৯ মার্চ ২০২৩
নিজস্ব প্রতিনিধি
চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগসহ দণ্ড স্থগিত রাখার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদন আইন মন্ত্রণালয়ে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার পর এতথ্য জানিয়েছেন। সচিবালয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ছয়টি দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকরা বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদন প্রসঙ্গে তাঁর কাছে জানতে চায়।
আনিসুল হক জানান, খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন আইন মন্ত্রণালয়ে আসলেও এখনো তার কাছে উপস্থাপিত হয়নি।
তিনি বলেন, আমি জানতে পেরেছি শর্তযুক্ত মুক্তির মেয়াদ আরও বাড়ানোর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খালেদা জিয়ার একটি আবেদন ফাইল করেছে। ফাইলটি আইন মন্ত্রণালয়ে এসেছে। আমার কাছে এখনো আসেনি। আমাদের মতামত দেওয়ার পর এটিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
খালেদা জিয়া বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমার কাছে এখনো আবেদনটি আসেনি। এলে আমি নিষ্পত্তি করবো। আমি যখন এটি নিষ্পত্তি করবো, আমি আপনাদের (সাংবাদিক) অবশ্যই জানাবো। এখনো আমি জানি না ফাইলের মধ্যে কী আছে।
খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন কি না- এ বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, আমি এ ব্যাপারে একটা পরিষ্কার কথা বলতে চাই। আমি যেটা বলেছিলাম, সেটা আইনের বইতে কী আছে আপনারা দেখে নেন। তাহলে আপনারা বুঝতে পারবেন কে ঠিক আর কে ভুল। আমি এটার ব্যাপারে আর কথা বলবো না।
তিনি বলেন, প্রথম দিন আমার কাছে যখন প্রশ্ন করা হয়েছিল, আমি বলেছিলাম ডেড ইস্যু। এটা আমার কাছে ডেড ইস্যু।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে এবার স্থায়ী জামিন চাওয়া হয়েছে-এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, জামিন দেওয়ার এখতিয়ার আদালতের, সরকারের নয়। প্রথমবার যখন তার দণ্ড স্থগিত করে মুক্তি দেওয়া হয়, তখন দুটি শর্ত দেওয়া হয়। দুটি শর্তের মধ্যে রয়েছে- তিনি ঢাকায় থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন না। শেষবার যখন মেয়াদ বাড়ানো হয় তখনো এ শর্তগুলো ছিল।
তিনি বলেন, এখন যেটা (আবেদন) এসেছে, আপনারা কিছুদিনের মধ্যে সে বিষয়ে জানতে পারবেন। যে শর্ত আছে সেটাই বহাল থাকবে বলে আমি মনে করি।
২০২০ সালের ২৫ মার্চ ‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর’র ধারা-৪০১ (১)-এর ক্ষমতাবলে সরকারের নির্বাহী আদেশে প্রথমবারের মতো শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন মুক্তি দেওয়া হয় বিএনপি চেয়ারপার্সনকে। ওইদিনই হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসায় ফেরেন তিনি। একই বছরের সেপ্টেম্বরে তার মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়। এরপর গত প্রায় তিন বছরে দফায় দফায় শর্ত সাপেক্ষে কারাগারের পরিবর্তে বাড়িতে থাকার মেয়াদ বাড়ানো হয়।
৭৭ বছর বয়সী খালেদা জিয়া প্রায় তিন বছর ধরে গুলশানে নিজ বাসা ‘ফিরোজায়’ রয়েছেন। তিনি আর্থারাইটিস, ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছেন।
১/১১ খ্যাত জরুরী আইনের সরকার পরিকল্পিতভাবে ভূয়া অভিযোগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টে দুর্নীতির অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছিল সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। পূর্ব পরিকল্পিত সাজানো মামলায় ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনার অনুগত আদালত ফরমায়েশি রায়ে খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়। শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় অন্যতম সহযোগী সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আওয়ামী বিচারক ইনায়েতুর রহিম পরবর্তীতে এই কারাদণ্ডকে দ্বিগুণ করে দেন।
একই বছরের ২৯শে অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় একইভাবে ফরমায়েশি রায়ে খালেদা জিয়াকে বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই দুই মামলায় তিনি আটক আছেন।