খেলা শেষে মাঠ ছেড়ে তখন সবাই টিম বাসে উঠে হোটেলে রওনা দিয়েছেন। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামের ফাঁকা মাঠে তখন তিন নির্বাচক আর কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে তিন ক্রিকেটার– নাজমুল হোসেন শান্ত, সৌম্য সরকার আর সাইফউদ্দিন। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ছিল তাদের সেই বৈঠক। কী নিয়ে কথা সেটা দূর থেকে দেখে শোনা অসম্ভব। তবে আন্দাজ করা যায়, সৌম্য আর সাইফউদ্দিনকে নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট টি২০ বিশ্বকাপের কথাই বলছিলেন।
বিসিবি সূত্রের খবর, জিম্বাবুয়ে সিরিজের শেষ দুটি ম্যাচে যে স্কোয়াড দেওয়া হয়েছে, মূলত সেটা টি২০ বিশ্বকাপেরই দল। যেখানে সাকিব আল হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান আর সৌম্য সরকার ফিরেছেন। এর সঙ্গে শুধু যোগ হবেন পেসার শরিফুল ইসলাম। জিম্বাবুয়ে সিরিজের বাকি দুটি ম্যাচে (১০ ও ১২ মে) তাঁকে শুধু বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে জিম্বাবুয়ে সিরিজের এই স্কোয়াড থেকে বাদ যেতে পারেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব।
স্কোয়াডে চমক বলতে তেমন কিছু নেই। তবে লিটন দাসকে স্কোয়াডে রাখা না-রাখা নিয়ে আলোচনা ছিল ম্যানেজমেন্টের মধ্যে। সেবার পারফরম্যান্সের কারণে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের মাঝে লিটন দাসকে বাদ দেওয়ার সময় যে সমর্থন পেয়েছিলেন নির্বাচকপ্রধান, এবার আর তা পাননি।
পারভেজ হোসেন ইমনকে জিম্বাবুয়ে সিরিজের বাকি দুটি ম্যাচ খেলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার একটা আলোচনা ছিল। যুক্তি ছিল লিটন দাস মোটেই ফর্মে নেই, আত্মবিশ্বাসেও ঘাটতি দেখা যাচ্ছে তাঁর। সেখানে পারভেজ ইমনকে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের পাল্টা যুক্তি ছিল, স্কোয়াডে টপ অর্ডারে একজন ডানহাতি ব্যাটার থাকা প্রয়োজন বিশ্বকাপের মঞ্চে। তাছাড়া লিটন এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের পরীক্ষিত অভিজ্ঞ ব্যাটার। লিটনকে রেখেই যদি টি২০ বিশ্বকাপ স্কোয়াড করা হয়, তাহলে তাঁকেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ দুটি ম্যাচে রাখা উচিত।
অধিনায়ক শান্তও চান টি২০ বিশ্বকাপের স্কোয়াডে থাকা ক্রিকেটারদেরই সিরিজের শেষ দুটি ম্যাচে খেলানো প্রয়োজন। যদিও এই দুটি ম্যাচে একাদশে নাও থাকতে পারেন লিটন, তার জায়গায় সৌম্যকে খেলানো হতে পারে। সেক্ষেত্রে দলের সঙ্গে থেকেই কোচদের তত্বাবধানে অনুশীলন করানো হবে লিটনকে।
তবে সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচের স্কোয়াডে থেকেও পারভেজ ইমনের কোনো ম্যাচ না খেলাটা দুর্ভাগ্যজনকই। নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাক অবশ্য বলেছেন, ইমন তাদের টি২০ পরিকল্পনার মধ্যেই থাকছেন। ‘ইমন এবং আফিফকে সিরিজের বাকি দুটি ম্যাচে স্কোয়াডের বাইরে রাখা হয়েছে। তবে এর মানে এই না, তারা আমাদের টি২০ পরিকল্পনার বাইরে চলে গেছে। সবাইকে তো আর নিতে পারব না, তাই তাদের বাইরে রাখা হয়েছে।’
শ্রীলঙ্কা সিরিজে চোট পাওয়া সৌম্য সরকার দলে ফিরেছেন, ছুটি কাটিয়ে সাকিবও এসেছেন। নির্বাচক রাজ্জাকের মতে, সৌম্যকে তারা কিছু ম্যাচ প্র্যাকটিসের সুযোগ করে দিতে চান। আর সাকিব তো ছুটি কাটিয়ে ফিরেছেন মাত্র। ‘সৌম্য যেহেতু চোটে ছিল, ও এখন খেলার জন্য ফিট। আমরা চাই ওকে ম্যাচ পরিস্থিতিতে দেখতে, ও কী অবস্থায় আছে তা বুঝতে। এজন্য পরিবর্তনটা করা। আর স্বাভাবিকভাবেই সাকিব তো ছুটিতে ছিল। ছুটি থেকে আসার পর প্রিমিয়ার লিগ খেলেছে এবং আমাদের চিন্তাতেই ছিল, বিশ্বকাপ খেলার আগে সে কিছু আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবে।’ তবে সাইফউদ্দিন কিন্তু দলে থাকছেন তাঁর পারফরম্যান্সের পরীক্ষা দিয়েই। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ তিনটি ম্যাচে ভালো বোলিং করায় টি২০ বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেতে যাচ্ছেন তিনি।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ দুটি ম্যাচের স্কোয়াড: নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, লিটন কুমার দাস, তানজিদ হাসান তামিম, তাওহিদ হদয়, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, জাকের আলী অনিক, শেখ মেহেদী হাসান, রিশাদ হোসেন, তাসকিন আহমেদ, তানজিম হাসান সাকিব, সৌম্য সরকার, তানভীর ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান আর মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
samakal