কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই ওরফে কানুকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ও পৌর বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এই বিক্ষোভ মিছিল থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানানো হয়েছে।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় চৌদ্দগ্রাম সদরে অবস্থিত বিএনপির উপজেলা কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের করা হয়। মিছিলটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম বাজারের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে। বিক্ষোভ মিছিলের ব্যানারে লেখা ছিল ‘আবদুল হাই কানু, একজন অসুস্থ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে অসম্মানিত করার মাধ্যমে দেশের সব মুক্তিযোদ্ধাকে অসম্মানিত করা, স্বাধীন দেশের লাল-সবুজের পতাকাকে অসম্মানিত করা, মূলকথা দেশের ভূখণ্ডকে অসম্মানিত করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল’।
মিছিলে নেতৃত্ব দেন পৌর বিএনপির আহ্বায়ক হারুন অর রশিদ মজুমদার, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুন নবী পাটোয়ারী, দপ্তর সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক জামাল উদ্দিন, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক মো. হাসান প্রমুখ।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে বক্তব্যে পৌর বিএনপির আহ্বায়ক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমরা কোনো দুষ্কৃতকারী ও আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রতিবাদ করছি না। আমাদের প্রতিবাদ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে। যাঁরা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই মুক্তিযোদ্ধারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যদি ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন না করতেন, তাহলে আমরা লাল-সবুজের পতাকা পেতাম না। প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করে জুতার মালা যাঁরা পরিয়েছেন, তাঁদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা হোক। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
এর আগে গত রোববার দুপুরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই ওরফে কানুর (৭৮) গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়। উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরে রাতে এ ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
আবদুল হাই ঘটনাস্থলের পাশের লুদিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। এ ছাড়া একই সংগঠনের কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার সাবেক সহসভাপতি। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, লাঞ্ছনাকারীরা সবাই স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী। আবদুল হাইকে এলাকা ছাড়া করার জন্য হুমকি দেওয়া হয়েছে।
তবে শুরু থেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। তাঁদের ভাষ্য, যাঁরা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাঁদের কেউই জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী নন।
তবে এ ঘটনায় আজ রাত আটটার দিকে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের বিবৃতিতে দলটির দুই সমর্থককে বহিষ্কারের তথ্য জানানো হয়েছে।