এক সময় সাগরের পানিতে ডুবে থাকা জলাশয় আর লবণের মাঠে এখন বিনিয়োগ হচ্ছে ১ লাখ কোটি টাকা। সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কাকে এড়াতে এ অঞ্চলের ট্রানশিপমেন্ট বন্দর হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে দেশের একমাত্র গভীর সমুদ্রবন্দর – মাতারবাড়ি।
কমল দে
এখানে গড়ে উঠছে জাপানি বিনিয়োগে বৃহৎ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও। জাপানের বিগ-বি ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে আগামী দিনে বাংলাদেশের অর্থনীতির গেম চেঞ্জার হয়ে উঠছে যেন মহেশখালীর এই বন্দরটি।
মাত্র বছর ব্যবধানে পুরোপরি পাল্টে যাওয়া একটি জনপদ মহেশখালীর মাতারবাড়ি। অবশ্য পাল্টে যাওয়ার চিত্রে পাশের ধলঘাট নামে আরও একটি ইউনিয়ন আছে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত যে অঞ্চলে সাগরের পানিতে ডুবে থাকা জলাশয়ের পাশাপাশি ছিল বিস্তীর্ণ লবণের মাঠ।
২০২১ সাল থেকে সেখানে শুরু হয় সাগরের মাটি দিয়ে নতুন ভূমি তৈরির কাজ। আর চলতি বছর এসে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজও শেষ পর্যায়ে। এরইমধ্যে এখানে ভিড়েছে কয়লাবাহী বিশাল আকৃতির জাহাজও।
মূলত জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজে আবের প্রস্তাবিত বিগ-বি ইনিশিয়েটিভই পাল্টে দিয়েছে মাতারবাড়ির চিত্র। জাপানের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করেই বাস্তবায়ন হচ্ছে বে-অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোর বেল্ট।
এ প্রসঙ্গে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের সাবেক প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ জাফর আলম বলেন, ‘‘মাতারবাড়ি হবে বাংলাদেশের ইকোনমিক গেম চেঞ্জার। এটি বাংলাদেশকে ‘সোনার বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।’’
গত তিন বছরে মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং বন্দরের জন্য অন্তত ৫৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বিনিয়োগের পরিমাণ ছাড়িয়ে যাবে ১ লাখ কোটি টাকা। এখানেই আমদানি করা এলএনজি রাখার টার্মিনাল তৈরি করা হবে। আর সেই সঙ্গে পুরো অঞ্চল হয়ে উঠছে এশিয়ার বিজনেস হাব।
সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, যে উপকূলীয় এলাকা একসময় অবহেলিত ছিল, যেখানে সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাস হতো, সেই এলাকাই এখন বাংলাদেশের অর্থনীতির নেতৃত্ব দেবে।
এ বন্দর ব্যবহার করে নেপাল, ভুটানসহ ভারতের সেভেন সিস্টার্সখ্যাত রাজ্যগুলো উপকৃত হবে উল্লেখ করে মহেশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সেই সঙ্গে আমরাও আয় করব বৈদেশিক মুদ্রা।’
তবে এরই মধ্যে এ বন্দর বেশ কয়েকটি রেকর্ড গড়েছে। সাড়ে ১৪ মিটার গভীরতার জাহাজ এনে গভীর সমুদ্রবন্দরের স্বীকৃতিও অর্জন করেছে। এখন চলছে রাজস্ব বাড়ানোর পরিকল্পনা। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘ইউরোপ-আমেরিকা থেকে আসা জাহাজ সরাসরি আমাদের মাতারবাড়িতে ভিড়তে পারবে। ফলে অন্যান্য বন্দরও এটিকে ট্রানশিপমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে।’
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার ব্যারিস্টার বদরুজ্জামান মুন্সি বলেন, ‘মাতারবাড়ির মাধ্যমে যদি বড় বড় জাহাজ পণ্য নিয়ে দেশে আসা শুরু করে, সেক্ষেত্রে সরকারের রাজস্ব যেমন বাড়বে, তেমনি অনেক প্রতিষ্ঠান লাভবানও হবে।’
উল্লেখ্য, চলতি বছরই ৩৫ হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে যাওয়ার কথা রয়েছে। আর ১৭ হাজার কোটি টাকার এ গভীর সমুদ্রবন্দর পুরোপুরি অপারেশনে যাবে ২০২৬ সালে।