Site icon The Bangladesh Chronicle

ব্যবসায় মন্দা, চার শতাধিক জাহাজ কেটে বিক্রি

মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন, চট্টগ্রাম অফিস

২৭ মার্চ ২০২৩

https://www.ittefaq.com.bd/637432

পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত লাইটারেজ জাহাজ ব্যবসায় চরম মন্দা চলছে। অধিকাংশ পণ্য দেশের বৃহৎ শিল্পগ্রুপ আমদানি করছে। তারা পণ্য পরিবহনে নিজেরাই লাইটারেজ জাহাজ ও ট্রাক কিনেছে। এতে বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত লাইটারেজ জাহাজমালিকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। একটি জাহাজের মাসে এক ট্রিপের বেশি ভাড়া মিলছে না

 

সংশ্লিষ্টরা জানান, এমনিতে ভাড়া কমে গেছে, তার মধ্যে জাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ও নৌপথে বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজির কারণে জাহাজ চলাচলে খরচ বেড়ে গেছে। লোকসানের কারণে ইতিমধ্যে প্রায় ৪ শতাধিক লাইটারেজ জাহাজ কেটে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত কয়েক বছর যাবত্ লাইটারেজ জাহাজ ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। জ্বালানি তেলের মূল্য ও শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধির কারণে বেড়ে গেছে খরচ।  নৌপথে বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজির কারণে পরিবহন খরচ আরো বেড়ে গেছে। শিল্প গ্রুপগুলো তাদের নিজস্ব পণ্য পরিবহনের জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় লাইটারেজ জাহাজ চালু করেছে। ফলে বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত লাইটারেজ জাহাজের চাহিদা কমে গেছে। এতে ভাড়া কমে যাওয়ায় জাহাজ মালিকদের লোকসান দিতে হচ্ছে।

লাইটারেজ জাহাজমালিক শফিক আহমেদ বলেন, ‘শিল্প গ্রুপগুলো যদি তাদের আমদানি করা ৫০ শতাংশ পণ্য আমাদের জাহাজে পরিবহন করে, তাহলে আমরা লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারব। একটি জাহাজ একবার ডকে তুললে ৬০ থেকে ৮০ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। তিন বছর পর পর ডকে তুলতে হয়। জাহাজ চলাচল ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেড়ে গেছে। এতে অনেকেই জাহাজ বিক্রি করে দিয়েছে। অসাধু গুটিকয়েক জাহাজমালিক নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কম ভাড়ায় পণ্য পরিবহনে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত  হচ্ছি।’

জাহাজমালিকরা জানান, জাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ খরচও বেড়ে গেছে। চট্টগ্রাম থেকে পণ্য নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করা হয়। একটি জাহাজ ১ হাজার টন থেকে আড়াই হাজার টনের ওপরে পণ্য পরিবহন করে। চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জে পণ্য নিয়ে এক বার যেতে প্রায় ৩ হাজার ২০০ লিটার জ্বালানি তেল ছাড়াও তার বাইরে প্রায় ১৮ হাজার টাকা খরচ পড়ে। তবে সরকারিভাবে নির্ধারিত বেশি ভাড়া আদায় করা যায় না। ফলে এক দিকে ভাড়া কম ও নির্ধারিত দরে পরিবহন ভাড়ায় এই ব্যবসায় লোকসান বেড়ে গেছে। বর্তমানে ১ হাজার টনের একটি নতুন জাহাজ তৈরিতে ৪-৫ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে।

এখন জাহাজ দেশে তৈরি হচ্ছে। জাহাজ নির্মাণের খরচ মেটাতে ব্যাংক ঋণ নেন মালিকরা। কিন্তু ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেড়ে গেছে। আয় কমে যাওয়ায় জাহাজ মালিকরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে  ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। লোকসানের কারণে ইতিমধ্যে প্রায় ৪০০ লাইটারেজ জাহাজ কেটে স্ক্যাপ হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছেন।

চট্টগ্রামে লাইটারেজ জাহাজমালিকদের ওয়াটার সেল নামে একটি সংগঠন রয়েছে। এই সংগঠনের মাধ্যমে দৈনিক জাহাজের সিরিয়াল দেওয়া হয়। সংগঠনের আওতায় একসময় দেড় হাজারের বেশি জাহাজ থাকলেও বর্তমানে এক হাজারের মতো জাহাজ চলাচল করছে। মাদার ভেসেলে বিদেশ থেকে আনা পণ্য বহির্নোঙরে খালাসের পর ছোট আকারের লাইটারেজ জাহাজে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছানো হয়। কিন্তু সিরিয়ালে থাকা জাহাজ অনুপাতে ভাড়া নেই। একটি জাহাজ মাসে এক বারের বেশি ভাড়া পাচ্ছে না। পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় বর্তমানে দৈনিক ৫০ থেকে ৬০টির মতো জাহাজ চলাচল করছে। সিরিয়ালের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।

বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালিত জাহাজ চলাচলে জাহাজমালিকদের মধ্যে বিরোধও রয়েছে। ওয়াটার সেলভুক্ত জাহাজগুলো সরকারনির্ধারিত হারে ভাড়ায় নিয়ে পণ্য পরিবহন করে। কিন্তু ওয়াটার সেলের বাইরেও প্রায় ৫০-৬০ লাইটারেজ জাহাজ পণ্য পরিবহন করছে। ওয়াটার সেলভুক্ত জাহাজমালিকদের অভিযোগ সমিতির বাইরে থাকা এসব জাহাজ কম রেটে পণ্য পরিবহন করছে। কম রেটের কারণে কিছু আমদানিকারক এসব জাহাজে পণ্য পরিবহন করছে। এর ফলে সমিতিভুক্ত জাহাজের চাহিদা কমে গেছে।

বাংলাদেশ কার্গো ভ্যাসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নুরুল হক বলেন, বিদেশ থেকে আনা পণ্যের একটি বৃহত্ অংশ আমদানি করে কয়েকটি শিল্প গ্রুপ। এখন তারা নিজেরাই পণ্য পরিবহনের জন্য ৪০-৫০ টনের সক্ষমতার জাহাজ ও ট্রাক কিনেছে। পণ্য কম আমদানি হচ্ছে, তা নয়। তাদের জাহাজে ও ট্রাকে পণ্য পরিবহন হচ্ছে। এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কিছু অসাধু জাহাজ মালিক। তারা কম রেটে পণ্য পরিবহন করছে। আমাদের জাহাজের ভাড়া কমে গেছে। ক্রমাগত লোকসানের কারণে অনেকেই জাহাজ কেটে ফেলেছে। শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছি না।

 

Exit mobile version