Site icon The Bangladesh Chronicle

বেনজীর পরিবারের ৬২১ বিঘা জমি, চার ফ্ল্যাট ও ৩৩ ব্যাংক হিসাব জব্দের প্রক্রিয়া শুরু

বেনজীর আহমেদ

সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের স্থাবর সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ কার্যকর করা শুরু হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর প্রথম আলোকে বলেছেন, বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা জমি যাতে হস্তান্তর না হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট জেলার সাব-রেজিস্ট্রার বরাবর আদালতের জব্দের আদেশ পাঠানো হয়েছে। ব্যাংক হিসাবের অর্থ যাতে হস্তান্তর বা রূপান্তর না হয়, সে জন্য আদালতের আদেশ পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককেও।

দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর আদালতের সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন গত বৃহস্পতিবার বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক স্বজনের নামে থাকা ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি ক্রোক বা জব্দের আদেশ দেন। একই দিন বেনজীর ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নামে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে থাকা ৩৩টি ব্যাংক হিসাব (অ্যাকাউন্ট) অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়।

এরপর গত রোববার আদালত বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে থাকা মাদারীপুরে ২৭৬ বিঘা (৯১ একর) জমি এবং বেনজীর পরিবারের নামে থাকা গুলশানের চারটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন। একই দিন বেনজীর ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নামে থাকা ১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও তিনটি বিও হিসাব (শেয়ার ব্যবসা করার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) এবং ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়। সাভারে তাঁদের কিছু জমিও পড়েছে একই আদেশের মধ্যে।

দুদকের আরেক পিপি মীর আহমেদ আলী সালাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের আদেশের পর অভিযুক্ত ব্যক্তির স্থাবর সম্পদ ও ব্যাংক হিসাবের টাকা হস্তান্তরের কোনো সুযোগ নেই। কারণ, আদালতের আদেশ পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার যদি সম্পদ হস্তান্তরে করেন, তিনি আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত হবেন। তিনি আরও বলেন, ব্যাংক হিসাব কিংবা কোম্পানির শেয়ারও হস্তান্তর করা যাবে না।

জানতে চাইলে মীর আহমেদ আলী আরও বলেন, জব্দ মানে হলো যে অবস্থায় আছে, সে অবস্থায় থাকবে। ফ্ল্যাটে যদি কেউ বসবাস করেন, সেটা করতে পারবেন। তবে বিক্রি বা হস্তান্তর করা যাবে না।

দুদকের এই দুজন পিপি আরও জানান, আইন অনুযায়ী বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের বিষয়ে আদালতের আদেশের প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। সেই প্রজ্ঞাপন দুটি পত্রিকায় প্রকাশিত হবে।

পিপি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বেলেন, দুদক যদি মনে করে, বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সম্পদ দেখভালের জন্য তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করা প্রয়োজন, তখন কমিশন আদালতে আবেদন করবে।

বেনজীর পরিবারের বিও হিসাব অবরুদ্ধ

সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে শেয়ারবাজারে থাকা বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। শেয়ারবাজারে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বিও হিসাব ও শেয়ার ধারণের তথ্য সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড বা সিডিবিএলকে গতকাল সোমবার এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিএসইসির এ–সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় এসব বিও হিসাবে কোনো ধরনের লেনদেন করা যাবে না। অর্থাৎ এসব বিও হিসাব থেকে শেয়ার কেনাবেচা এবং অর্থ জমা বা তোলা যাবে না।

বিএসইসির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী শেয়ারবাজারে বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ছয়টি বিও হিসাব রয়েছে।

বিএসইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজকোর্টের সংশ্লিষ্ট আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচটি ব্রোকারেজ হাউসে থাকা ছয়টি বিও হিসাব পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত অবরুদ্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হলো।’

এ বিষয়ে বিএসইসির কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিও হিসাব অবরুদ্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়ার সত্যতা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র‍্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‍্যাব এবং র‍্যাবের সাবেক ও বর্তমান যে সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাঁদের মধ্যে বেনজীর আহমেদের নামও ছিল। তখন তিনি আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন।

সম্প্রতি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অনুসন্ধানে কমিটি করে দুদক।

সম্পদ জব্দের বিষয়ে বেনজীর আহমেদের মুঠোফোনে গত রোববার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। গতকাল সোমবার এই প্রতিবেদক যান রাজধানীর গুলশানের র‍্যানকন আইকন টাওয়ারে, যেখানে বেনজীর পরিবারের চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে। যদিও বেনজীর পরিবারের কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

ভবনটির নিরাপত্তাকর্মী সবুজ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, বেনজীর আহমেদ পরিবার নিয়ে ওই ভবনে থাকেন। তবে গত এক মাসে তিনি তাঁদের দেখেননি। ভবনটিতে তাঁরা আছেন কি না, তা তিনি জানেন না।

দুদক বলছে, বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বিপুল জমি ও কোম্পানির শেয়ারের মালিকানা দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অর্জন করেছেন।

prothom alo

Exit mobile version