ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ মর্গে মোহাম্মদ রইশুদ্দীনের লাশ। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাড়িতে অপেক্ষায় স্বজনরা। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন স্ত্রী মোছা. নাসরিন। কারও সান্ত্বনা কাজে আসছে না।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য রইশুদ্দীন সোমবার যশোরের বেনাপোল উপজেলার ধান্যখোলা জেলেপাড়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী বিএসএফের গুলিতে নিহত হন। তাঁর গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত এলাকা সাহাপাড়ার শ্যামপুরে।
জানা গেছে, বনগাঁয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে আগামীকাল বুধবার রইশুদ্দীনের লাশ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে।
মঙ্গলবার রইশুদ্দীনের গ্রামের বাড়ি শ্যামপুরে গিয়ে দেখা যায়, টিনের একচালা একটি ঘর। পাশে রান্নাঘর। দুটিতেই তালা দেওয়া। শৈত্যপ্রবাহের কারণে দুই শিশু সন্তান নিয়ে স্ত্রী নাসরিন উঠেছেন ভাশুরের বাড়িতে। সেখানে গ্রামবাসী এসে সান্ত্বনা দিচ্ছেন।
রইশুদ্দীনের বাবা কামরুজ্জামান জানান, তিন ছেলের মধ্যে সবার ছোট রইশুদ্দীন ছিলেন পরোপকারী। দুই নাতি-নাতনিকে যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপারে সরকারের সহায়তা চান তিনি।
রইশুদ্দীনের স্ত্রী নাসরিন বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। জ্ঞান ফিরতেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘দুইটা অবুঝ বাচ্চা ও আমারে একা ফেলে চলে গেল। ওদের মানুষ করব কীভাবে? ওরে ছাড়া আমি চলব কীভাবে?’
বিজিবি ৪৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আহমেদ হাসান জামিল বলেছেন, ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে এরই মধ্যে বিএসএফের কাছে বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিবাদ পাঠানো হয়েছে। লাশ দ্রুত ফেরত আনার বিষয়ে যোগাযোগ চলছে।
মঙ্গলবার বিজিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সোমবার ভোর ৫টার দিকে বিজিবি যশোর ব্যাটালিয়নের ধান্যখোলা বিওপির জেলেপাড়া পোস্ট-সংলগ্ন এলাকায় একদল গরু চোরাকারবারিকে ভারত সীমান্ত অতিক্রম করে আসতে দেখে বিজিবির টহল দল। এ সময় টহল দলের সদস্যরা তাদের ধাওয়া দিলে দৌড়ে ভারতের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। টহল দলের সদস্য সিপাহি মোহাম্মদ রইশুদ্দীন চোরাকারবারিদের পেছনে ধাওয়া করতে করতে ঘন কুয়াশার কারণে দলছুট হয়ে পড়েন। প্রাথমিকভাবে তাঁকে খুঁজে পাওয়া না গেলেও পরে জানা যায়, বিএসএফের গুলিতে আহত হয়ে ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
samakal