দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ‘একতরফাভাবে’ তামাশার তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, বিএনপি এই তফসিল ‘ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান’ করেছে। গতকাল রাতে ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন। রিজভী বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার জাতির সঙ্গে মশকরা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীত্বে থাকবেন, তার নেতৃত্বে সরকার থাকবে আর অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে, এটা বিশ্বাস করা খুব কঠিন ব্যাপার। রিজভী বলেন, গোটা বাংলাদেশের প্রত্যাশা, জনমত ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপর্যুপরি আহ্বান উপেক্ষা করে নিশিরাতের সরকারের তল্পিবাহক নির্বাচন কমিশন একতরফা নির্বাচনের তামাশার তফসিল ঘোষণা করেছে। শেখ হাসিনার নির্দেশে অতীতের মতোই আরেকটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার হরণের জন্য মেরুদণ্ডহীন ও পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন যে তফসিল ঘোষণা করেছে, তা আমরা চরম ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। দেশে একটি ভীতিকর যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে হাসিনা মার্কা একতরফা নির্বাচনের এই তথাকথিত তফসিল-রঙ্গ জনগণ মানে না। এই নীলনকশার নির্বাচনের তফসিলে বাংলাদেশের মাটিতে কোনো নির্বাচন হবে না। বিএনপি’র পক্ষ থেকে আমি সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে আবারো হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, এই অবিমৃষ্যকারিতার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে যে ভয়াবহ অচলাবস্থা ও চরম রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি হবে তার পুরো দায়ভার তাদেরকেই বহন করতে হবে। জনগণের চলমান অগ্নিগর্ভ আন্দোলন আরও তীব্র, আরও কঠিন থেকে কঠিনতর হবে এবং অতি দ্রুতই আওয়ামী নাৎসী সরকারের পতন ঘটবে ইনশাআল্লাহ। তিনি আরও বলেন, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার পর এই সম্পূর্ণ অবৈধ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সকলের বিচার করবে জনগণ। প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার ভাষণে বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করবেন। একথা তো ডাহা মিথ্যা, ভণ্ডামিপূর্ণ এবং মেকি। শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন বিশ্বাস করা চোরাবালিতে পড়ার শামিল।
অবরোধে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া: বিরোধী জোটের পঞ্চম দফায় ডাকা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের প্রথম দিনে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া অবরোধের দিন সকালে ও আগের রাতে মোট ৬টি গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এদিকে অবরোধের সমর্থনে গতকালও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সড়ক-মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। এ সময় তারা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করেন। অবরোধের সমর্থনে মিছিল করেছে জামায়াত, এলডিপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। বিরোধী জোটের অবরোধের কারণে সারা দেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন ছিল রাজধানী ঢাকা। চলাচল করেনি দূরপাল্লার বাস। আতঙ্কে রাজধানীতে যান চলাচল ছিল কম। তবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। যাত্রীর অভাবে লঞ্চ চলাচলও সংখ্যায় কম ছিল।
এদিকে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে সড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। গতকাল সকাল সাড়ে ৬টায় শাহবাগ থেকে শেরাটন সড়কে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন তিনি। অবরোধের সমর্থনে স্লোগান দেয়ার সময় বাংলাদেশ জনতা পার্টির সভাপতি রায়হান ইসলাম রাজুসহ ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে তাদের আটক করা হয়। আটকের পর তাদের পল্টন থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জামায়াত। গতকাল সকালে রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে অবরোধের সমর্থনে পৃথক পৃথক মিছিল করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এসব মিছিল থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ৬ জনকে আটক করে এবং হামলায় বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ দলটির।
মানব জমিন