আবারও ব্যাপক সমাবেশ ঘটাল বিএনপি। গতকাল শনিবার রাজধানীতে বিজয় দিবসের শোভাযাত্রায় সাংগঠনিক শক্তির মহড়া দেখিয়েছে দলটি। মামলা-হামলা, গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের আশঙ্কা থাকলেও ফকিরাপুল বাজার থেকে শুরু করে নাইটিংগেল মোড় পর্যন্ত নয়াপল্টনের সড়কে হাজার হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত হন। তবে খোলা হয়নি তালাবদ্ধ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়।
জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশ-বিদেশে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে এই আয়োজন করে দলটি। ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর সেখানে আবারও কর্মসূচি পালন করল তারা। শোভাযাত্রা শুরুর আগে বন্ধ কার্যালয়ের সামনে ছোট একটি ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চে নেতারা বিজয় দিবসের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। দুপুর সোয়া ২টায় শুরু হওয়া শোভাযাত্রার প্রথম ভাগ সোয়া এক ঘণ্টা পর শান্তিনগর ঘুরে নয়াপল্টনে এসে যখন পৌঁছায়, তখনও মিছিলের শেষ ভাগ কার্যালয়ের সামনে ছিল।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপি মহাসচিবসহ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, নেতাদের দণ্ডিত করা হচ্ছে। নির্বাচনের নামে ‘খেলা’ করার জন্য এসব করা হচ্ছে। যারা খেলায় যোগ দিয়েছে, তারা সবাই ক্ষমতাসীন দলের আশীর্বাদ নিয়ে নির্বাচন করছে। কোন দল কয়টা আসন পাবে, কারা কোন এলাকা থেকে নির্বাচন করবে, তা নির্বাচনের আগেই নির্ধারণ করা হচ্ছে। এটা কি কোনো নির্বাচন, এটা কি কোনো ভোট? তিনি বলেন, এই ডামি নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাড়ে ৭ লাখ সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যেভাবে নির্বাচন সাজানো হচ্ছে, তাতে তো সবাই জেনেই যাচ্ছে কোন আসনে কে নির্বাচিত হবেন। এটা ঘোষণা করে দিলেই হয়। এজন্য নির্বাচনী খেলার কী দরকার? প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা খরচ করে এই নির্বাচন করার কোনো অর্থ নেই। এই রসিকতার জন্য দেশ স্বাধীন করিনি, এই নির্বাচন নির্বাচন খেলার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি।
কার্যালয় বন্ধ রাখা প্রসঙ্গে বিএনপি নেতারা জানান, এই কার্যালয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করায় সব নেতাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। যেখানে বসে নেতাকর্মীরা রাজনীতি করতে পারবেন না, সেটা খুলেও কোনো লাভ নেই। নেতাকর্মীর মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত, নির্ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই থাকবে বলে জানান তারা।
গ্রেপ্তার আতঙ্কে আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীর একটি বড় অংশ এদিন মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। যাদের বিরুদ্ধে মামলার রায় হয়েছে, তাদের অনেককেও দেখা গেছে। দলটির কর্মসূচি ঘিরে সকাল থেকে নয়াপল্টন এলাকায় কয়েকশ রিকশাচালকের মিছিলকে ঘিরে নেতাকর্মীর মধ্যে উচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। রংবেরঙের ব্যানার-ফেস্টুনের পাশাপাশি নেতাকর্মীদের হাতে ছিল জাতীয় এবং দলীয় পতাকা।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর সঞ্চালনায় শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, আফরোজা খানম রীতা, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শিরিন সুলতানা, কায়সার কামাল, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নাজিম উদ্দিন আলম প্রমুখ।
শোভাযাত্রায় মুক্তিযোদ্ধা দল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, মহিলা দল, ছাত্রদল, জাসাস, মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দল, শ্রমিক দল, উলামা দল, ঢাকা মহানগর বিএনপি উত্তর ও দক্ষিণ প্রভৃতি সংগঠন ছাড়াও সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, ড্যাব, এ্যাব, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটসহ ঢাকা জেলা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির অংশগ্রহণ ছিল।
এ উপলক্ষে নয়াপল্টন থেকে শুরু করে মালিবাগ পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়। সাড়ে ১১টা থেকে নয়াপল্টনের সড়কের একদিকের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা
বিজয় দিবসে গতকাল সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে এবং পরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেছে বিএনপি। শেরেবাংলা নগরে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, জোর করে কিছুদিন ক্ষমতায় থাকা যায়, কিন্তু চিরদিন থাকা যায় না। হিটলার-মুসোলিনিরাও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। এই সরকারও ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। এ সময় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, সেলিমা রহমানসহ দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। দলের প্রতিষ্ঠাতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন নেতাকর্মী।
সমকাল