Site icon The Bangladesh Chronicle

বেসরকারি ব্যাংকেও বাড়ছে খেলাপি ঋণ, বাড়ছে প্রভিশন ঘাটতি

ব্যাংক

খেলাপি ঋণ এখন আর দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বড় সমস্যা নয়, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর জন্যও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও বাড়ছে খেলাপি ঋণ। সেই সঙ্গে ব্যাংক খাতে বাড়ছে প্রভিশন ঘাটতি।

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক উপস্থাপনায় দেখানো হয়েছে, ২০১১-১২ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে দেশের মোট খেলাপি ঋণের ৩১ শতাংশ ছিল বেসরকারি ব্যাংকে; ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা ৪৯ শতাংশে উঠেছে। বেসরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির এই চিত্র থেকে বোঝা যায়, গত ১২ বছরে এসব ব্যাংকেরও অবনতি হয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের সামনে কী’ শীর্ষক সংলাপে বৃহস্পতিবার এই উপস্থাপনা দেওয়া হয়।

উপস্থাপনায় বলা হয়, গত ১০ বছরে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়ে তিন গুণের বেশি হয়েছে। ২০১১-১২ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে দেশের ব্যাংক খাতের মোট খেলাপি ঋণ ছিল ৪২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। ফলে বেসরকারি ব্যাংকও এখন তার প্রভাব এড়িয়ে চলতে পারছে না।

তবে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ এর চেয়েও অনেক বেশি বলে মনে করে সিপিডি। তারা বলছে, বিশেষ হিসাবের ঋণ, আদালতের নিষেধাজ্ঞায় থাকা ঋণ ও পুনঃ তফসিলকৃত ঋণ বিবেচনায় নেওয়া হলে এই ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। অবলোপন করা ঋণ ও পুনঃ তফসিল করা সব ঋণ হিসাব করে তারা বলেছে, ব্যাংক খাতের মোট খেলাপি ঋণ ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৯২২ কোটি টাকা।

এই বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণের কারণে সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতের স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর পক্ষে যথাযথ প্রভিশনিং করাও সম্ভব হচ্ছে না। সিপিডি বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে প্রভিশনিংয়ের মোট চাহিদা ছিল ৯৮ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা; কিন্তু এর বিপরীতে প্রভিশনিং রাখা হয়েছে ৭৯ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ যতটা প্রয়োজন ছিল, তার ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ প্রভিশন রাখা গেছে।

দেখা যাচ্ছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ প্রায় সমান, যদিও বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি।

এ ছাড়া ব্যাংক খাতের আয়-ব্যয়ের অনুপাত পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছে। ২০০৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর গড় আয়-ব্যয় অনুপাত ছিল শূন্য দশমিক ৮১; বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে যা ছিল শূন্য দশমিক ৭৪। ব্যাংকগুলোর আয়-ব্যয়ের অনুপাত শূন্য দশমিক ৫-এর নিচে থাকলে ধরে নেওয়া হয়, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা ঠিকঠাক আছে। শূন্য দশমিক ৫ থেকে ১-এর মধ্যে থাকলে ধরে নেওয়া হয়, ব্যাংকের অবস্থা ভালো নয়। এ ছাড়া ব্যাংক খাতের রিটার্ন অন অ্যাসেট ও রিটার্ন অন ইক্যুইটি পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছে।

এদিকে ব্যাংক খাতের অতিরিক্ত তারল্যও কমেছে। ২০২১ সালের জুন মাসে ব্যাংক খাতের অতিরিক্ত তারল্য ছিল ২ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা; ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তা ১ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে।

বিশ্লেষকেরা বলেন, বর্তমানে মাত্র ২ শতাংশ টাকা জমা দিয়েই ঋণ পুনঃ তফসিল করা যাচ্ছে। একসময় প্রথমবার পুনঃ তফসিলে ১০ শতাংশ, দ্বিতীয়বারে ২০ শতাংশ ও তৃতীয়বার পুনঃ তফসিলে ৩০ শতাংশ অর্থ জমা দিতে হতো। তখন মানুষ সাধারণত এই পথে পা বাড়াতেন না; কিন্তু এখন বাংলাদেশ ব্যাংক যে সুযোগ দিয়েছে, তাতে সবাই মহা আনন্দে এ পথে পা বাড়াচ্ছেন। এ ছাড়া অনেক ঋণ বেনামে নেওয়া হচ্ছে; সেই ঋণ কোথায় যাচ্ছে, কেউ জানে না। আবার তা ফেরতও আসছে না। যাঁর চাহিদা ২০ কোটি টাকার ঋণ, তাঁকে ৫০ কোটি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ আছে। ফলে ব্যাংকের স্বাস্থ্য খারাপ হচ্ছে, সমাজে বৈষম্য বাড়ছে।

prothom alo

Exit mobile version