Site icon The Bangladesh Chronicle

বেসরকারি হাসপাতালে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা কীভাবে সম্ভব

বেসরকারি হাসপাতালে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা কীভাবে সম্ভব – ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে গত ৭১ দিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২২ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ায় দেশব্যাপী চিকিৎসার পরিধি বাড়ানোর প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। লকডাউন যেহেতু শিথিল করা হয়েছে তাই সামনের দিনগুলোয় করোনাভাইরাস রোগী সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই তারা আশঙ্কা করছেন।

এমন অবস্থায় দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালকে কোভিড-১৯এ আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেয়ার আওতায় আনা প্রয়োজন বলে তারা মনে করছেন।

বাকি বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে কোভিড-১৯ এর চিকিৎসার আওতায় আনার জন্য সরকারকে যৌথ কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজির আহমেদ।

তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়তে থাকায় সময় এসেছে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে এই সেবা কাজে অন্তর্ভুক্ত করার। এক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সাথে সরকারের একটি যৌথ কর্মপরিকল্পনা করা প্রয়োজন। যেখানে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর কিছুটা লাভ হবে আবার সরকার এমনভাবে আলোচনা করবে যাতে জনগণ সেবাটা পায়।’

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হাবিবুর রহমান খান জানিয়েছেন তারা বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় যুক্ত হতে অনুরোধ করবেন, কিন্তু কোন চাপ দেবেন না।

তিনি জানিয়েছেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলো চাইলে কোভিড রোগীদের থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নিয়ে চিকিৎসা দিতে পারবে। সরকার তাদেরকে কোন টাকা দেবে না। সরকার কেবল সরকারি তত্ত্বাবধানে থাকা হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা ব্যয় বহন করবে।

খান বলেন, ‘ট্রিটমেন্টের বিনিময়ে বা ট্রিটমেন্টের পরীক্ষা নিরীক্ষার বিনিময়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলো রোগীদের থেকে যুক্তিসঙ্গত খরচ নিতে পারবে। সরকার শুধুমাত্র কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের খরচ বহন করবে।’

তিনি আরো জানান, ‘আমরা বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে কিছু দিচ্ছি না, কোন কিছু দাবিও করছি না। আমাদের অনুরোধ থাকবে দেশের এই দুর্যোগকালে মুনাফার মানসিকতা পরিহার করে তারা যেন জনসেবায় যুক্ত হন।’

এ প্রসঙ্গে বেনজির আহমেদ বলেছেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে যেমন ছাড় দিতে হবে তেমনি সরকারেরও ওই হাসপাতালগুলোর সুবিধার কথা কিছুটা হলেও ভাবতে হবে। তবে সেই সুবিধাগুলো যেন সহনীয় পর্যায়ে থাকে সেদিকে মনোযোগ দেয়ার কথাও জানান তিনি।

বাংলাদেশের সব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সন্দেহভাজন কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য আলাদা ব্যবস্থা রাখার বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ গত মাসে নির্দেশনা জারি করলেও তার কোন বাস্তবায়ন হয়নি।

বরং প্রতিদিন অসংখ্য রোগীকে নিয়মিত চিকিৎসা পেতেও নানা ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। ৬৩ বছর বয়সী ফেরদৌস আরা বেগমকে সপ্তাহে দুইবার কিডনির ডায়ালায়সিস করাতে হয়। কিন্তু গত ১০ দিনে তিনি একবারও ডায়ালায়সিস করতে পারেননি।

কারণ কোনো হাসপাতাল করোনাভাইরাসের রিপোর্ট ছাড়া তাকে চিকিৎসা দিতে রাজি হচ্ছেনা।

অথচ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টেস্ট করার মতো সক্ষমতা সবার নেই। তা সত্ত্বেও যারা টেস্ট করছেন তারা ৩ দিন ৪ দিন পেরিয়ে গেলেও রিপোর্ট হাতে পাচ্ছেন না। এভাবে চিকিৎসা পেছাতে থাকায় মিসেস ফেরদৌসের নানা ধরণের শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে শুরু করেছে।

তার ছেলে হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আম্মাকে যে হাসপাতালে রেগুলার ডায়ালায়সিস করাই, সেখানে এখন ঢুকতে দিচ্ছেনা। পরে আরও ৪টা হাসপাতাল ঘুরলাম, সবাই শুধু করোনাভাইরাসের রিপোর্ট চায়। পরে অসুস্থ রোগীকে নিয়ে লাইনে দাঁড়ায় টেস্ট করালাম। বলল যে সর্বোচ্চ ৭১ ঘণ্টা লাগবে। আজকে ৯৬ ঘণ্টা হয়ে গেল, রিপোর্ট পাই নাই। কবে পাবো কিছু বলেও না।’

এ অবস্থায় বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় ট্রায়োড পদ্ধতিতে কোভিড এবং সন্দেহভাজন কোভিড সব রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন মি. আহমেদ।

ট্রায়োড পদ্ধতি বলতে তিনি বুঝিয়েছেন যখন কোন দেশে সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে তখন দেশটির প্রতিটি হাসপাতালকে লাল, হলুদ, সবুজ- এই তিনটি ইউনিটে ভাগ করা হয়।

যখন কোন রোগী হাসপাতালের রিসেপশনে আসবেন তখন রিসেপশনিস্টের দায়িত্ব হবে সেই রোগীকে মূল্যায়ন করে আলাদা আলাদা ইউনিটে পাঠানো।

যদি এমন কোন রোগী আসেন যাদের সংক্রামক রোগের কোন লক্ষণ নেই, তিনি সংক্রমিত কারও সংস্পর্শে আসেননি বা সম্প্রতি সংক্রমিত এলাকায় ভ্রমণ করেননি, তাহলে তাকে সবুজ জোনে পাঠিয়ে তার রোগ অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া হবে।

রোগীর যদি সংক্রামক ব্যাধির লক্ষণ থাকে, অথবা তিনি আক্রান্ত ব্যক্তি বা এলাকার সংস্পর্শে এসেছেন এমন ইতিহাস থাকে তাহলে তাকে হলুদ ইউনিটে পাঠিয়ে হাসপাতালেই তার করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করা হবে।

পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসলে তাকে সবুজ ইউনিটে পাঠিয়ে দেয়া হবে এবং ফল পজিটিভ আসলে পাঠিয়ে দেয়া হবে লাল ইউনিটে।
এই লাল ইউনিটে ওই সংক্রামক ব্যাধির যাবতীয় চিকিৎসা সেবা সরবরাহ করা হবে।

বাংলাদেশের প্রতিটি হাসপাতালে এই চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতালগুলোর কর্মকর্তা, কর্মচারী ও চিকিৎসকদের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে বলে জানিয়েছেন আহমেদ।

সহায়ক পরিবেশ বলতে তিনি বুঝিয়েছেন, করোনাভাইরাসের মতো সংক্রামক ব্যাধি মোকাবিলার মতো প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ যেন প্রত্যেকের থাকে।

সেইসঙ্গে নিজেদের সুরক্ষিত করার মতো পর্যাপ্ত সুবিধা যেমন ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী-পিপিই, হাত ধোয়া ও স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা যেন থাকে। বাংলাদেশের সব সরকারি হাসপাতালে এই ট্রায়োড পদ্ধতি চালু করার কথা ভাবছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

দ্রুত এই ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি পুরো চিকিৎসা পদ্ধতি যেন তদারকি করা হয়, সেটার ওপরও জোর দিয়েছেন আহমেদ।

সূত্র : বিবিসি

Exit mobile version