BBC
বাংলাদেশে ‘কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান’ নেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানিয়েছে সাতটি মানবাধিকার সংগঠন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে দেয়া এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয় যে বাংলাদেশে মানবাধিকার সংরক্ষেণের লক্ষে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত একটি শক্ত অবস্থান নেয়া।
এই মানবাধিকার সংগঠনগুলো হলো, এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইনভলানটারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস এবং ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার।
নিউইয়র্ক থেকে আজ পাঠানো ওই যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ যখন কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব মোকাবেলা করছে, তখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এই পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে সমালোচক এবং মুক্ত সংবাদমাধ্যমের উপর কঠোর চাপ প্রয়োগ করছে, যা কর্তৃত্ববাদী শাসনকে আরও দৃঢ় করছে।
আন্তর্জাতিক এসব মানবাধিকার সংগঠনের বিবৃতির বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোন মন্তব্য করা হয়নি। তবে সরকার অতীতে এ ধরণের সমালোচনা নাকচ করেছে এবং ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে প্রায়শই বলা হয় যে বাংলাদেশে একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে।
সাতটি মানবাধিকার সংগঠনের বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয় যে সরকার ক্রমাগতভাবে ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমনে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন-সহ নানা ধরণের কঠোর আইনকানুন ব্যবহার করছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জোরপূর্বক গুম, বিচারহীন খুন এবং হেফাজতে নিয়ে নির্যাতনের মতো অপরাধ করে থাকে বলে বিবৃতিতে আরও অভিযোগ করা হয়।
বাংলাদেশের সন্ত্রাসবিরোধী আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাবের উর্ধতন কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার আহবান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে দ্বি-দলীয় চিঠি প্রকাশ করা হয়েছে, তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে এসব মানবাধিকার সংগঠন। বিবৃতিতে বলা হয়, এই বাহিনীর বিরুদ্ধে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে।
সংগঠনগুলো বলছে, বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো কর্তৃক ক্ষমতার অপব্যবহারের ক্ষেত্রে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি রয়েছে, তা রোধ করতে এ ধরণের নিষেধাজ্ঞা একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হবে এবং এটি ভবিষ্যতে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে সহায়তা করবে।
যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং ইইউ-সহ অন্যান্য দেশগুলোকেও এ ধরণের নিষেধাজ্ঞা দেয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতের বিশাল বৈষম্য এবং দুর্নীতি কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে সামনে এসেছে। রাজনৈতিকভাবে এলিট বা ক্ষমতাশালীদের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য কর্মীদের চাপের মুখে রাখা হয়েছে এমন অভিযোগ যাওয়া গেছে বলে জানাচ্ছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
সরকারের দ্বৈত-নীতি কিংবা সরকার যেভাবে সংকট মোকাবেলা করছে, তার সমালোচনাকারীদের আটক ও গ্রেফতারে ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করা হয় বিবৃতিতে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, কারাগারে কোভিড-১৯-এর ঝুঁকি কমাতে কম ঝুঁকিপূর্ণ ও বিচারের অপেক্ষায় থাকা কয়েদীদের মুক্তি দিতে জাতিসংঘের আহ্বান এড়িয়ে সাংবাদিক আবুল আসাদ, রুহুল আমিন গাজী এবং শফিকুল ইসলাম কাজল, কার্টুনিস্ট আহমেদ কিশোর এবং লেখক মুশতাক আহমেদকে এখনো আটকে রাখা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, সুশীল সমাজ, দাতা সংস্থা এবং জাতিসংঘের আপত্তি সত্ত্বেও সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে কোন ধরনের পূর্ব কারিগরি এবং সুরক্ষা মূল্যায়ন ছাড়াই ভাসান চরের মতো দ্বীপে স্থানান্তর করেছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করেছে যে, এদের মধ্যে অন্তত কিছু মানুষকে জোর পূর্বক এবং আগে থেকে জানিয়ে মতামত নেয়া ছাড়াই স্থানান্তর করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার বার বারই এটা প্রমাণ করেছে যে তারা মানবাধিকার রক্ষায় অঙ্গীকারাবদ্ধ নয়। সংস্থাগুলো বলছে, নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রতিষ্ঠানসমূহের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা এবং মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি স্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করা উচিত।