সিইসি নুরুল হুদার বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্টের কাছে নালিশ করেছেন ড সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, খুশী কবির এবং সুলতানা কামাল সহ দেশের ৪২জন বিশিষ্ট ব্যক্তি! একজন অপরাধীর সবচেয়ে বড় অপরাধকে পাশ কাটিয়ে বা তাকে লঘু করে নেহায়েত নগণ্য কিছু অপরাধের জন্যে নালিশ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক এবং রাজনৈতিক পরিমন্ডলে একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। উক্ত নালিশের স্বপক্ষে জাতির আহ্লাদ বা উল্লাস তেমন করে গোচরীভূত না হলেও সরকারের পক্ষ থেকে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়ে গেছে !
যার কাছে নালিশ করেছেন, যার বিরুদ্ধে নালিশ করেছেন এবং যারা নালিশ করেছেন এই তিনটি গ্রুপই একই ঘরানার। ফ্যাসিবাদি শাসন সৃষ্টিতে একেক জায়গা থেকে এদের একেক জনের ভূমিকা ছিল। আজ এই ফ্যাসিবাদ লালনেও এদের ভূমিকাটি স্পষ্ট। সর্বশেষ প্রচেষ্টাটিও ফ্যাসিবাদকে গ্রহনযোগ্য বানানোর মতলবেই করা হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নাই।
“শয়তান, তুই আমার দেহ পাবি তো মন পাবি না।” নায়িকা এই গালিটি দিয়ে যারপরনাই তৃপ্ত। ভিলেইন নির্বিঘ্নে তার মিশন চালিয়ে সন্তুষ্ট। হলভরা দর্শকরাও সতী নায়িকার এই চিৎকারে চরমভাবে উৎফুল্ল ! এভাবেই ২০২১ পার করে আমরা পৌছে যাব ২০৪১ সালে ।
আঠার কোটি মানুষ থেকে এই বিশিষ্ট ব্যক্তিদের তালিকা কীভাবে বাছাই করা হয়- পুরো মেকানিজমটিও বিশেষ কৌতুহলের উদ্রেক করে। আমার আপনার ভ্রমটি হলো- আমরা খুশী কবিরদের এই বিশেষ বাছাইকে খুশি মনেই গ্রহন করি। ওদের পান্ডিত্যে কিংবা সুশীলত্বে নিজেরা গদ গদ হয়ে আনুগত্য জানিয়ে দেই বা কুর্নিশ করি। নিজেদের রাজনৈতিক নেট ওয়ার্ক ব্যবহার করে এদের অপকৌশলকে জব্দ করার জন্যে পাল্টা কোনো কৌশল জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তিগুলো গ্রহন করতে পারে নাই। আমাকে যে গুলিটি দিয়ে হত্যা করা হবে, সেই গুলির খরচটি আমি নিজেই বহন করি।
এই বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের তালিকায় জায়গা পাওয়া খুবই চকচকে ও লোভনীয় ব্যাপার। স্বভাবতই এই তালিকার ভেতরে থাকা ব্যক্তিবর্গ ব্রাহ্মণসুলভ আচরণ করেন এবং সেমত সমীহ পান। তালিকার বাইরে থাকা মানুষগুলো নম:শুদ্র বা অচ্ছুত হিসাবে গণ্য হন। তখন বুদ্ধিজীবী বা সুশীল হিসাবে জাতিকে বুদ্ধি বিলানো তো দূরের কথা- মাথায় ন্যূনতম বুদ্ধি আছে কি না সে ব্যাপারেও সন্দেহের সৃষ্টি হয়। শফিক রেহমান, মাহমুদুর রহমান, ফরহাদ মাজহার প্রমুখ যতই মেধাবী হোন না কেন-এই বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাতারে কখনোই জায়গা পাবেন না ।
গত কয়েক যুগ ধরে দেখছি, জাতির হয়ে বিভিন্ন দরকারি চিন্তা ভাবনা এই বিশিষ্ট ব্যক্তিরাই করে থাকেন। জাতির ঘৃণার কামান এবং ভালোবাসার চৌম্বক ক্ষেত্রটির নিয়ন্ত্রণ এরা নিজেদের কব্জায় নিয়ে গেছে। ফলে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের চিন্তা ভাবনা , রাগ-গোস্বা- ভালোবাসা সারা জাতির ভাবনা হিসাবে গণ্য হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি এমন করে ফেলে যে এই গ্রুপের বাইরে কোনো কিছু উচ্চারণ করা রীতিমত দু:সাধ্য হয়ে পড়ে।
এই বিশিষ্ট জনদের হাত ধরেই এক এগারো এসেছে। এই এক এগারোকে যারা নিজেদের আন্দোলনের ফসল বলে দাবি করেছেন সেই তাদের হাতেই ফলনটি তুলে দেয়া হয়েছে। এই বিশিষ্ট জনেরা যেমন জাতির সকল বুদ্ধির কাজ বা চিন্তাভাবনা নিজেরাই নিজ গরজে করে দেয়। এখন তাদেরই ব্রেইন চাইল্ড এই ফ্যাসিবাদি সরকার জনগণের ভোটটিও নিজেরাই দিয়ে দেয়। এই মশকরা এখানেই শেষ নয়। সেই ভোটের মাধ্যমে তাদেরকে ক্ষমতায় বসানোর জন্যে জনগণকে প্রায়শই ধন্যবাদ জানায়।
এই বিশিষ্ট ব্যক্তিরা জনগণের মনের ও দেহের এই কষ্টগুলো নিয়ে কোন কথা বলেন না। বরং জাতির উপর বহমান এই রেইপটিকে কিভাবে আরেকটু সহনীয় ও উপভোগ্য করা যায়, সেই চেষ্টাই শুরু করেছেন। আওয়ামী প্রেসিডেন্ট, আওয়ামী প্রধানমন্ত্রী এবং ফ্যাসিবাদের সমস্ত সেট-আপ ঠিক রেখে শুধু নুরুল হুদাকে সরিয়ে কেল্লা ফতেহ করা হবে ! আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে কিছু বেশি আসন দিয়ে বিরোধীদলে বসিয়ে কিভাবে বিশ্বমোড়লদেরকে আরেকটু কমফোর্ট জোনে নেয়া যায়- এই বিশিষ্টজনেরা সেই কোশেশই শুরু করেছেন। চারদিকের আলামত দেখে তাই মনে হচ্ছে !
বিশ্ব মোড়লগণ তৃতীয় বিশ্বে নিজেদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ বজায় রাখার জন্যে যে এনজিও কালচার চালু করেছে, এই বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এদেরই ডাইরেক্ট কিম্বা ইনডাইরেক্ট প্রডাক্ট। এই সব দান-দক্ষিণা এবং সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে জনগনের যে যৎসামান্য উপকার হচ্ছে-সেটা হয়তোবা অস্বীকার করা যাবে না। তবে এদের দ্বারা মূল ক্ষতিটা এই যৎ সামান্য লাভের চেয়ে অনেক অনেক বেশি ।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মত সংগঠণ সারা বিশ্বকে কখনোই ট্রান্সপারেন্ট করতে চায় না-এরা চায় বিশ্বব্যাপি তাদের বিনিয়োগ বা পুঁজিকে নিরাপদ করতে। মক্কেল দেশগুলির নেতৃত্বে যতটুকু নৈতিক স্বচ্ছতা বা কমিটমেন্ট আনা যায়। অর্থাৎ নিজের রক্ষিতার জন্যে এতটুকুই সতীত্বের শিক্ষা দরকার যাতে নিজের এবং সতীর্থদের মনোরন্জনেই নিজেকে উজাড় করে দেয়-পাবলিক সম্পত্তি না হয়ে পড়ে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আরো কয়েক টার্ম অব্যাহত থাকলে আমরা সত্যিকারের জবাবদিহিতামূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যেতে সক্ষম হতাম। এটি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বিশেষ করে সুলতানা কামালদের নেতৃত্বে পরিচালিত এদেশের টিআইবি চায় নাই। তারা চেয়েছিল তাদের মত করে গণতন্ত্র (সতী নারী ) আসুক। সেই সুলতানা কামাল এবং ইফতেখারুজ্জামানদের নেতৃত্বে যখন সিইসির বিরুদ্ধে নালিশ করেছে তখন এটি সত্যি সত্যি চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের তালিকাটি অতি আগ্রহভরে অধ্যয়নের পর মনে হলো অতি টকের সাথে কয়েকটি ডায়াবেটিসের (নিরপেক্ষ )চিনি মিশিয়ে বেশ উপাদেয় করা হয়েছে।
সিইসি নুরুল হুদা একটি সিষ্টেমের আওতায় একজন লাঠিয়াল হিসাবে কাজ করেছেন মাত্র। এই বিশিষ্টজনদের নালিশের পরিপ্রেক্ষিতে যদি এই নুরুল হুদাকে অপসারণ করা হয় তবে এই কিছিমের হুদার অভাব কি আওয়ামী লীগে আদতেই রয়েছে ? এর আগের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন কি এই হুদার চেয়ে কোনো অংশে কম ছিলেন ? এমনকি সুশীলদের গঠিত জরুরি সরকারের নিয়োগকৃত শামসুল হুদাও খুব একটা ব্যতিক্রম ছিলেন না। দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপিকে ভাঙার জন্যে সেই হুদার নির্লজ্জ প্রচেষ্টা ভুলে যাওয়ার কথা নয়।
মূলত নূরুল হুদা, রকিব উদ্দীন কিংবা শামসুল হুদা-একই সার্কাস পার্টির জোকার কিংবা প্রশিক্ষিত প্রাণী সমূহ। একেক জনকে একেক সময় কিছু সুনির্দিষ্ট অঙ্গভঙ্গি দেখানোর জন্যে দর্শকদের সম্মুখে হাজির করা হচ্ছে। এরা নিজের ইচ্ছেয় নয় বরং প্রভুর ইচ্ছেয় শারীরিক কসরত প্রদর্শন করে।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী হত্যার প্রতিবাদে ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও শাবান মাহমুদরা রাস্তায় নেমে এসেছিলেন, আন্দেলনের প্রথম সারিতে ছিলেন। এটা দেখেই এই আন্দোলনের পরিণতি সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি হয়েছিল। কাজেই এই আওয়ামী বাকশালের হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করবে সুলতানা কামাল এবং খুশী কবিররা !
আশা ও ভরসা রাখতে অসুবিধা কোথায় ?
কারণ সঙ্গে আছে বেশ কয়েকটি ডায়াবেটিস সুগারের দানা !