Site icon The Bangladesh Chronicle

বেনজীর-মতিউরের নামে মামলা এ সপ্তাহেই

বেনজীর-মতিউরের নামে মামলা এ সপ্তাহেইবেনজীর ও মতিউর

সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ ও সদ্য সরিয়ে দেওয়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে আইনের আওতায় আনার ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আর সময় নেবে না। এরই মধ্যে দু’জনের নামে বিপুল সম্পদের তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটি। এর ভিত্তিতে এ সপ্তাহের মধ্যেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। তাদের পরিবারের অভিযুক্ত সদস্যদেরও মামলায় আসামি করা হবে। দুদকের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

দুদক সূত্র জানায়, এরই মধ্যে তিন দফায় বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যের বিপুল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করা হয়েছে। ওই সব সম্পদ তাঁর বৈধ আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ। এজন্য তাদের অর্থসম্পদকে অপরাধলব্ধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

একইভাবে এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য রয়েছে দুদকের হাতে; যা তাঁর বৈধ আয়ের চেয়ে অস্বাভাবিক। দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চাকরিজীবনে তিনি বৈধ অর্থ উপার্জন করেছেন গাণিতিক হারে, আর অবৈধ সম্পদ কামিয়েছেন জ্যামিতিক হারে।

বেনজীর ও মতিউর ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে এবং সেগুলো ভোগদখলে রেখে দুদক আইনে শান্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তারা অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে উপার্জিত অপরাধলব্ধ অর্থ হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপন করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। ওই সব ধারায় তাদের বিরুদ্ধে আলাদা আলাদা মামলা হবে।

গেল ২৩ ও ২৬ মে আদালতের আদেশে বেনজীর, তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে থাকা বিপুল সম্পদ, ব্যাংক হিসাব, শেয়ারসহ অন্য সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করা হয়। তাদের নামে থাকা ৮৩টি দলিলে ৬২১ বিঘা জমি, গুলশানের চারটি ফ্ল্যাট জব্দ, ৩৮টি ব্যাংক হিসাব ও তাদের মালিকানার কোম্পানিও অবরুদ্ধ করা হয়েছে। ওই দুই দিনে বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যের নামে থাকা ৩৩ কোটি টাকার বেশি সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

ঢাকা, সাভার, রূপগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ওই সব সম্পত্তি বেনজীর, তাঁর স্ত্রী জীশান মীর্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাশিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে রয়েছে।

বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যের বিরুদ্ধে গত ২২ এপ্রিল জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। গত ৩ মে পর্যন্ত তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা দেশেই ছিলেন। সপরিবারে বেনজীর সিঙ্গাপুর চলে যান গত ৪ মে। এ সময়ের মধ্যে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে তারা বিদেশে পাড়ি জমাতে পারতেন না।

এদিকে এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগে নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। চাকরিকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট, জমি, ব্যবসা, শেয়ার, ব্যাংকে জমানো টাকা, ব্যাংকে মেয়াদি আমানতসহ অন্য স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মালিক হয়েছেন। অপরাধলব্ধ অর্থ রেখেছেন দুই স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের নামেও। ঢাকা, গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী, বরিশালসহ বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি, জমি, রিসোর্ট, ফ্ল্যাট, প্লটসহ নানা সম্পদ রয়েছে নামে-বেনামে। অন্য স্থাবর সম্পদও রয়েছে। তাঁর প্রথম স্ত্রী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কনিজ, তাঁর মেয়ে ফারজানা রহমান ইস্পিতা ও ছেলে তৌফিকুর রহমান অর্ণব, দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবলী ও তাঁর ছেলে মুশফিকুর রহমান সিফাতের নামে রাখা হয়েছে নানা সম্পদ।

সম্প্রতি মতিউর রহমানের ছেলে ইফাতের ১২ লাখ টাকায় কোরবানির ছাগল কেনার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বেরিয়ে আসে আড়ালে থাকা এ সরকারি কর্মকর্তার সম্পদের পাহাড়।

samakal

Exit mobile version