শর্ত সাপেক্ষে বেসরকারি খাতের ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার্স (আইপিপি), রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ১ হাজার কোটি টাকা গত সোমবার ছাড় করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এই অর্থ দিয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এসব কেন্দ্রের ২০২৩ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের ভর্তুকি বাবদ পাওনার আংশিক পরিশোধ করবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
অর্থ ছাড়পত্রটি বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। এতে বলা হয়, ইতোমধ্যে আইপিপি, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বকেয়া বিলের পুরোটা এবং ২০১৩ সালের জানুয়ারির আংশিক নগদ ও বিশেষ বন্ডের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে। যার পরিমাণ ২ হাজার ১৩২ কোটি টাকা। জানুয়ারির বাকিটুকু অর্থাৎ ৩৬৯ কোটি ৮৬ লাখ এবং ফেব্রুয়ারির ২ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকার আংশিক ৬৩০ কোটি ১৪ লাখ টাকা পরিশোধের জন্য মোট ১ হাজার কোটি টাকা বিপিডিবির অনুকূলে ছাড় করা হলো।
তবে বিপিডিবির মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের মধ্যে এ অর্থ বণ্টনের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে– এ অর্থ বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পেট্রোবাংলার অধীনস্থ গ্যাস কোম্পানির বকেয়া বিল পরিশোধ ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যাবে না। বিল পরিশোধের বিবরণী অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে। আইপিপি, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাসভিত্তিক আর্থিক ক্ষতির বিবরণী পৃথকভাবে পরবর্তী মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে। এ ছাড়া এই অর্থ ভবিষ্যতে অডিটের মাধ্যমে নিরূপিত মোট প্রদেয় অর্থের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জের পরিমাণ যৌক্তিকভাবে কমিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সুষ্ঠু ভর্তুকি ব্যবস্থাপনার স্বার্থে বিপিডিবি ও এর অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিটগুলোতে রিয়েল টাইম ডেটানির্ভর ইআরপি সফটওয়্যার অতিসত্বর বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে বিদ্যমান বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি নবায়ন অথবা নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন বিবেচনার জন্য অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে।
জানা গেছে, আগের অর্থবছরের বকেয়াসহ চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের নভেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুতের ভর্তুকি বাবদ বকেয়া দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা। বিপরীতে এই ১ হাজার কোটিসহ মোট ১৬ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বাজেট থেকে পিডিবিকে দেওয়া হয় ৭ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উদ্যোক্তাদের ঋণের বিপরীতে সরকারি-বেসরকারি খাতের অন্তত ২৪টি ব্যাংককে ৯ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকার বিশেষ বন্ড দেওয়া হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গত জুন শেষে বিদ্যুৎ ও সারে ভর্তুকি বাবদ সরকারের বকেয়া দাঁড়ায় প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। এসব ক্ষেত্রে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে কয়েক দফা দামও বাড়ানো হয়। সব মিলিয়ে আশা করা হয়েছিল, চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি চাহিদা কমবে। এতে এ বছরের বাড়তি বরাদ্দ থেকে গত এবং চলতি অর্থবছরের ভর্তুকির পাওনা পরিশোধ করা হবে। এসব বিবেচনায় চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুতের ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয় ৩৬ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছর ছিল ২৩ হাজার কোটি টাকা।
কিন্তু ভর্তুকি চাহিদা না কমার পাশাপাশি নগদ অর্থের সংকটে পড়ে সরকার। এ অবস্থায় বকেয়া ও চলতি অর্থবছরের ভর্তুকি ও প্রণোদনা বাবদ অর্থ পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়ায় পাওনাদারদের ব্যাংক ঋণের সমপরিমাণ বন্ড সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অনুকূলে ইস্যুর সিদ্ধান্ত হয়। সার ও বিদ্যুৎ খাতের বিভিন্ন উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানের ৪০টি ব্যাংকে ২৫ হাজার কােটি টাকার দায় রয়েছে। অন্তত ২২ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বন্ড ইস্যু করার সিদ্ধান্ত হয়।
অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, চলতি অর্থবছরের মধ্যেই বকেয়াসহ ভর্তুকি পরিশোধ করার লক্ষ্য ছিল সরকারের। কিন্তু পর্যাপ্ত অর্থের সংস্থান না থাকায় অর্থবছরের সাত মাস পার হয়ে গেলেও প্রয়োজনীয় পরিমাণ অর্থ ছাড় সম্ভব হয়নি। তবে আগামীতে সরকারের আর্থিক অবস্থা ভালো হলে বাজেট থেকেই ধীরে ধীরে এসব বকেয়া পরিশোধ হবে।
Samakal