Site icon The Bangladesh Chronicle

বাংলাদেশকে এভারেস্ট চূড়ায় তুললেন যুবারা

বাংলাদেশকে এভারেস্ট চূড়ায় তুললেন যুবারা

বেজে উঠল রেফারির শেষ বাঁশি। সবুজ গালিচায় চুপ মিরাজুল ইসলাম-পিয়াস আহমেদ নোভারা! একটু পর ডাগআউট থেকে এলো দুটি লাল-সবুজের পতাকা। সঙ্গে পুরো দল চলে যায় ললিতপুরের আনফা কমপ্লেক্সের সবুজ গালিচায়। ঘাসের ওপর পতাকা দুটি বিছিয়ে তার পেছনে সারিবদ্ধভাবে বসে যায় টিম বাংলাদেশ।

সামনে থাকা অধিনায়ক আশরাফুল হক আসিফ মেলে ধরেন পতাকা। সঙ্গে গর্জে ওঠেন সবাই। মেতে ওঠেন বুনো উল্লাসে। সেই উচ্ছ্বাস আর উদযাপনে নতুন ইতিহাস বাংলাদেশের ফুটবলে। সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম শিরোপা জিতে বাংলাদেশ যেন এভারেস্ট চূড়ায়। গতকাল ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে নতুন বাংলাদেশে ফুটবলে প্রথম ট্রফি এনে দিয়েছেন কুড়ির যুবারা। চোখ ধাঁধানো ফ্রি কিকের সঙ্গে মিরাজুল ইসলামের জোড়া আর রাব্বি হোসেন রাহুল ও পিয়াস আহমেদ নোভার নিখুঁত ফিনিশিংয়ের দৃশ্যটা অনেক দিন হৃদয়ে ধারণ করার মতো। শুধু চ্যাম্পিয়ন ট্রফিই নয়, গ্রুপ পর্বে নেপালের কাছে হারের মধুর প্রতিশোধও নিল একেএম মারুফুল হকের দল।

শুধু মাঠের পারফরম্যান্সই নয়, ফুটবলে সাফল্য পেতে হলে নাকি ভাগ্যও লাগে। নেপাল যেন বাংলাদেশের ফুটবলের সেই ভাগ্যের রচয়িতা। ১৯৯৯ সাফ গেমস কিংবা ২০২২ সালে নারী সাফে সাবিনা খাতুন-কৃষ্ণাদের ইতিহাস; সবকিছুই লেখা হয়েছে হিমালয়ের দেশে। দুই বছর যেতে না যেতেই সেই নেপালে উঠেছে লাল-সবুজের জয়োধ্বনি। যে ধ্বনিতে সুর বেঁধে দিয়েছেন বাফুফে এলিট একাডেমির আবিষ্কার ফরোয়ার্ড মিরাজুল ইসলাম। ললিতপুরের ভরা গ্যালারিতে যখন ‘নেপাল, নেপাল’ স্লোগানে প্রকম্পিত, ঠিক তখনই পাদপ্রদীপের আলোয় এ ফরোয়ার্ড।

প্রথমার্ধের যোগ করা সময় বক্সের সামান্য বাইরে থেকে তাঁর ডান পায়ের অনিন্দ্য সুন্দর বুলেট গতির ফ্রি কিক দূরের পোস্টের কোনায় লেগে চলে যায় নেপালের জালে। একটু আগে গগনবিদারী আওয়াজে যে স্টেডিয়ামে কান পাতাই ছিল দায়, সেই আনফা কমপ্লেক্সে নেমে আসে নীরবতা।

স্বাগতিক দর্শকদের সেই নীরবতা বিরতির পর ক্ষোভেও রূপান্তরিত হয়েছিল। প্রথমার্ধে কিছুটা অচেনা যুবারা দ্বিতীয়ার্ধে সবাই যেন ফুটবলের এক একটি শিল্পী হয়ে ওঠেন। কোচ মারুফুল হকের বুদ্ধিদীপ্ত ট্যাকটিস আর পরিকল্পনার দারুণ বাস্তবায়নে শাকিল আহাদ-আসাদুল ইসলামদের পায়ে ওঠে শৈল্পিক ফুটবল। একসঙ্গে আক্রমণ আবার একসঙ্গে নিচে নেমে এসে প্রতিরোধ গড়ার অসাধারণ বোঝাপড়ায় ১৫ মিনিটের মধ্যে আরও দুই গোল আদায় করা বাংলাদেশের হাতের মুঠোয় চলে আসে ফাইনালটি। ভয়কে দূরে সরিয়ে সবাই ছিলেন আত্মবিশ্বাসী। ৫৫ মিনিটে আসাদুল ইসলামের বাঁ প্রান্ত থেকে নেওয়া ক্রসে আসাদুল মোল্লার হেড পাস থেকে শুধু মাথাটাই ছোঁয়ালেন মিরাজুল। বলে চলে যায় নেপালের জালে। ৭০ মিনিটে বক্সের মধ্যে সেই মিরাজুলের ছোট পাসে রাব্বী হোসেন রাহুলের লক্ষ্যভেদে ব্যবধান গিয়ে দাঁড়ায় ৩-০তে। দলের হার বুঝতে পেরে গ্যালারি থেকে বোতল নিক্ষেপ করতে থাকেন নেপালের দর্শকরা। ১০ মিনিট পর সামির তামাংগের গোলে ঘুরে দাঁড়ানোর উপলক্ষ্য পায় নেপাল। কিন্তু ম্যাচের যোগ করা ১০ মিনিটের সময়ের পঞ্চম মিনিটে পিয়াস আহমেদ নোভার গোলে নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের জয়।

samakal

Exit mobile version