বাসচালকের শাস্তি হয়, ট্রেনচালকের হয় না কেন: শাজাহান খান
নিজস্ব প্রতিবেদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 05 May 2019
সড়কে দুর্ঘটনার জন্য বাসচালকের শাস্তি হলে রেললাইনে মৃত্যুর জন্য ট্রেনচালকের শাস্তি কেন হয় না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক মন্ত্রী ও পরিবহন শ্রমিক নেতা শাজাহান খান।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে রোববার ‘সড়ক দুর্ঘটনা রোধে করণীয় শীর্ষক’ এক মতবিনিময় সভায় সড়কে পথচারীদের অসচেতনতার দিকটি তুলে ধরে এই প্রশ্ন রাখেন তিনি।
দুর্ঘটনায় একের পর এক প্রাণহানির পরিপ্রেক্ষিতে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সম্প্রতি ১৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল, যার প্রধান হিসেবে রয়েছেন শাজাহান খান।
আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরি সভাপতি। সংগঠনটি আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় তিনিই ছিলেন প্রধান অতিথি।
সভায় তিনি বলেন, “দূর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য যাত্রী, পথচারী, ড্রাইভার সবাইকে সচেতন হতে হবে। কোনো ঘটনা হলেই আমরা বলি, ‘ঘাতক ড্রাইভার হত্যা করেছে’। আসলে কী তাই?
“পথচারীদের কারণে যে এক্সিডেন্ট হয়, সেখানে মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হয়, এই ক্ষেত্রে অনেকে মারা যায়। কিন্তু ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেলে তো ড্রাইভারের কোনো শাস্তি হয় না, এই ক্ষেত্রে বাস-ট্রাকের ড্রাইভারের কেন শাস্তি হয়?”
সড়কে দুর্ঘটনার পাশাপাশি রেললাইনে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। সড়কে বেসরকারি খাতের চালক বেশি হলেও ট্রেনচালকের সবাই সরকারি বেতনভুক্ত।
সড়কে দুর্ঘটনার জন্য চালকদের অদক্ষতাকে বেশি দায়ী করা হলেও সভায় বক্তৃতায় পরিবহন শ্রমিক নেতা শাজাহান খান বিভিন্ন দুর্ঘটনার কথা তুলে ধরে বাসচালকদের নির্দোষিতার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন; সেই সঙ্গে আদালতের এক রায় নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
তিনি বলেন, “আপনারা লক্ষ করুন, মিশুক মুনীর, তারেক মাসুদ যে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন, সেটার জন্য আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে (চালককে), সঙ্গে সঙ্গে জরিমানাও করেছে। আর একটি গবেষণা সংস্থা ‘এক্সিডেন্ট রিসার্চ রিপোর্টে’ আমরা দেখলাম এককভাবে ড্রাইভার দায়ী নয়। তাহলে ড্রাইভার এককভাবে সাজা খাটবেন কেন?
“আবার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাবেক মন্ত্রী (প্রতিমন্ত্রী) জাহাঙ্গির কবির নানকের ছেলে মারা গেছেন যে দুর্ঘটনায় সেখানে একটি কুকুরকে বাঁচাতে গিয়ে দুর্ঘটনা হয়েছে, এখানেই বা ড্রাইভারের দোষ কোথায়?
“আমি বলতে চাই, চালকদের পাশাপাশি যাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে, এখানে রাজেকুজ্জামান রতন (বাসদ নেতা) বলেছেন, বাস আস্তে চালালে যাত্রীরা বকা দেয়, আবার স্পিডে চালালেও বকা দেয়। আস্তে চালালেও দোষ আবার স্পিডে চালালেও দোষ!”
পথচারীর অসচেতনতা চালকদের সমস্যায় ফেলে দাবি করে শাজাহান খান বলেন, “অসচেতন পথচারীকে বাঁচাতে গেলে ৫০ জন যাত্রী মারা যাবে, ড্রাইভার এখন কোনটা করবে?”
প্রভাবশালী পরিবহন শ্রমিক নেতা শাজাহান খানের জন্যই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এই সংক্রান্ত আইন আরও কঠোর করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। বক্তব্যের জন্য বিভিন্ন সময় সমালোচনায়ও পড়তে হয়েছে তাকে।
কোনো সমালোচনায় কান দেন না বলে জানান সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান; যিনি পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
“অনেকে বলে শাজাহান খানের একই অঙ্গে বহু রূপ। এটা আমার জন্য প্রবলেম, কিন্তু আমি আমার কাজ করেই যাব।”
সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে প্রধানমন্ত্রী দপ্তর থেকে ‘কো-অর্ডিনেশন সেল’ গঠন করতে হবে বলে মন্তব্য করেন শাজাহান খান।
তিনি বলেন, “সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার সুপারিশ কখনওই বাস্তবায়ন হয়নি, ১৯৮৩ সালে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু যোগাযোগমন্ত্রী থাকাকালে ৮৮টি সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো আজও বাস্তবায়ন হয়নি। আমরাও ১১১টি সুপারিশ করেছি, কিন্তু এগুলো বাস্তবায়ন করবে কে?
“আগেও কেউ বাস্তবায়ন করেনি। ভবিষ্যতে করতে হলে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে কো-অর্ডিনেশন সেল গঠন করতে হবে। মন্ত্রণালয়সহ সকলকে পর্যবেক্ষণ করতে এই সেল কাজ করবে।”
মতবিনিময় সভায় শাজাহান খানের সংগঠন ‘সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন’ ১৬টি প্রস্তাব তুলে ধরে। এগুলো উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী।
সড়কে অতিরিক্ত গতিতে চলাচল, বিপজ্জনক ওভার টেকিং, ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করাকে কঠোর হাতে দমন করতে বলা হয় একটি প্রস্তাবে।
জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী সভায় বক্তব্য রাখেন।