ বিতরণ করছে না। অর্থাৎ অনেকটা দেখেশুনে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। এতে প্রায় প্রতিটি ব্যাংকের হাতেই উদ্বৃত্ত তহবিল রয়েছে। সবমিলেই নগদ আদায় কমে যাওয়ার প্রভাব তেমন পরিলক্ষিত হচ্ছে না। কিন্তু সামনে বিনিয়োগ চাহিদা বেড়ে যাবে। ব্যাংকগুলোকেও তা বাড়াতেই হবে। কারণ, আমানতকারীদের অর্থ বিনিয়োগ না করলে ব্যাংকগুলোর মুনাফা কমে যাবে। পরিচালন ব্যয় মিটিয়ে সুদে-আসলে আমানতকারীদের দিন শেষে তা ফেরত দেয়া কষ্টকর হবে। তাই বর্তমানে নগদ আদায় বাড়াতে না পারলে সামনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তখন ব্যাংকগুলোর হাতে বিনিয়োগ করার মতো অর্থ থাকবে না।

খেলাপি ঋণের পাশাপাশি নিয়মিত ঋণ আদায়ের গতি শ্লথ হওয়ার কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধ না করার সংস্কৃতি চালু হওয়ায় যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করতেন তারাও উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। নিয়মিত ঋণ আদায় কমে যাওয়ার এটাই বড় কারণ বলে তারা মনে করেন। নিয়মিত ঋণ আদায় কমে গেলে এসব ঋণ আবার খেলাপি হয়ে যাবে। তাদের মতে, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরো কঠোর হাতে মনিটরিং করতে হবে। ঋণ আদায়ের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা যথাযথ পরিপালনে ব্যাংকগুলোকে বাধ্য করতে হবে। অন্যথায় খেলাপি ঋণ আরো বেড়ে যাবে। ইতোমধ্যে খেলাপি ঋণের পাহাড় জমে গেছে। এ পরিস্থিতিতে বেকায়দায় পড়বে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। আর মাঝারিরা উঠতে না পারলে বড় উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে না। সবমিলে দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় বিপর্যয় এড়ানো যাবে না।

Exit mobile version