Site icon The Bangladesh Chronicle

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্ক উন্নয়নে সহযোগিতার প্রস্তাব চীনের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক   Dhaka Post

০৪ মে ২০২৩


চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিউইন গ্যাং ও মিয়ানমারের সরকারপ্রধান মিন অং হ্লেইং/ সংগৃহীত

বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাম্প্রতিক মিয়ানমার সফরে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়। বুধবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানায়।

গত ১ মে (সোমবার) মিয়ানমার সফরে গিয়েছিলেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিউইন গ্যাং। পরদিন মঙ্গলবার মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সামরিক সরকারের প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন তিনি।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকের আলোচনায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়টি ছিল।

মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুযায়ী, ‘মিয়ানমারের সরকারপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিউইন গ্যাং বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্কের উন্নয়নের ওপর জোর দিয়ে বলেছেন, চীন বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের আরও বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক চায়। সেই সঙ্গে চীন মনে করে, যেসব ইস্যু নিয়ে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে— কার্যকর আলোচনার মাধ্যমে সেসবের সমাধান সম্ভব।’

‘মন্ত্রী আরও বলেছেন—সর্বোপরি, চীন বিশ্বাস করে অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক নানা ইস্যুতে চীন-বাংলাদেশ-মিয়ানমার একটি কার্যকর জোট হতে পারে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার সম্পর্কের উন্নয়ন জরুরি এবং এই ইস্যুতে যেকোনো বাস্তবসম্মত সহযোগিতা করতে চীন প্রস্তুত।’

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে চীনের অভিভাকত্ব ও দিকনির্দেশনা মেনে নিতে মিয়ানমারের সরকারপ্রধান জেনারেল হ্লেইং কোনো আপত্তি জানাননি দাবি করে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘জেনারেল মিন অং হ্লেইং চীনের সঙ্গেও নিজেদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও বিস্তৃত করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’

প্রতিবেশী মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের বয়স কয়েকশ’বছর। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের উদ্ভবের পরও দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে তেমন তিক্ততা পরিলক্ষিত হয়নি।

কিন্তু এই সম্পর্কে ছেদ পড়ে ২০১৭ সালে, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশের কয়েকটি পুলিশ স্টেশন ও সেনা ছাউনিতে একযোগে বোমা হামলার ঘটনা ঘটার পর। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) এই হামলা চালিয়েছিল।

বোমা হামলার পর আরাকানের সাধারণ বেসামরিক রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। আরাকানের রোহিঙ্গা গ্রামগুলো একের পর এক জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সেনাসদস্যদের নির্বিচারে হত্যা-ধর্ষণ ও লুটপাটের শিকার হতে থাকে মিয়ানমারের সবচেয়ে নিপীড়িত এই জনগোষ্ঠী।

ভয়াবহ সেই সেনা অভিযানে টিকতে না পেরে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। বাংলাদেশ সরকারের হিসাব অনুযায়ী, অন্তত ১০ লাখ রোহিঙ্গা আরাকান থেকে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক এবং অবশ্যই তাদেরকে মিয়ানমারের সরকার ফিরিয়ে নিতে হবে।

আরাকানে যখন সেনা অভিযান চলছিল, সে সময় মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন ছিল দেশটির গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন এনএলডি সরকার। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ওই সময় বেশ কয়েকবার মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল, কিন্তু এনএলডি সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।

পরে ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এনএলডিকে হটিয়ে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। জেনারেল মিন অং হ্লেইং এ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন। দেশটির বর্তমান সরকারপ্রধানও তিনি।

সামরিক অভ্যুত্থানের পর রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারটি আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

এসএমডব্লিউ

Exit mobile version