Site icon The Bangladesh Chronicle

বাসার ছাদে বাবার কোলে ঢলে পড়ে ছোট্ট মেয়েটি

জন্মদিনে রিয়া গোপ
জন্মদিনে রিয়া গোপছবি: পরিবারের সৌজন্যে

 

দুপুরে খাওয়ার পর ছাদে খেলতে গিয়েছিল মেয়েটি। খানিক পরেই রাস্তায় সংঘর্ষ বাধে। বাসার সামনে হইহল্লা শুনে বাবা ছুটে যান ছাদ থেকে মেয়েকে ঘরে আনতে। মেয়েকে কোলে নিতেই একটি বুলেট এসে বিদ্ধ হয় মাথায়। মুহূর্তেই ছোট্ট দেহটি ঢলে পড়ে বাবার কোলে।

রক্তে ভেজা মেয়েকে নিয়ে তখনই বাবা ছোটেন হাসপাতালে। বাসার কাছের ক্লিনিকে চিকিৎসকেরা বেশিক্ষণ রাখলেন না। পাঠিয়ে দিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সে রাতেই মাথায় অস্ত্রোপচার হয়। সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে বলে আশ্বস্ত করেন চিকিৎসকেরা। মেয়েটিকে রাখা হয় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। বলা হয়, ৭২ ঘণ্টার আগে কিছু বলা যাবে না। গত শুক্রবার বিকেলে গুলি লাগে মেয়েটির। সেদিন রাতে অস্ত্রোপচারের পর শনিবার পার হয়। রোববার ও সোমবার আইসিইউতে একটু একটু করে আঙুল নাড়ছিল মেয়েটি। স্বজনদের বুকে আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু গতকাল বুধবার সকালের দিকে মেয়েটির সে নড়াচড়াও থেমে যায়। সবাইকে কাঁদিয়ে মেয়েটি চলে যায় না-ফেরার দেশে।

সাড়ে ছয় বছর বয়সী মেয়েটির নাম রিয়া গোপ। মা-বাবার সঙ্গে থাকত নারায়ণগঞ্জ সদরের নয়ামাটি এলাকায়। চারতলা বাড়ির ওপরের তলায় থাকত ওরা। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের রেশ নারায়ণগঞ্জেও ছড়িয়ে পড়েছিল। শুক্রবার বিকেলে নয়ামাটি এলাকায় চলছিল সংঘাত, আর গোলাগুলি। সেই গুলিতেই প্রাণ গেল ছোট্ট রিয়ার। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিয়ার মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয়, ‘গানশট ইনজুরি’।

গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে অপেক্ষা করছিলেন দীপক কুমার। সঙ্গে ছিলেন আরও স্বজনেরা। কথা হয় রিয়ার এক স্বজনের সঙ্গে। তিনি বললেন, বাসার ছাদে খেলতে গিয়ে বাবার কোলেই গুলিবিদ্ধ হয় মেয়েটা। এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে!

গতকাল রিয়ার মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয় সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার কিছু পরে। মর্গ থেকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলার আগে স্ট্রেচারে রাখা মেয়েটির মুখ দেখানো হয় স্বজনদের। মুহূর্তেই কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরা। রিয়ার ছোট খালা আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘আমার ছোট মারে, তুই আমাদের ছেড়ে চলে গেলি! তোরে ছাড়া আমরা কেমনে বাঁচব?’

একমাত্র মেয়েকে হারানোর শোকে যেন পাথর হয়ে গেছেন দীপক কুমার। মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে বলছিলেন, ‘কোথা থেকে কী হয়ে গেল, কিছুই বুঝি নাই। আমার কোলেই মেয়ের মাথা থেকে রক্ত বেয়ে পড়ছিল।’ বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন।

proyhom alo

Exit mobile version