আড়াই বছর ধরে বকেয়া টাকা চাওয়ায় এক দোকানিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকার। সাত দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব না দিলে ওই দোকানির সঙ্গে বিদ্যালয়ের দোকানঘরের চুক্তিপত্র বাতিলের হুমকিও দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। গত ১৭ এপ্রিল বিদ্যালয়ের প্যাডে নিজ স্বাক্ষরে এই নোটিশ দেন প্রধান শিক্ষক। যদিও রমজান ও ঈদ উপলক্ষে বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে।
ভুক্তভোগী দোকানির নাম আতাউর রহমান আতা। তিনি দুর্গাপুর বাজারে বিদ্যালয়ের দোকানঘর ভাড়া নিয়ে টি স্টলের ব্যবসা করে আসছেন। এই দোকানির দাবি, বাকি দিতে অপারগতা জানিয়ে পাওনা টাকা চাওয়ায় দোকানঘরের চুক্তিপত্র বাতিলের হুমকি দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।
দোকানিকে দেওয়া প্রধান শিক্ষকের নোটিশের একটি কপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। নোটিশে বলা হয়েছে, ‘১৭ এপ্রিল বিদ্যালয় থেকে আপনার দোকানে মাল ক্রয়কালে আপনি অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন মর্মে অভিযোগ রয়েছে। এমন আচরণের জন্য কেন আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার জবাব আগামী সাত দিনের মধ্যে নিম্ন স্বাক্ষরকারী বরাবর প্রদানের জন্য অনুরোধ করা গেলো। অন্যথায় বিনা নোটিশে আপনার দোকানঘরের চুক্তিপত্র বাতিল করা হবে।’
নোটিশের বিষয়ে দোকানি আতাউর রহমান আতা বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকার করোনা মহামারির পর থেকে এখন পর্যন্ত স্কুলের নামে আমার দোকান থেকে বাকিতে চা-নাশতা নিয়ে আসছেন। আমি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। স্যারের কাছে প্রায় ২৭ হাজার টাকা পাই। বিভিন্ন সময় তার কাছে টাকা চাইলে টালবাহানা করেন। কখনও বলেন, পরে আসো, কখনও বলেন, স্কুল ফান্ডে টাকা নেই। টাকা হলে দেবো। কিন্তু এভাবে করে দিচ্ছেন না। আড়াই বছর ধরে বকেয়া পড়ে আছে। এর মধ্যে গত ১৭ এপ্রিল ইফতার নেওয়ার জন্য দোকানে তার পিয়নকে পাঠান। কিন্তু তিনি লিখিত স্লিপ দেননি। আমি পিয়নকে স্লিপ ছাড়া ইফতারসামগ্রী দিতে অপারগতা জানিয়ে পাওনা টাকা দেওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষককে বলতে বলি। এরপরও ইফতারসামগ্রী দিয়ে দিই। এ ঘটনার জেরে প্রধান শিক্ষক পরের দিন একই তারিখে স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ পাঠান। আমি নাকি তার লোকের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছি। আমার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা এক সপ্তাহের মধ্যে জানাতে বলেছেন। না হলে বিনা নোটিশে আমার ঘরের চুক্তি বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছেন।’
ভুক্তভোগী এই দোকানি বলেন, ‘স্কুলের সাবেক সভাপতি স্কুলের কথা বলে আমার দোকান থেকে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক টাকার মালামাল বাকি নিয়েছিলেন। সেই টাকা স্কুল থেকে দেওয়ার কথা থাকলেও এখনও দেননি। এভাবে বাকিতে পণ্য নিয়ে টাকা না দিলে আমি ব্যবসা করবো কীভাবে? আর টাকা চাওয়ায় এখন চুক্তিপত্র বাতিলের ভয় দেখাচ্ছে। কিন্তু আমি কার কাছে বিচার চাইবো, সেটাই বুঝতেছি না।’
ওই দিন ইফতার আনতে যাওয়া বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক সাইদুল বলেন, ‘ইফতার আনতে গেলে দোকানি বাকি দেওয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। কিন্তু আমাকে কোনও ধরনের গালিগালাজ করেননি। আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহারও করেননি। প্রধান শিক্ষক কেন নোটিশ দিয়েছেন, তা আমি জানি না।’
এ ব্যাপারে জানতে বৃহস্পতিবার বিকালে প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকারের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুল আলম বলেন, ‘এ ধরনের নোটিশ দেওয়ার কোনও এখতিয়ার নেই প্রধান শিক্ষকের। বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া প্রধান শিক্ষক এভাবে বিদ্যালয়ের প্যাড ব্যবহার করে কাউকে নোটিশ দিতে পারেন না।’
প্রসঙ্গত, প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি রায়ের বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্দ এবং বিদ্যালয়ের দোকানঘরের ভাড়াসহ আয়ের প্রায় আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। তদন্তে এসব অভিযোগের সত্যতা পায় উপজেলা প্রশাসন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অবজ্ঞা করে বিদ্যালয় মাঠে প্রতি সপ্তাহে গরুর হাট বসানোর অভিযোগও রয়েছে।
এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর প্রতিবেদন পাঠান কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। ২০২০ সালে পাঠানো ওই প্রতিবেদন গত দুই বছরেও আলোর মুখ দেখেনি। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি।