- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১২ জুন ২০২০
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে রাজস্ব আদায় সংকুচিত হয়ে পড়ায় ২০২০-২১ অর্থবছরের ‘ঋণ নির্ভর’ বাজেট বাস্তবায়ন করা সরকারের পক্ষে বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
তারা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরে সরকারের উচ্চাভিলাসী ৮.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না কারণ পুরো বিশ্বই করোনা সংকটে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ করেন। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরকে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, এনবিআর-বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১৫ হাজার কোটি টাকা এবং কর বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩৩ হাজার কোটি টাকা।
ইউএনবির সাথে আলাপকালে বেসরকারি থিংক-ট্যাঙ্ক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাজেট বাস্তবায়ন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
‘চলমান পরিস্থিতিতে নতুন প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন করা খুব কঠিন হবে। রাজস্ব আদায়ের সম্পদ কোথায়? এ বছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না কারণ এনবিআর গত বছরই ২ লাখ ১৫ হাজার কোটির মতো টাকা সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিল। তারা কীভাবে মহামারির মধ্যে এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করবে?’ প্রশ্ন রাখের তিনি।
ড. মনসুর বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু ইতিবাচক বিষয়ও রয়েছে … সরকার স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা নেট এবং কৃষির উপর জোর দিয়েছে।
‘তবে, সাফল্য মাঠপর্যায়ের কাজের ওপর নির্ভর করবে,’ বলেন এ অর্থনীতিবিদ।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সরকার কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একবার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলো তারা চলমান পরিস্থিতিতে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। পরে আবার বলা হলো যে, সরকার আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।’
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনোমিক মডেলিংয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, এ বছরের বাজেটের লক্ষ্য হওয়া উচিত মহামারি দ্বারা উদ্ভূত অপ্রত্যাশিত স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা।
তিনি বলেন, ‘আমরা ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য ঝুঁকি প্রত্যক্ষ করছি। এছাড়া প্রতিনিয়তই করোনা আকান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। কবে নাগাদ পূর্ণাঙ্গ অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে সেটিও একটি বড় প্রশ্ন।’
দেশের অর্থনীতির প্রধান দুই চালক- রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে সংকটে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে ড. রায়হান বলেন, ‘আমাদের রপ্তানির বৃহত্তম দুটি গন্তব্য- ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং উত্তর আমেরিকায় নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির মুখে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এসব অঞ্চলের দেশগুলোতে রপ্তানি বাড়বে কিনা এবং বাড়লেও কী পরিমাণে বাড়বে, সেটি একটি প্রশ্ন।’
সংকটের শুরুতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলোকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। তবে এ প্যাকেজগুলো পরিচালিত হবে ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমে, যারা সংকটে রয়েছে।
ব্যাংকিং খাতে অব্যবস্থাপনা, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা এবং খেলাপি ঋণ সংকট রয়েছে বলে জানান এ অর্থনীতিবিদ।
সংকটে থাকা ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমে প্রণোদনা প্যাকেজগুলো পরিচালনার জন্য বাজেটে একটি গাইডলাইন থাকা উচিত ছিল উল্লেখ করে ড. রায়হান বলেন, ‘আমি মনে করি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অন্যান্য ব্যাংকগুলোর জন্য এ বিষয়ে একটি নির্দেশিকা থাকা উচিত ছিল।’
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) গবেষণা পরিচালক ড. মো. মাহফুজ কবির বলেন, আগামী অর্থবছরে সামগ্রিক বাজেটের ঘাটতি হবে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬ শতাংশ।
‘আমি মনে করি, মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ঘাটতি খারাপ নয়। কাজ না থাকায় অনেক বাংলাদেশী অভিবাসী শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছেন। সুতরাং, সরকারকে আরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার কথা বিবেচনা করতে হবে কারণ লকডাউনের সময় অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছে।’
অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় আরও বিনিয়োগ করতে হবে এবং এক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ কীভাবে আকৃষ্ট করা যায় সরকারের তা চিন্তা করা উচিত উল্লেখ করে অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ বলেন, ‘নতুন বাজেট বাস্তবায়নের জন্য একটি পরিপূরক বাজেটের প্রয়োজন হতে পারে।’
সূত্র : ইউএনবি